সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫ ।। ৩ কার্তিক ১৪৩২ ।। ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম :
ওমরায় গেলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ইসলামী আন্দোলন ক্ষমতায় গেলে এক টাকাও লুটপাট হবে না: শায়খে চরমোনাই কোরআন অবমাননার দায় স্বীকার সেই অপূর্ব পালের জামায়াত-ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা দলগুলোর কর্মসূচি ঘোষণা তুরস্কে স্কলারশিপ পেলেন ৫ শিক্ষার্থী, এমবিএম ফাউন্ডেশনের সংবর্ধনা পাকিস্তানের শীর্ষ আলেম মাওলানা ফজলুর রহমান সিলেটে আসছেন ১৭ নভেম্বর জামায়াতের নির্বাচনি সভা ভণ্ডুল করে দিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা মিথ্যা মামলায় দুই মাদরাসা শিক্ষককে হয়রানি, মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন চাঁদা না পেয়ে মসজিদের ইমামকে মারধর, স্ত্রীকে শ্লীলতাহানি ৫ দফা দাবিতে আন্দোলনরত দলসমূহের যৌথ সংবাদ সম্মেলন

শবে বরাতের ফজিলত ও সওয়াব

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: চলছে মাহে রমজানের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের মাস শাবান। এই শাবান মাসের অবিচ্ছেদ্য একটি মহিমান্বিত রাত হচ্ছে চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত। এই রাতে বান্দার গুনাহ মাফ করা হয়। অভাবীকে রিজিক দেওয়া হয়। বিপন্মুক্ত করা হয় বিপদগ্রস্তকে। এই রাতকে ‘শবেবরাত’ বলা হয়। ‘শব’ শব্দটি ফার্সি। এর অর্থ রাত। ‘বারাআত’ শব্দটি আরবি। অর্থ : মুক্তি। তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত হলো ‘শবেবরাত’।

‘শবেবরাতকে হাদিসের পরিভাষায় ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বলা হয়। এই রাতে আল্লাহতায়ালা সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর আসমানে নেমে আসেন। বান্দাকে ডাকতে থাকেন। বান্দার যাবতীয় প্রয়োজন আল্লাহর কাছে পেশ করার আহ্বান করেন।

এই রাতের মাহাত্ম্য সম্পর্কে রয়েছে বেশ কিছু সহিহ হাদিস। তা ছাড়া এ রাতের মাহাত্ম্য সম্পর্কে রয়েছে বিশিষ্ট ইমামগণের নির্ভরযোগ্য বহু বক্তব্য। হজরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “শা‘বান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন। সে রাতে তিনি মুশরিক এবং অন্য ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষ পোষক ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।” মুসনাদে বাজজার- ৮০

অন্যত্র মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “শা‘বান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে মহান আল্লাহ সমগ্র সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকান। সে রাতে তিনি মুশরিক এবং উম্মতে বিভেদ সৃষ্টিকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।” [সহিহ ইবনে হিব্বান- ৫৬৬৫; শুআবুল ইমান, বায়হাকি- ৩৮৩৩]

অন্যত্র ইবনে উমর (রা.) বলেন, “পাঁচটি রাত এমন রয়েছে, যে রাতের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।— ১. জুমু‘আর রাত। ২. রজব মাসের প্রথম রাত। ৩. শা‘বান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত (শবে বরাত)। ৪. ইদুল ফিতরের রাত। ৫. ইদুল আজহার রাত।” [মুসান্নাফে আবদুর রাজজাক- ৭৯২৭]

★শবে বরাতের নামাজ—
এই ‘শবে বরাত’ উপলক্ষে বিশেষ নামাজ বা নামাজের বিভিন্ন রাকাতসংখ্যা, বিশেষ সুরা তেলাওয়াত এবং বিশেষ রোজা রাখা সম্পর্কিত কোনো সহিহ হাদিস নেই। আল্লামা জাহিদ কাউসারি এবং আল্লামা ইউসুফ বানুরি (রহ.) বলেছেন, “এ রাতের বিশেষ কোনো নামাজ সম্পর্কে একটি বর্ণনাও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। তাই যেগুলো আছে, সেগুলো জাল এবং বানোয়াট।”

★শবে বরাতের রোজা—
‘শবে বরাত’ উপলক্ষে বিশেষ কোনো রোজা নেই। এই উপলক্ষে রোজা রাখা সম্পর্কিত হাদিস সহিহ নয়; দুর্বল। তবে এমনিতে কেউ চাইলে পরের দিন অর্থাৎ চান্দ্র মাসের ১৫ তারিখ ‘আইয়্যামে বিজ’-এর রোজা রাখতে পারি। (‘আইয়্যামে বিজ’ অর্থ ‘উজ্জ্বল রাতের দিনগুলো’। চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখকে ‘আইয়্যামে বিজ’ বলা হয়। হজরত আবু জর ও কাতাদা ইবনে মিলহান (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আইয়্যামে বিজ তথা শুক্লপক্ষের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে প্রতি মাসে এই তিন দিন রোজা রাখতে বলেছিলেন।”) [জামে তিরমিজি- ৭৬১; সুনানে নাসায়ি- ৪/২২৩-২২৪; সুনানে ইবনে মাজাহ- ১৭০৭-১৭০৮, সুনানে আবু দাউদ- ২৪৪৯]

শবে বরাতে একাকী ইবাদতসমূহ—
চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত তথা শবে বরাতে একাকী ইবাদত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তাই রাতে আমরা যত ইচ্ছা তত, যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে নামাজ পড়তে পারি, কুরআন কারিম তেলাওয়াতসহ বিভিন্ন সহিহ জিকির-আজকার, ইস্তেগফার, তাসবিহ-তাহলিলে মশগুল থাকতে পারি এবং পরের দিন তথা ১৫ তারিখ দিনে ‘আইয়্যামে বিজ’-এর রোজা রাখতে পারি।

শবে বরাত উপলক্ষে কবর জিয়ারত—
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, “এক রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি হারিয়ে ফেললাম। আমি তাঁর খোঁজে বের হলাম। জান্নাতুল বাকিতে (সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক প্রসিদ্ধ কবরস্থান) তাঁকে পেলাম। তিনি বললেন, ‘তুমি কি ভয় করছো যে, মহান আল্লাহ তাঁর রাসুলের ওপর অত্যাচার করেছেন?’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি ধারণা করেছি যে, আপনি অন্য কোনো স্ত্রীর কাছে এসেছেন।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ তায়ালা শা‘বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বনু কালব গোত্রের বকরি-লোমের সংখ্যার চেয়ে বেশি মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দেন।” [তিরমিজি- ৭৩৯; ইবনে মাজাহ- ১৩৮৯]

আমাদের অনেকেই শবে বরাতে দলবেঁধে কবর জিয়ারত করেন। কিন্তু কোথাও এর ফজিলত সংক্রান্ত বর্ণনা নেই। এমনিতে যেকোনো সময় এবং শবে বরাতে শরিয়তসিদ্ধ পন্থায় কবর জিয়ারত করতে পারি আমরা। কিন্তু শবে বরাতের বিশেষ আমল হিসেবে জিয়ারত করা সম্পূর্ণ অবৈধ।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে না বলে, একাকী, সংগোপনে জান্নাতুল বাকিতে গিয়েছিলেন। কাউকে যাওয়ার কথা বলেননি এবং তিনি নিজেও কাউকে নিয়ে যাননি। পুরো বিষয়টি হাদিস থেকে সহজেই অনুমেয় হয়। আমাদের জন্য কর্তব্য হলো, শরিয়তসিদ্ধ পন্থায় জীবনযাপন করা।

-এসআর


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ