সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৭ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ৩০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
কাদিয়ানিদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করুন: সম্মিলিত খতমে নবুওয়াত পরিষদ গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে মরক্কোতে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ দাওয়াত ও তাবলিগের নীরব বিপ্লব ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলো যুক্তরাজ্য-কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া গ্রেপ্তার এড়াতে বাস পাল্টায়, গন্ধে ১৪ কেজি গাঁজাসহ ধরা খেল তরুণী দুপুরের মধ্যে সাত অঞ্চলে ঝড়ের আভাস সত্তর হাজার কালেমা পড়লে কি মাগফিরাত পাওয়া যায়? ঢাবির হল রিডিংরুমে বসছে এসি, সংস্কার হবে ক্যান্টিনও: ডাকসু জিএস ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা মাদরাসা ছাত্রী, অভিযুক্ত জামায়াতকর্মী গ্রেপ্তার. ইসলামকে একটি বার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ শায়খে চরমোনাইয়ের

হজ ও ওমরায় আমরা সাধারণ যেসব ভুল করি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতী মনসুরুল হক । । 

হজ ইসলামের একটি স্তম্ভ। বিত্তবানদের উপরে জীবনে একবার ফরজ। দেরি না করা ওয়াজিব। আর স্বাস্থ্য ও অর্থ থাকলে প্রতি চার বছরে একবার বাইতুল্লাহ শরীফে নফল হজ বা ওমরার মাধ্যমে হাজির হওয়া বাইতুল্লাহর হক। এই হক আদায়ে আমাদের জানা-শোনা না থাকার ফলে বেশকিছু ভুল হয়ে থাকে। আসুন, সেগুলো জানি-

১.‘হজে বদল’-এ যারা যায়, পাঠানেওয়ালা যদি তামাত্তু বা যে কোনো হজের অনুমতি দেয় বা সে অনুমতি নিয়ে নেয় তাহলে ফতোয়া হলো যদিও ইফরাদ করা উত্তম। তবে তামাত্তু করা জায়েজ। হাকীমুল উম্মত থানবী রহ., মুফতী শফী রহ. ও মাওলানা যাফর আহমদ উসমানী রহ. এ মত প্রকাশ করেছেন। এছাড়া বর্তমান যুগের কোনো আলেমের এ ব্যাপারে কোনো মতানৈক্য নেই। সূত্র: জাওয়াহিরুল ফিকহ (পৃ. ৫০৮-৫১৬) ইমদাদুল আহকাম (২য় খণ্ড, পৃ.১৮৬)

২.সাধারণত মাসয়ালার কিতাবগুলোতে লেখা আছে, মক্কা ভিন্ন শহর আর মিনা ভিন্ন শহর। অতএব দুই শহর মিলিয়ে যদি কেউ পনেরো দিন বা তার বেশি থাকার নিয়ত করে তাহলে সে মুকিম হবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মুকিম বা মুসাফির হওয়ার মাসয়ালা পরিস্থিতির সাথে সম্পৃক্ত। পরিস্থিতি পাল্টে গেলে মাসয়ালা পাল্টে যাবে। আর বর্তমান পরিস্থিতি হলো মক্কা ও মিনা এখন দুই শহর নেই, আবাদী মিলে এখন এক হয়ে গেছে।

এমনকি মুজদালিফা-আরাফা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে গেছে। অপরদিকে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, মিনার সমস্ত ইন্তেজামী কাজ মক্কার সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং আবাদী মিলে যাওয়া ও সরকার কর্তৃক ইন্তেজামী বিষয় এক করে নেয়ায় মিনা মক্কা শহরের মধ্যে দাখিল হয়ে যাবে। কমপক্ষে মিনাকে মক্কা শহরের শহরতলী বলা হবে।

অতএব কিতাবের উল্লিখিত মাসয়ালা পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ার কারণে কার্যকর থকবে না। সুতরাং এখন যদি মক্কা-মিনা মিলিয়ে কেউ পনেরো দিন বা তার বেশি থাকার নিয়ত করে তাহলে সে মুকীম গণ্য হবে। মাসয়ালাটি ভালো করে বুঝে রাখা দরকার। কারণ অনেক আলেমও পরিস্থিতি না জানার কারণে পুরনো কিতাবের মাসয়ালা বলে থাকেন।

এটার একটা নমুনা আমদের ঢাকাতেই আছে। যেমন, এক সময় সফরের উদ্দেশ্যে কেউ ঢাকা ছেড়ে বিমানবন্দরে গেলে তাকে মুসাফির বলা হতো। কারণ, তখন ঢাকা আর বিমানবন্দরের মাঝে বেশ ফাঁকা ছিল; কোনো আবাদী ছিল না। আর সরকারও তখন এয়ারপোর্ট-উত্তরা এলাকাকে শহরের মধ্যে শামিল করে নাই।

তখন উলামাদের ফাতওয়া ছিল এয়ারপোর্ট গেলে সে মুসাফির গণ্য হবে। কিন্তু পরবর্তীতে এই ফাঁকাটা বসতিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় এবং সরকার টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত শহরের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করায় এখন ফাতওয়া হচ্ছে কেউ বিদেশ ভ্রমনের জন্য এয়ারপোর্ট গেলে তিনি মুসাফির হবেন না; বরং মুকীম থাকবেন যতক্ষণ না বিমান উপরে উঠে। এখানে যে মাসয়ালা, মক্কা-মিনায়ও সেই মাসয়ালা।

কাজেই যেহেতু তারা মুমিম হলো তাই তাদের জন্য আরো কয়েকটা মাসয়ালা মানতে হবে। ১. তাদের এখন মক্কা-মিনা-মুযদালিফা-আরাফায় চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজ চার রাকাতই পড়তে হবে। (মুসলিম ৩য় খণ্ড হাদীস নং ৬৮৭)

৩. মিনায় ১২ বা ১৩ তারিখ পর্যন্ত থাকতে হয়। এর মধ্যে যদি কোনো দিন শুক্রবার হয় তাহলে মিনাতে জুমা পড়তে হবে। কারণ, এটা শহর বা শহরতলী। (তাতারখানিয়া ২য় খণ্ড পৃ.৫৫৩, মাসআলা নং-৩২৭৬)

৪. নিসাবের মালিক হওয়ার কারণে দেশে যে প্রত্যেক বছর একটা কুরবানী করতো, মুমিম হয়ে যাওয়ায় ওই কুরবানি বহাল থাকবে। চাইলে দেশেও করতে পারে, চাইলে সেখানেও করতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, হজের কুরবানী ভিন্ন। যা তামাত্তু বা কিরান করার কারণে হারামের সীমানায় ১২ জিলহজের মধ্যে করতে হয়। (ফাতাওয়ায়ে শামী, ২য় খণ্ড পৃ.৫১৫)

নারীদের কিছু ভুল

১. চেহারা খোলা রাখা। মাসয়ালা হলো চেহারা দেখা যাবে না; তবে বোরকার নেকাব চেহারার সাথে লেগে থাকবে না। এর জন্য এমন কিছু ব্যবহার করতে হবে যাতে করে নেকাব চেহারার সাথে না লেগে না থাকে। (ফাতাওয়ায়ে শামী ২য় খণ্ড পৃ.৫২৭)

২. মহিলাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত হারামের জামাতে ও জুমায় যাওয়া মাকরুহে তাহরিমি। অথচ দেখা যায়, মহিলারা পাঁচ ওয়াক্ত জামাতে যাচ্ছে। যার কারণে ভিড় বেশি হচ্ছে। তারাও গুনাহগার হচ্ছে, পুরুষরাও গুনাহগার হচ্ছে। আর হাজারো পুরুষের ধাক্কা খাচ্ছে, ধাক্কা দিচ্ছে। পুরুষের পাশে দাঁড়ানোর কারণে পুরুষের নামাজও নষ্ট হচ্ছে।

তারা যাচ্ছে ফজিলতের জন্য; অথচ রাসূল সা. বলেছেন, কোনো মহিলা হজ বা উমরার জন্য মক্কায় এসে ঘরে নামাজ পড়লে এক লাখের চেয়ে বেশি সওয়াব পাবে (মুসনাদে আহমদ ৬ষ্ঠ খন্ডঃ পৃ.২৯৭, ৩০১। হাদীস নং-২৬৫৯৮, ২৬৬২৬)। তেমনিভাবে মদিনার মসজিদে নববী থেকে তার ঘরের নামাযের ফযিলত বেশী ।

অতএব মহিলারা জুমায়ও যাবে না, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজেও যাবে না। তবে তাওয়াফ করতে গিয়ে কোনো নামাজের ওয়াক্ত হয়ে গেল সে সময় মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে নামাজ পড়ে নিতে পারবে। চাই তাওয়াফ হজের হোক বা উমরার, বা অন্য কোনো তাওয়াফ।

আরও কয়েকটি মারাত্মক ভুল

১. এক ধরণের লোক আছে, যারা সারাদিন মোবাইল বা ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে। অথচ জানদারের ছবি তোলা হারাম (বুখারী শরীফ ৪র্থ খণ্ড পৃ.৭১, হাদীস নং ৫৯৫০)। তারা হজে গিয়েও হারাম শরীফের মধ্যে হারাম কাজ করছে। হজের সফরে হারাম কাজ করলে হজে মাবরূর নসীব হয় না।

২. অনেক পুরুষ ইহরাম খোলার সময় শরীয়ত যেখানে শুধু মাথা মুণ্ডানোর কথা বলেছে সেখানে তারা দাড়িও মুণ্ডায়। শায়খ হযরত মাওলানা শাহ আবরারুল হক রহ. বলতেন,দেশে অন্যায় কাজ করলে, আল্লাহর ঘরে গিয়েও তা করলে; এভাবে তোমার কয়েক লাখ টাকার হজ ওই জায়গায়ই দাফন করে রেখে আসলে।

হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, যখন কেউ দাঁড়ি-কাটা অবস্থায় ‘আস্-সালাতু ওয়াস্-সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ!’ বলে তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দেন না। কারণ সে প্রতিদিন রাসূলের কলিজায় খুর চালায়। তাই এমন কেউ সালাম দিলে তিনি চেহারা মোবারক আরেক দিকে ফিরিয়ে নেন। এমন অবস্থায় একশ বার হজ করলেও তার হজে মাবরূর নসীব হবে না।

৩. ‘তালবিয়া’ ইনফিরাদী আমল। সবাই যার যার তালবিয়া পড়বে। দেখা যায়, অনেকে লিডারের সাথে তাল মিলিয়ে তালবিয়া পড়তে থাকে। অথচ এর কোনো প্রমাণ নাই।

৪. আরাফা ও মুজদালিফার মাঝখানে ৫ কিলোমিটার প্রশস্থ ময়দান আছে, যেখানে অনেক টয়লেট ও গাছপালা আছে এ সব থেকে অনেকেই এটাকে মুজদালিফা মনে করে এখানে অবস্থান করে, অথচ এটা আরাফাও নয় এবং মুজদালিফাও নয়, এটা ভিন্ন একটা ময়দান। এখানে হজের কোন কাজ নেই। এখানে মাগরিব ও ইশা একত্রে পড়া জায়েজ নেই, রাত্রে অবস্থান করাও জায়েজ নাই। ফজরের পরে এখানে উকূফে করলে উকূফে মুজদালিফাও আদায় হবে না। অথচ যারা পায়দল আরাফা থেকে মুজদালিফায় যায় তাদের অনেকে এ ভুলটা করে। তাদের উপর ‘দম’ ওয়াজিব হয়ে যায়। সেটাও তারা না জানার কারণে আদায় করে না।

৫. ব্যাংকের মাধ্যমে কুরবানি না করানো উচিত। কারণ এতে কখনো ১০ তারিখে বড় শয়তানকে কংকর মারার আগে কুরবানি হয়ে যায়। আবার কখনো কুরবানি সম্পন্ন হওয়ার আগে মাথা মুণ্ডানো হয়ে যায়। আর উভয় ভুলের কারণে তামাত্তু ও কিরানকারীর উপর দম ওয়াজিব হয়ে যায়।

কারণ তাদের জন্য ১০ তারিখে এই তিনটি কাজে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরি-

১. বড় শয়তানকে কংকর মারা, ২. কুরবানি করা ৩. মাথা মুণ্ডানো।

এজন্য নিজে বা বিশ্বস্ত লোক পাঠিয়ে কুরবানির ব্যবস্থা করা জরুরী। কংকর মারার পর কুরবানি করবে, কুরবানি সম্পন্ন হওয়ার পর মাথা মুণ্ডাবে। মাথা মুন্ডানোর দ্বারা বা চুল ছোট করার দ্বারা হালাল হয়ে যাবে, তখন ইহরাম অবস্থায় যে সব কাজ নিষিদ্ধ ছিল তা এখন জায়েজ হয়ে যাবে। তবে মনে রাখতে হবে ইহরামের চাদর খুললে ইহরাম খোলা হয় না বা হালাল হওয়া যায় না।

লেখক: শাইখুল হাদিস, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মোহাম্মদপুর, ঢাকা ও খলিফা, মুহিউস সুন্নাহ শাহ আবরারুল হক রহ.। 

আরএম/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ