শনিবার, ০৪ মে ২০২৪ ।। ২০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫


রমজান আত্মসমর্পণ ও মাগফিরাতের মাস

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি সৈয়দ নাছির উদ্দীন আহমদ।।

সিয়াম বা রোযা শারীরিক এবাদতের মধ্যে অত্যন্ত কষ্টকর একটি এবাদত। ঈমানের পর এটি ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। কুরআন,সুন্নাহ,ইজমা ও কিয়াস দ্বারা এর ফরজিয়ত প্রমাণিত।

মহান আল্লাহ পাক কুরআনে বলেন,হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর যাতে তোমরা খোদাভীরুতা অবলম্বন করতে পার। (সুরা বাকারা: ১৮৩)

রোযার আসল উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাকওয়া তথা আল্লাহ্‌ ভীতির স্বভাব গড়ে তোলা এবং উম্মত ও তাঁদের পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের মুত্তাকী বানানো। তবে তাকওয়া অর্জন করতে হলে ঈমানের পর যে শর্ত রয়েছে,তা হলো বিশুদ্ধ নেক আমল করা। তা হতে হবে খোদাপ্রদত্ত নীতিমালা এবং তাঁর প্রেরিত নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর আদর্শের আলোকে।

আর মুমিন বান্দাদের নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত সহ কুরবানী,জীবন মৃত্যু সবকিছু হতে হবে একমাত্র মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে। কারণ খোদাপ্রদত্ত যেকোন প্রকার বিধিবিধান পালন করার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর সাথে কখনো কাউকে শরীক করা যাবেনা।

ইসলামের ফরজ বিধানের অন্যতম এবাদত সিয়াম বা রামাজান মাসের রোযা। মহান আল্লাহ পাক স্পেশালিষ্ট মুমিন বান্দাদেরকে এই মহিমান্বিত মাসটি দান করেছেন। যেন এ মাসে তারা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভ করতে পারে। অর্জন করতে পারে মাগফিরাত ও মহাপুরস্কার।

তাই বরকতময় এ মাসে মুসলিম উম্মাহ পরম দয়ালু মহান আল্লাহর সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি লাভার্থে শারীরিক ও মানসিকভাবে তারা নিজেদেরকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর দরবারে আত্মসমর্পণ করে থাকেন। যার বাস্তবতা রোযার সংজ্ঞা থেকেই পরিলক্ষিত হয়। কারণ সিয়াম বা রোযা শারীরিক এবং মানসিক সকল চাহিদা পূরণ থেকে বিরত রাখে ।

রোযাদার নিয়তের সাথে সে সুবহে সাদেক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও সহবাস করা থেকে বিরত থাকে।যার সম্পর্ক থাকে শারীরিক ও মানসিকতার সাথে । ফলে এর মাধ্যমে রোযাদার আল্লাহর কাছে নিজেকে পুরোপুরিভাবে আত্মসমর্পণ করে বা সপে দেয়।

এজন্যই মহান আল্লাহ পাক বলছেন,রোযার প্রতিদান আমি নিজেই দিবো,কারণ রোযাদার আমার জন্যই রোযা রাখে। রামাজান মাসে নিজেকে আত্মসমর্পণের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর অনুগ্রহ লাভে তাকওয়া ভিত্তক জীবন গঠন ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের একান্ত প্রয়াস।

মহান আল্লাহর কাছে পূর্ণাঙ্গরূপে আত্মসমর্পণ করার ক্ষেত্রে করণীয় হলো,সকল অপরাধ হতে বিরত থেকে ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য ক্ষমা চেয়ে মাগফিরাত চাওয়া । এক্ষেত্রেও যে কাজটি করতে হবে তা হলো,তাওবাতুন নাসূহা।

মহান আল্লাহ পাক এরশাদ করেন,হে মুমিনগণ!তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবাতান নাসূহা তথা আন্তরিকভাবে খাঁটি তওবা কর।আশা করা যায়,তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে,যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। [সূরা তাহরীম-৮]

আয়াতে নাসূহা শব্দের অর্থ হল,খাঁটি, আন্তরিক, দৃঢ় তওবা। যার পর তাওবাকারী সে আর গুনাহ করেনা। এমন দৃঢ় ও ইখলাসপূর্ণ তওবার নাম হল তওবাতুন নাসূহা। এর জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে।

(১) গুনাহ হতে বিরত হওয়া। (২) অতীতে যে গুনাহ করা হয়েছে তার জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া। (৩) আর ভবিষ্যতে এ গুনাহ কখনো না করার দৃঢ় সংকল্প করা। তাছাড়া যদি কোন মানুষের হক আত্মসাৎ করা হয় তাহলে চতুর্থ আরেকটি শর্ত জুড়ে যাবে। তা হলো মালিককে বা তার ওয়ারিসকে হক আদায় করে দেয়া অথবা তার কাছে গিয়ে মাফ করিয়ে নেওয়া।

উপরোক্ত শর্তসমূহের ভিত্তিতে মুমিন বান্দা যদি সে তার পালনকর্তার দরবারে ক্ষমা চেয়ে নিজেকে স্বীয় রবের কাছে সপে দেয়,অবশ্যই সে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপযুক্ত বলে গণ্য হবে। এই সান্নিধ্য লাভের সুস্পষ্ট দিকর্নিদেশনা সংবলিত ও সত্যাসত্য যাচাইয়ের জন্যই তো আল্লাহ পাক রমজান মাসে মানব জাতির কল্যাণে আল-কুরআন নাজিল করেছেন।

লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, জামিআ' ফারুকিয়্যাহ সিলেট

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ