মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪ ।। ৩১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৬ জিলকদ ১৪৪৫


সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে কমছে ফজরের জামাতের মুসল্লি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সাঈয়েদা হাবিবা: ইসলামের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভের মধ্যে নামাজ অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ। এর মধ্যে এশা ও ফজরের নামাজকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মুসলিম শরীফের এক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়ল, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ল’। কিন্তু বাংলাদেশের মসজিদগুলোতে ফজরের জামাতের মুসল্লির সংখ্যা দিন দিন কমছে।

একটা সময় ফজরের জামাতে অনেক মুসল্লি হলেও এখন মুসল্লি হয় অনেক কম। রাজধানীর ডেমরার কয়েকটি মসজিদ ঘুরে দেখা গেছে অন্যান্য নামাজের জামাতের ৬-৭ কাতার এমনকি ৮-১০ কাতার মুসল্লি হলেও ফজরের জামাতে এক থেকে দেড় কাতার মুসল্লি হয়। আর কখনো সর্বোচ্চ মুসল্লি হলে দুই কাতার পূর্ণ হয়। এই মুসল্লিদের মধ্যে বেশির ভাগই বয়স্ক। তরুণ ও যুবকদের সংখ্যা খুবই নগন্য।

ডেমরা রাণী মহল মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি আব্দুল করিম। তার বয়স ৮০ বছরের বেশি। তিনি বলেন, এ এলাকাতে আগে অনেক কম লোক বসবাস করতো। কিন্তু যারা নামাজ পড়তো তারা প্রতি ওয়াক্তেই নামাজ আদায় করতো। এখন বসবাসকারি মানুষের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। মুসল্লির সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ মসজিদে আসর ও মাগরিবের সময় অনেক মুসল্লি হয়। ৬-৭ কাতার মুসল্লি তো নিয়মিতই হয়। কখনো কখনো আরো বেশিও হয়।

মসজিদে ফজর নামাজের মুসল্লির বিষয়ে কথা হয় রাজধানীর একটি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সোহাগ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন মসজিদে আজান হলে বাবা-চাচাসহ বড়রা তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়ার কথা বলতেন। অনেক সময় সাথে করে নিয়েও যেতেন। এখন আমি ঢাকার একটি আবাসিক এলাকায় থাকি। এতো বড় আবাসিক এলাকা হিসেবে মসজিদের সংখ্যা খুবই কম। আর আজান তো শুনতেই পারি না। আমার মেয়ে ছোট। ও এমন একটা পরিবেশে বড় হচ্ছে যেখানে আজান শোনা যায় না। আমরা আজানের পর মুরুব্বিদের মসজিদে যেতে দেখতাম। আমার মেয়ে তেমনটা দেখছে না।

তিনি আরো বলেন, মসজিদে মুসল্লি কমছে মূলত সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কারণে। আগে মানুষ হলে গিয়ে ছবি দেখতো। এখন প্রায় মানুষের বাসাতেই দুই-তিনটা করে হল আছে। বর্তমান বেশিরভাগ মানুষই নেটফ্লিক্স, এইচবিও, ডিজনি প্লাস ও অ্যামাজন প্রাইমে একাউন্ট আছে। তাদেরকে এখন কষ্ট করে হলে যেতে হয় না। হলই এখন মানুষের বাসায়। এমনকি পকেটে। বিশেষত, নেটফ্লিক্সের প্রতিষ্ঠাতা রিড হেস্টিংস ও মার্ক র‌্যান্ডলফ ইহুদি। সুতরাং তারা মুসলিম সাংস্কৃতি প্রচার না করাটাই স্বাভাবিক। এমনকি আমাদের দেশে তৈরি নাটক, শর্টফিল্ম ও আর্ট মুভি কোথাও ইসলামি সাংস্কৃতির প্রচার নেই। মুসল্লিরা ফজর নামাজ পড়তে যাচ্ছে এমন কোনো চরিত্র কোথাও নেই। সুতরাং আমারা মুসলিম হয়েও দিন দিন ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছি।

বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র ইমাম মুফতি মিযানুর রহমানের সঙ্গেও কথা হয় এ বিষয়ে। তিনি বলেন, মানুষ ফজরের নামাজের গুরুত্ব না বোঝার কারণে ফজরের জামাতে মসজিদে আসছে না। তা ছাড়া কিছু বয়স্ক লোক ফজরের সময় মসজিদে আসলেও যুবকরা খুব কমই আসে। অথচ যুবকদের ইবাদতই আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়।

মিযানুর রহমান আরো বলেন, আমরা ইসলামি সংস্কৃতি ও কালচার থেকে অনেক পিছিয়ে পড়েছি। ইসলামি সাংস্কৃতি আমার রাতে আগে ঘুমানোর ও সকালে তাড়াতাড়ি উঠার শিক্ষা দেয়। নবী সা. একটি হাদিসে বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করলো তারা সারা দিনের দায়িত্ব আল্লাহপাক নিয়ে নেন। এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে। কিন্তু এ শিক্ষা মানুষের মধ্যে না থাকায় সবাই ফজরের নামাজে অলসতা করে থাকে।

তিনি আরো বলেন, মানুষকে মসজিদে আসার জন্য আমরা মসজিদের মিম্বার থেকে কথা বলে যাচ্ছি। কিন্তু শুধু আমাদের একক প্রচেষ্টায় সফল হওয়া যাবে না। পরিবারের মুরুব্বিদেরও সচেতন হতে হবে। সবাইকে ফজরের জামাতে মসজিদে আসার শিক্ষা দিতে হবে। তাহলেই এক দিন ফজরের জামাতে মুসল্লিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ