রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
সিলেট মহানগরীর ২০নং ওয়ার্ড যুব জমিয়তের আহবায়ক কমিটি গঠন সম্পন্ন পেশীশক্তি ও কালো টাকার দৌরাত্ম বন্ধে পিআর পদ্ধতির প্রয়োজন- আহমদ আবদুল কাইয়ূম জেদ্দায় হজ সম্মেলন ও প্রদর্শনী নভেম্বরে আজ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে যুক্তরাজ্য খেলাফত মজলিস বানিয়াচং উপজেলা শাখার ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলন ‘নীলনদের পানি যেমন নীল নয়, তেমনি জামায়াতেও ইসলাম নেই’ কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল, সম্পাদক মাজহারুল ‘ইসলামি শক্তির মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করে এমন বক্তব্য থেকে বিরত থাকুন’ গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপির একীভূত হওয়ার আলোচনা, নেতৃত্ব নিয়ে জটিলতা পিআর সিস্টেমের নির্বাচন নিরাপদ নির্বাচন, আদর্শের নির্বাচন: শায়খে চরমোনাই

প্রিয় বন্ধু, চলে গেলে শোকে ভাসিয়ে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী
শিশু সাহিত্যিক

এক. আজ একটি শোকের দিন।
আজ অকৃত্রিম এক বন্ধু হারানোর দিন।

আজ চোখের আগে মনের―কেঁদে-কেঁদে সারা হওয়ার দিন।
ভাবি নি এতো তাড়াতাড়ি চলে যাবে―বন্ধু আহলুল্লাহ ওয়াসেল।

ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

দুই.
মাদরাসায় গিয়েই শুনেছি, লাবিব বাসায় গেছে। বাবা খুব অসুস্থ। মনটা হাহাকার করে উঠলো।

জানতে চাইলাম―কী হয়েছে? শ্বাসকষ্ট। তাঁর ছোট্টবেলার রোগ। তখন অনেক ভুগিয়েছে। পরে আর কোনো কষ্ট ছিলো না। তখন আমরা কামরাঙিরচরে পড়তাম। আজ এই শুনলাম―আবার সেই শ্বাসকষ্ট ফিরে এসেছে। কিন্তু এতোটা প্রচণ্ডতায়? ...

তিন.
বন্ধু আহলুল্লাহ ওয়াসেলের অসুস্থতার খবরে মনটা একদম ভালো ছিলো না। মাত্র সাতদিন আগে দেখা। এসেছিলো মাদরাসায়।

২৪-০৯-১৮ এর শান্ত সকালে। তার সাথে বসলে কথা হতো অনেক। কথায় কথা বাড়তো। ডালপালা ছড়াতো। ব্যক্তিগত প্রসঙ্গও জায়গা করে নিতো। যে কথাই উঠুক, ওয়াসেল ছিলো―খুব মনোযোগী শ্রোতা এবং কল্যাণকামী উপদেষ্টা।

পরিস্থিতি যতো কঠিন ওয়াসেল ততো সহজ-শান্ত-প্রাজ্ঞ। এই অমূল্য গুণ দিয়েই ওয়াসেল উঠে গেছে উপরের দিকে, একের পর এক সিঁড়ি।

লেখক। সাহিত্যিক। মুহাদ্দিস। খতীব। মুহতামিম। সংগঠক। রাজনীতিক। সংবাদ বিশ্লেষক। বিশ্ব পরিক্রমার বোদ্ধা ভাষ্যকার। ...

এইগুলো সব শিরোনাম! ভেতরে লুকিয়ে আছে সাফল্যের সোনালি-রুপোলি ছবি!

চার.
ওই সকালে আমার বেশ দেরি হয়েছিলো পৌঁছতে। ওয়াসেল আগে দুই-দুইবার তারিখ দিয়েও জরুরি কাজে আটকে পড়ে―আসতে পারে নি। তাই এইবার ফোন না-করেই এসে দেখে―আমি নেই। অন্যরাও কেউ নেই।

পাঠাগারে একা একা বসে তন্দ্রাচ্ছন্নতায় কেটে গেছে ওর অনেক বেলা। আটটার একটু আগে এসে দেখি―সীমাহীন এই গুণী বন্ধুটি বসে বসে ঝিমুচ্ছে। চোখে মুখে লেগে আছে একটু ক্লান্তির ছাপ। ঠোঁটে লেগে আছে মিষ্টি হাসির জান্নাতি অবয়ব। গভীর দৃষ্টিতে সেদিন নিরীক্ষণ করেছি বন্ধুটিকে! .....

পাঁচ.
কাছে এলাম। মুখভরে সালাম দিলাম। হাতভরে মুসাফা করলাম। যদি জানতাম―এই আমার, তার সাথে শেষ দেখা, তাহলে নিশ্চিত বুকভরে মুআনাকা করতাম!

আগে ওয়াসেল কতোবার এসেছে। কিন্তু সেদিনের ‘আসা’র সাথে আগের কোনো ‘আসা’ মেলাতে পারি নি! পারিই নি! কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই, তবু এমনই মনে হয়েছে।

দৃষ্টি ছিলো বেশ অবনত।
ভাব ছিলো সুশান্ত।
মন ছিলো প্রসন্ন।
কথা ছিলো সংযত।
মন্তব্য ছিলো প্রজ্ঞাস্নাত।

রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তরে ও ছিলো একেবারেই নীরব।
আমি খুব লক্ষ্য করেছি সেদিনের এই অন্যরকমতা।

সেদিন একটি গুরুত্বপূর্ণ দরসেও ছাত্রদের সামনে হাজির হই নি। হতে পারি নি। ওয়াসেল আমাকে যেনো চুম্বকের মতো ধরে রেখেছে! কথার পিঠে কথা এসেছে। ওয়াসেল এক সময় যাই-যাই করছে, কিন্তু যাচ্ছে না! বসেই আছে! অন্যরকম ওয়াসেলের এই অন্যরকমের আচরণ আমাকে মুগ্ধ করেছে! শংকিতও করেছে কি? ...

ছয়.
একসাথেই নাশতা করেছি আমরা। সঙ্গে ছিলেন মাওলানা সাখাওয়াত। দস্তরখানে সেদিন তাঁর পরিমিতিবোধ আমার চোখে পড়েছে। তাঁর পাতের দিকে বারবার তাকাচ্ছিলাম―কিছু লাগবে কি? না, খুব ধীরে ধীরে খাচ্ছে। আর প্রশান্ত ভঙ্গিতে কথা বলছে।

খাওয়ার পরে আরও অনেকক্ষণ বসলো। আমার তৃতীয় ঘণ্টাটা প্রায় শেষ। আমি চায়ের ব্যবস্থা করে দরসে চলে গেলাম! ফিরে এসে দেখি―ওয়াসেল চলে গেছে (আমাকে না-বলেই)!

সাত.
আজও ওয়াসেল ১১:৪৫ মিনিটে চলে গেছে আমাকে .. আমাদের না-বলেই!! আর কোনোদিন ওয়াসেল ফোন করে বলবে না―ইয়াহইয়া, আছো? আমি আসছি! থাকো! অনেক কথা আছে!

ওয়াসেল!
তোমাকে নিয়ে কিছুই বলা হয় নি! আরও অনেক কথা বাকি রয়ে গেলো! বলবো, অবশ্যই বলবো! ঋণ পরিশোধ করবো!

ওয়াসেল!
জান্নাতই তোমার ঠিকানা, চিরসবুজ জান্নাত! ওখানে কোনোদিন তোমার শ্বাসকষ্ট হবে না!

মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াসেলের ১ম জানাজা অনুষ্ঠিত; রাতে দাফন

-আরআর


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ