রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
যেসব দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে  ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলো যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া জাগো হে কওমি তারুণ‍্য! রাতেই ঢাকাসহ তিন অঞ্চলে ঝড়ের আভাস অর্থনীতির মূল লক্ষ্য হতে হবে উদ্বৃত্ত সৃষ্টি: বাণিজ্য উপদেষ্টা চবির আরবি বিভাগের নতুন সভাপতি অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিন তালুকদার ডেঙ্গুতে একদিনে ১২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৪০ সিরাতকে ধারণের মাধ্যমেই সত্যিকার পরিবর্তন সম্ভব: ধর্ম উপদেষ্টা সিরাতুন্নবী (সা.) সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতার লাইভ ড্র অনুষ্ঠান ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট

বিপর্যয়ের আশঙ্কা দূর করতে অরক্ষিত উপকূল নিয়ে ভাবতে হবে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন
কবি, কলামিস্ট ও সাংবাদিক

এবার বাংলা নববর্ষ শুরু হতেই প্রকৃতির আচরণে বিরূপভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়, নিন্মচাপ, তাপদাহ, বৃষ্টি ও বজ্রপাতের মাত্রা বেশি বলেই মনে হচ্ছে।

বৃষ্টিপাতের কথাই ধরা যাক। গত ৩৫ বছরের মধ্যে এবার এপ্রিলে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪ হাজার ৫৩ মিলিমিটার। অথচ ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে প্রায় ১০ হাজার মিলিমিটার।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝড়, ঘূর্ণিঝড় হয়েছে অন্যান্য বারের চেয়ে বেশি এবং বাড়িঘর, ফসলাদি ও বৃক্ষরাজির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। গত বছরের তুলনায় বজ্রপাতের পরিমাণও বেশি এবং এতে বেশ কিছু মানুষ নিহত হয়েছে।

আবহাওয়া বিভাগের মতে, মে-জুন মাসে ঝড়-বৃষ্টি-বজ্রপাতের সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। এ সময় সাগরে কয়েকটি নিন্মচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা ঘনিভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কারণ হতে পারে। সাগরতলের পানির তাপমাত্রা ও উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতেই বাড়ছে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা।

প্রকৃতির বিরূপ আচরণ সব সময়ই আশঙ্কার কারণ। এবার আশঙ্কা একটু বেশি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। প্রকৃতির বিরূপ আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার কোনো উপায় নেই। এক্ষেত্রে প্রয়োজন শুধু সচেতনতা এবং আত্মরক্ষামূলক পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও ব্যবস্থা। এ দু’য়ের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ও পরিমাণ কমানো সম্ভব হতে পারে।

স্মরণ রাখা দরকার, ইতোপূর্বে মোরা, রোয়ানু, সিডর, আইলা, নার্গিস ইত্যাদির মতো ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতবিক্ষত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূলীয় এলাকা। ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের কথা অনেকের মনে থাকার কথা। ওই ঘূর্ণিঝড়ে জানমালের মারাত্মক ক্ষতি হয়।

ঘূর্ণিঝড়ের পর দুর্যোগপ্রবণ সাগর-উপকূল, চর ও দ্বীপাঞ্চলের জানমাল সুরক্ষায় আগ্রাধিকার পরিকল্পনার আওতায় অবকাঠামো উন্নয়নের একটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কমিটি এ ব্যাপারে দীর্ঘ প্রতিবেদনসহ একটি সুপারিশমালা পেশ করে। কিন্তু গত ২৭ বছরে এসব সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ।

ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে আত্মরক্ষার সবচেয়ে বড় উপায় হলো টেকসহ বেড়িবাঁধ ও বৃক্ষবেষ্টনী। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য, উপকূলীয় এলাকায় প্রতিরক্ষা দেয়াল বলে অভিহিত ৮৭৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। অনেক জায়গায় বেড়িবাঁধের চিহ্ন নেই।

জানা যায়, বেড়িবাঁধের অন্তত ৩৮ শতাংশের তেমন কোনো অস্তিত্ব নেই। ৪৪ শতাংশ বেড়িবাঁধ ভাঙ্গাচোরা ও নড়বড়ে। প্রতিবছর বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে বিপুল অংকের অর্থ ব্যয় করা হলেও বাঁধ স্থায়ী ও টেকসই করে নির্মাণ সম্ভব হয়নি। কাজের মহড়া হয়েছে মাত্র। অর্থের বেশির ভাগই লোপাট হয়ে গেছে!

শুধু কি তাই? উপকূল জুড়ে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়, সে উদ্যোগও কার্যকর হয়নি। যেসব এলাকায় বৃক্ষবেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছিল সেসব এলাকার অধিকাংশেই সেই বৃক্ষবেষ্টনী উধাও হয়ে গেছে। ভূমিখেকো ও বৃক্ষঘাতকরা তা সাবাড় করে দিয়েছে। জানমাল রক্ষায় বহুমুখী সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণের অবস্থাও তথৈবচ। যা নির্মিত নির্মিত হয়েছে তাও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অব্যবহারযোগ্য হয়ে আছে।

উপকূলীয় ভূভাগ রক্ষায় ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তার যে ধরনের উদ্যোগ, পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা নেয়ার কথা, সরকারকে তা থেকে দূরে অবস্থান করলে চলবে না। স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং বৃক্ষবেষ্টনী গড়ে তোলার অতি জরুরি কাজটি সম্পন্ন করতে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে।

সবশেষে বলছি, অরক্ষিত উপকূল মানে অরক্ষিত দেশ। কাজেই উপকূল সুরক্ষায় সরকারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে বিলম্ব ও দীর্ঘসূত্রতা মানবিক বিপর্যয় ও সম্পদক্ষতিই বাড়াবে।

soyedfaizul@gmail.com
০৩ মে ২০১৮


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ