জামীল আহমাদ।।
রমজান আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাধারণ ক্ষমা ও অশেষ প্রাপ্তির মাস হয়ে। রমজানের রোজা, তারাবি, সেহরি, ইফতার, এতেকাফ, সাদাকাহসহ যাবতীয় সব আমলের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে আঁচল ভরে রহমত দান করেন।
আশা করি আমরা খোদার দানের উপযুক্ত হয়েছি। এ জন্য অন্য সময়ের আমলগুলোর মর্যাদাও রমজানে সত্তরগুণ বেশি। বান্দার জীবনে যত গুনাহ রয়েছে, সবকিছু তিনি এ মাসে ক্ষমা করে দেন। সামনে যেন এসব গুনাহের পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তাই তাকওয়ার গুণে নিজেকে গুণান্বিত করতে রমজানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন।
রমজানের শেষ দশকে নবীজি (সা.) ইবাদতের জন্য জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। সারা রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং স্বীয় পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (সহিহ মুসলিম)
পবিত্র রমজানের শেষ দশক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার। এ দশকের প্রতিটি রাত একটুও না ঘুমিয়ে রাত জেগে থেকে ইবাদত বন্দেগি করা হচ্ছে নবীজির অন্যতম সুন্নাত।
তবে কর্মব্যস্ত লোকেরা দিনের বেলায় পরিশ্রম করার কারণে রাত জাগতে পারেন না। তাদের জন্য এমন কিছু আমলের আলোচন কর হলো- যেগুলো করলে সারারাত না জেগেও তারা রাত জেগে আমল করার পূর্ণ সওয়াব পাবেন।
রমজানের পুণ্যময়ী শেষ দশকের রাতের আমল থেকে আমরা কেউই বঞ্চিত না হই। সে জন্য আজ সহজ পদ্ধতির কিছু আমল নিয়ে আলোচনা করা হল।
ইশা, তারাবি ও ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করা: নবীজি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে রাতে ইশা ও তারাবিহ নামাজ পড়ে এবং ইমাম নামাজ শেষ করে চলে যাওয়া পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করেন। আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তিকেও সারারাত দাঁড়িয়ে ইবাদত করার সমান সাওয়াব দান করেন।' (আবু দাউদ)
ইমামের সঙ্গে জামাতে ইশা এবং তারাবিহ নামাজ শেষ পর্যন্ত থেকে আদায় করলে আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তিকে সারারাত জেগে ইবাদত করার সওয়াব দান করবেন।
অন্য এক হাদিসে রয়েছে- প্রিয় নবি (সা.) বলেন, যে লোক ইশার নামাজ জামাতের সাথে আদায় করল, সে ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা সারারাত দাঁড়িয়ে ইবাদত-বন্দেগি করার সাওয়াব দান করবেন। আর যে লোক ইশা এবং ফজর উভয় নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে সারারাত দাঁড়িয়ে ইবাদত করার সাওয়াব দান করবেন।' (মুসলিম)
অর্থাৎ এমন একটি সহজ আমল রয়েছে, যার মাধ্যমে মুমিন বান্দা সারারাত ঘুমিয়েও পূর্ণরাত ইবাদত বন্দেগি করার সাওয়াব লাভ করবে। আর তা হলো ইশা এবং ফজর নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা।
রমজানের শেষ দশকে মুমিন বান্দা অবশ্যই রাত জেগে ইবাদত বন্দেগি করবে ঠিকই কিন্তু সারারাত নিয়মিত ইবাদত করা অত্যন্ত কষ্টকর। তাই কমপক্ষে ইশা আর ফজর জামাতের সঙ্গে আদায় করলে সারারাত ইবাদত করার সওয়াবটা হাসিল হবে।
রাত জেগে ইবাদত করার নিয়ত করে ঘুমোতে যাওয়া: যে ব্যক্তি এ নিয়তে বিছানায় ঘুমোতে যায় যে, সে রাতে জেগে উঠে ইবাদত-বন্দেগি করবেন। কিন্তু বিছানায় ঘুমানোর পর, তার ঘুম এত ভারি ও প্রবল ছিল যে সে আর জেগে ইবাদত করতে পারেনি। ঘুমেই তার রাত অতিবাহিত হয়ে গেছে। সে ব্যক্তিও রাতে জেগে ওঠে ইবাদত-বন্দেগির নিয়তের কারণে সারারাত জেগে ইবাদত করার সাওয়াব পাবেন। আর এ ব্যক্তির জন্য রাতের ঘুমটি হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাদাকাহ বা উপহার।
১০০ আয়াত তেলাওয়াত করা: নবীজি (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি রাতে ১০০টি আয়াত তেলাওয়াত করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে সারারাত ইবাদতের সমান সাওয়াব দান করবেন। (সহিহুল জামে)। কুরআনুল কারিমের যে কোনো সুরা বা স্থান থেকে ১০০টি আয়াত তেলাওয়াত করলেই সাররাত জেগে আমল করার সওয়াব পাওয়া যাবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই সহজ আমলগুলো করে সারারাত জেগে আমল করার সওয়াব হাসিল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: উস্তাযুল হাদীস দারুল উলূম রামপুরা বনশ্রী মাদরাসা, ঢাকা।
-এটি
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        