রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
যেসব দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে  ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলো যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া জাগো হে কওমি তারুণ‍্য! রাতেই ঢাকাসহ তিন অঞ্চলে ঝড়ের আভাস অর্থনীতির মূল লক্ষ্য হতে হবে উদ্বৃত্ত সৃষ্টি: বাণিজ্য উপদেষ্টা চবির আরবি বিভাগের নতুন সভাপতি অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিন তালুকদার ডেঙ্গুতে একদিনে ১২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৪০ সিরাতকে ধারণের মাধ্যমেই সত্যিকার পরিবর্তন সম্ভব: ধর্ম উপদেষ্টা সিরাতুন্নবী (সা.) সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতার লাইভ ড্র অনুষ্ঠান ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পরিস্থিতি শক্তহাতে মোকাবেলা করতে হবে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন
কবি, কলামিস্ট ও সাংবাদিক

দেশবাসীর দৃষ্টি এখন গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিকে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৫ মে এ দুই সিটি কর্পোরেশনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গাজীপুরে সাতজন মেয়র ও ৩৪০ জন নারী ও সাধারণ কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর খুলনা সিটিতে পাঁচজন মেয়র ও ১৮৬ জন নারী ও সাধারণ কাউন্সিলর রয়েছেন।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর পর্যালোচনায় বলা যায়, আসন্ন গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বি পক্ষগুলোর মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন শঙ্কা দৃশ্যমান হচ্ছে। বিরোধী পক্ষের শঙ্কা নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না তা নিয়ে। আর ক্ষমতাসীন বা সরকারি দলের শঙ্কা গৃহবিবাদ নিয়ে।

বিশেষ করে দুই সিটির নির্বাচন নিয়ে বিরোধী শিবিরে শঙ্কা আর উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। তারা বলছেন, ভোট সুষ্ঠু হবে কি না সন্দেহ রয়েছে। গাজীপুর সিটির বিএনপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরাও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বর্তমান মেয়র এম এ মান্নান ও সাবেক এমপি হাসান উদ্দিন সরকার সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামান মনি বলেন, ভোট সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে আমরা সন্দিহান। কেননা বিগত সময়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচনে সহিংসতা ও কেন্দ্র দখল এবং জাল ভোট প্রদানের ঘটনা ঘটেছে। আমরা আশা করব খুলনা সিটির ভোটে এ ধরনের কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না।

তবে অতীতের বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন, বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের স্মৃতি নিয়ে মানুষ প্রত্যাশা করছে, এ দুটি নির্বাচনও সুষ্ঠু, সুন্দর, নির্বিঘœ ও পরিচ্ছন্ন হবে।

কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশ, একাধিক মাধ্যমে জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে। এর মধ্যে ভোট কেনাবেচা ও প্রচারণায় ব্যবহৃত হওয়া কালোটাকার জোগান দিতে ব্যাপক চাঁদাবাজি, পেশিশক্তি ও অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার, বহিরাগতদের অপতৎপরতা এবং ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে নাশকতার চেষ্টা ইত্যাদি প্রধান।

এছাড়া রাজনৈতিক, জাতীয় ও শিল্প ইস্যুতে এ এলাকায় গড়ে উঠতে পারে বড় ধরনের আন্দোলন এবং এ সুযোগে ঘটতে পারে নাশকতা- এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করেছেন তারা।

বলার অপেক্ষা রাখে না, গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা যেসব বিষয় সামনে নিয়ে এসেছেন, এর প্রতিটিই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অন্তরায়। নির্বাচন কমিশনের উচিত, এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে নির্বাচন ভ-ুল বা এ নিয়ে কোনোরকম বিতর্ক সৃষ্টির অবকাশ না থাকে।

এদিকে গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনা সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। তবে নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হবে।

গত বৃহস্পতিবার গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও কয়েকদিন ধরে বিএনপির পক্ষ থেকে এ দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করার দাবি জানানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, ওই সভায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। তবে তাদের আশঙ্কা, এখন পরিস্থিতি ভালো থাকলেও ভোটের সময়ে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তাদের কেউ কেউ। এমন আশঙ্কা থেকে ভোটের সময়ে ফেসবুকসহ সামাজিকমাধ্যমগুলো বন্ধের প্রস্তাব দেন তারা।

সামনে অতি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। স্থানীয় পর্যায়ের কোনো নির্বাচন নিয়ে যদি প্রশ্ন ওঠে, তাহলে এ কমিশনের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সংশয় সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক এবং এর ফল শুভ হবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নিঃসন্দেহে ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’ এবং এ নির্বাচনে জয়লাভের জন্য তারা মরিয়া হয়ে ওঠবে বলেই মনে হয়। এ পরিস্থিতিতে বেআইনি অস্ত্র, কালো টাকা, পেশিশক্তির ব্যবহার ইত্যাদিসহ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের আশঙ্কা থাকে। এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শক্তহাতে মোকাবেলা করতে হবে।

গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন, বিশেষ করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্যন্ত সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের তৎপরতা বৃদ্ধিসহ সরকারি ও বেসরকারি ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ভিজিল্যান্স ও অবজারভেশন টিম গঠন, প্রার্থীদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নির্বাচন মনিটরিং টিম গঠন, কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে দেশবাসীকে সুন্দর, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও পরিচ্ছন্ন নির্বাচন উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে কমিশন শতভাগ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করবে, এটাই প্রত্যাশা।

soyedfaizul@gmail.com


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ