শনিবার, ১১ মে ২০২৪ ।। ২৮ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৩ জিলকদ ১৪৪৫


সম্পদ পবিত্র হয় জাকাত প্রদানে: মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।।মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানী।।

জাকাত প্রদান করা ইসলাম ধর্মে একটি মৌলিক ইবাদত। ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মৌলিক ভিত্তির অন্যতম হলো জাকাত। ইমান গ্রহণের পর নামাজ ও জাকাতের গুরুত্ব অনেক বেশি। মহান প্রভু কোরআনে কারিমে প্রায় ৮২ বার নামাজের প্রতি এবং ৩২ বার জাকাত আদায়ের প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেছেন। নামাজ হলো শারীরিক ইবাদত এবং জাকাত হলো আর্থিক ইবাদত।

আল্লাহতায়ালা ধন-সম্পদসংশ্লিষ্ট যেসব বিধিবিধান প্রদান করেছেন এর মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হলো জাকাত। মুসলমান হিসেবে অন্যতম নিদর্শন হলো নামাজ ও জাকাত। কোরআন হাদিসে নামাজ ও জাকাত আদায়কারীর জন্য অনেক বিনিময় ঘোষণা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে অনেক কঠিন শাস্তির কথাও।

জাকাত প্রদান না করার শাস্তি : মহান প্রভু ঘোষণা করেন ‘হে মুমিনগণ কথিত পন্ডিত ও সংসারবিরাগীদের অনেকেই লোকদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে। যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে আর তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদের কঠোর শাস্তির সুসংবাদ জানিয়ে দিন। যেদিন জাহান্নামের আগুনে এসব উত্তপ্ত করা হবে, তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে। সেদিন বলা হবে তা ওই সম্পদ যা তোমরা নিজেদের জন্য পুঞ্জীভূত রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে তা আস্বাদন কর। (সুরা আত তাওবা : ৩৪-৩৫)।

জাকাতের নিসাব : জাকাতের জন্য বিবেচ্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সম্পদ ব্যতীত সর্বনিম্ন ৭.৫০ ভরি বা ৮৫ গ্রাম খাঁটি স্বর্ণ এবং ৫২.৫০ ভরি বা ৫৯৫ গ্রাম খাঁটি রৌপ্য। উল্লিখিত উভয় প্রকার সম্পদের সমন্বয়ে ৫২.৫০ ভরি রৌপ্যের সমমূল্য হলেও জাকাত প্রদান করতে হবে। এভাবে নগদ মুদ্রা, বিভিন্ন প্রকার ডিপোজিটে জমা অর্থ এবং ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্য যদি ৫২.৫০ ভরি খাঁটি রৌপ্যের সমমূল্য পরিমাণ হয় এর জাকাত আদায় করতে হবে।

উল্লেখ্য, জাকাতযোগ্য সম্পদ কারও মালিকানায় পূর্ণ এক বছর অতিক্রম হলে এতে জাকাত ওয়াজিব হয়। এভাবে প্রতি বছর অতিক্রমান্তে জাকাত প্রদান করতে হবে। চন্দ্র বছর হিসেবে জাকাতযোগ্য সম্পদের ৪০ ভাগের এক ভাগ বা শতকরা ২.৫ অংশ আদায় করতে হবে। সহজসাধ্য হিসাবের লক্ষ্যে রমজান থেকে রমজান জাকাত আদায়ের প্রচলন চলে আসছে। আরবি মাস ২৯/৩০ দিনে হয়। খ্রিস্টীয় মাস ৩১ দিনেও হয়ে থাকে। তাই কেউ যদি খ্রিস্টীয় হিসাব অনুযায়ী বছর অতিক্রমান্তে জাকাত প্রদান করে তাহলে বিজ্ঞদের পরিসংখ্যান মতে ২.৭৭% হিসাবে জাকাত প্রদান করতে হবে।

জাকাতের উপকারিতা : জাকাত আদায়ের মধ্যে ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে বিভিন্ন কল্যাণ নিহিত রয়েছে। জাকাত প্রদানে সর্বোত্তম লাভ হলো সম্পদ ও সম্পদশালীদের পবিত্রতা অর্জন। মহান আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘তাদের সম্পদ থেকে জাকাত গ্রহণ করুন। এর দ্বারা আপনি তাদের পবিত্র এবং পরিশোধিত করুন। (সুরা আত তাওবা-১০৩)। জাকাত

সর্বজনীন অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধানসহ মৌলিক অধিকার পূরণ করে। ধর্মহীন পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পদ কিছু মানুষের হাতে পুঞ্জীভূত হয়ে পড়ে। ফলে সমাজে ব্যাপক অর্থনৈতিক বৈষম্য দেখা দেয়। মানুষের নৈতিক চরিত্রে বিপর্যয় ঘটে। এসব সমস্যার সমাধান ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে মহান প্রভু ধনীদের সম্পদে অভাবীদের অংশ রেখে দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তাদের ধন-সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার।’ (সুরা আজ জারিয়াত-১৯)। অপর আয়াতে তিনি ঘোষণা করেন, ‘যাতে ধনৈর্শ্বর্য কেবল তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যে পুঞ্জীভূত না হয়।’ (সুরা আল হাশর-৭)।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ