বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠাল বিজিবি বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি, অনলাইনে ক্লাস চালুর চিন্তা ফের ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট জারি, হতে পারে বৃষ্টি যুদ্ধ কখনোই কোনো সমাধান দিতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী সব ডিসি-এসপির সঙ্গে ইসির বৈঠক বৃহস্পতিবার ‘মানতিক; যুগের চাহিদার সাথে মিলে না’ এ ধরেণের কথা অযৌক্তিক: মুফতি হিফজুর রহমান দাওরায়ে হাদিসের ফলাফল নজরে সানীর আবেদনের সময় বাকি ৩ দিন  বৃষ্টি প্রার্থনায় জামিয়াতুল আবরার রাহমানিয়ায় ‘সালাতুল ইস্তিসকা’  আদায় হাসপাতালে সৌদি বাদশাহ সালমান সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত পাঠ্য তালিকার সাথে বেফাকের পাঠ্য তালিকার সম্পর্ক নেই: বেফাক

শুধু হাফেজে কুরআন নয়, আমরা বানাবো হাফেজে হাদিস

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বাংলাদেশে হাফেজে কুরআনের সংখ্যা অসংখ্য। ছোট শিশু থেকে নিয়ে বৃদ্ধ পর্যন্ত অনেক হুফফাজে কেরাম আছেন এদেশে। এটা আমাদের জন্য অত্যান্ত গর্বের ও আনন্দের। এদেশ হাফেজে কুরআনের দেশ। এদেশের মাটি হাফেজদের পদচারণায় মুখরিত। কুরআনের খাদেমদের পদভারে মুগ্ধ। ঐশীগ্রন্থ আল কুরআনের পরেই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসের অবস্থান। কুরআনুল কারীমে কোনো সমাধান খোঁজে না পেলে খুঁজতে হয় হাদিসে। বহু মাসআলার মূল বিষয় কুরআনে কারীমে থাকলেও সমাধান দেওয়া হয়েছে প্রিয় নবীর হাদিসে। কিন্তু বাংলাদেশে অসংখ্য হাফেজে কুরআন থাকলেও হাফেজে হাদিস নেই হাতেগোণা একজনও। অসংখ্য হিফজুল কুরআন মাদরাসা থাকলেও হিফজুল হাদিস মাদরাসা নেই একটিও। হিফজুল হাদিসের এই সংকট কাটিয়ে উঠতেই নিজের প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায় ‘হিফজুল কুরআনের আলোকে হিফজুল হাদীস’ বিভাগ চালু করেছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা চাঁদপুরের মহামায়া দারুস সালাম মাদরাসা। অত্যান্ত সফলতার সাথে প্রতিষ্ঠানটি এক বছর অতিবাহিত করার পর এবার পা রাখলো দ্বিতীয় বর্ষে। সম্প্রতি নিজের প্রতিষ্ঠিত হিফজুল হাদিস মাদরাসা নিয়ে আওয়ার ইসলামের মুখোমুখি হয়েছেন দারুল উলুম দেওবন্দ ফারেগ সৃজনশীল মননের এ তরুণ আলেম মাওলানা আসাদুল্লাহ সুলতান। তার সাথে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের নিউজরুম এডিটর মোস্তফা ওয়াদুদ


আওয়ার ইসলাম: কুরআনুল কারীম নামাজে পড়া ও সংরক্ষণের জন্য মুখস্থ করতে হয়। কিন্তু হাদিস কেনো মুখস্থ করবে? মুসলিম জীবনে এর গুরুত্ব কতটুকু?
আসাদুল্লাহ সুলতান: ধন্যবাদ আওয়ার ইসলাম পরিবার ও পাঠকবর্গকে। আপনার জানা থাকার কথা, কুরআন-হাদীস সংরক্ষণের গুরুত্ব এবং তা গ্রন্ধবন্ধ করার প্রেক্ষাপট, কারণ ও প্রক্রিয়া ইত্যাদি পর্যালোচনা করলে বুঝা যায়, মুখস্থ করাটাই কুরআন-হাদীস সংরক্ষণের মৌলিক পদ্ধতি। যদিও হাদীস মুখস্থের বিষয়টা আমরা প্রায় ভুলেই গিয়েছি। আকাবির মনীষীদের অন্যতম আল্লামা মানাজির আহসান গিলানী রহ. তো স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন: ‘শুধু গ্রন্থবন্ধ করাকেই হাদীস সংরক্ষণের একমাত্র পদ্ধতি মনে করা অজ্ঞতা।’

আর হাদীস মুখস্থের গুরুত্ব সম্পর্কে আমি নগণ্যের মুখ থেকে নয়, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পবিত্র জবান থেকেই শুনি। তিনি বলেছেন, ‘যে আমার হাদীস শুনেছে অতপর মুখস্থ ও হেফাজত করেছে, এবং অনবগত অন্যকে তা পৌঁছে দিয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তাকে প্রফুল্ল করবেন’। এই হাদীসের ব্যাখ্যাটিও শুনি, শরহে সুনানে আবি দাউদে হিফজুল হাদীসের গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘হিফজুল ইলম ও হিফজুল হাদীসের ক্ষেত্রে দৃঢ়তা অর্জন করা আলেম ও তালিবে ইলমের উপর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বসমূহের মধ্যে অন্যতম। কেননা যারা ভালোভাবে হাদীস মুখস্থ করবে এবং হুবহু তা অন্যকে পৌছিয়ে দিবে রাসূল সা. তাদের জন্য প্রফুল্লতার দোয়া করেছেন। সুতরাং তালিবে ইলমের মধ্যে হিফজুল হাদীসের প্রতি আগ্রহ থাকতেই হবে। আর তা (হিফজুল হাদীস) তাকরার-তামরীন ও নিরবিচ্ছিন্ন পড়াশোনা ছাড়া অসম্ভব।’

[caption id="" align="aligncenter" width="626"]No description available. সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন মাদরাসা পরিচালক মাওলানা আসাদুল্লাহ সুলতান[/caption]

যেহেতু একজন প্রকৃত মুসলিম হাদীসের নির্দেশনা ছাড়া জীবনে পূর্ণ সফলতা কল্পনা করতে পারেন না, তাই তাকেও হাদীস জানতে হবে। সুতরাং সেই জানার জন্যই তার হাদীস মুখস্থ করা উচিত।

আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশে ‘হিফজুল হাদীস’ নামে আলাদা বিভাগ করার চিন্তা আপনার কেনো হলো?
আসাদুল্লাহ সুলতান: ‘হিফজুল হাদীসে’ আমার অজ্ঞতাটাই আমাকে পীড়া দিতো। যখন দাওরা পড়েছি, একটি বিষয় বারবার দিলে ধাক্কা দিত, ২৪ ঘন্টা হাদীস শুনছি, পড়ছি, আজীব আজীব তাকরীর শুনছি, কিন্তু দু’একশ হাদীস মুখস্ত করতে পারছি না। পিছনে দীর্ঘ এক যুগের দেড়শ মাসে হাতেগুণা দেড়শ হাদীসও মুখস্থ করতে পারলাম না! খুব খারাপ লাগতো। ভাবতাম, যদি ছাত্র যামানাতেই এমন কোন পদ্ধতি থাকতো, বিশেষ কোন প্রতিষ্ঠান থাকতো! যেখানে স্বাভাবিকভাবেই হাদীস মুখস্থের পরিবেশ থাকবে, মনে না চাইলেও বাধ্যতামূলকভাবে হাদীস মুখস্ত করতেই হবে! এবং পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম এ সমস্যাটা শুধু আমার একার নয়, সিনিয়র-জুনিয়র অনেকের। তখন নিজের দায়বোধ থেকেই ‘হিফজুল হাদীস’ নিয়ে কিছু একটা করার প্রচন্ড আগ্রহ জাগলো।

একবার রবিউল আউয়াল উপলক্ষে হিফজুল হাদীস প্রতিযোগিতা হলো, বিচারক হিসাবে অনুষ্ঠানে আমাকে হিফজুল হাদীস নিয়ে কথা বলতে হবে, সে উপলক্ষে আল্লামা মানাজিরে আহসান গিলানী রহ. এর ‘তাদবীনে হাদীস’ নামক কিতাবটি মুতালাআ করার সৌভাগ্য হয়। লেখক ‘হিফজুল কুরআনের আলোকে হিফজুল হাদীস’ শিরোনামে স্বতন্ত্র একটি অধ্যায় লিখেছেন। তিনি তারিখে বাগদাদের রেফারেন্সে ‘হিফজুল হাদীস’ বিষয়ে একটি চমৎকার নির্দেশনাও দিয়েছেন। হজরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহ. (মৃত্যু ১০১ হি.) কর্তৃক নিয়োজিত আফ্রিকার গভর্ণর মুহাদ্দিস হজরত ইসমাঈল ইবনু উবাইদুল্লাহ রহ. (মৃত্যু ১৩১ হি.) বলেছেন, ‘আমাদের উচিত, কুরআন যেভাবে মুখস্থ করা হয়, সেভাবে হাদীসও মুখস্থ করা’। একই বিষয়ে তিনি আরো চার-পাঁচটি প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন।

নির্দেশনাটি পাওয়ার পর থেকে এলোমেলো ভাবনাগুলো স্থির হয়ে জমা হতে লাগলো, তখন সব চিন্তা বাদ দিয়ে এই নির্দেশনাটিকেই একটি ‘হিফজুল হাদীস থিম’ হিসাবে গ্রহণ করলাম, এই থিম সামনে রেখে মোটামুটি পাঁচ বছর যাবত বিভিন্ন কিতাবাদি মুতালাআ করতে থাকলাম। বিভিন্নভাবে ঘাটাঘাটি করলাম ‘মাকতাবায়ে শামেলা’তেও । মুতালাআ করলাম ইমাম যাহাবীর রহ. ‘তাযকেরাতুল হুফ্ফাজ’ পূরোটা । আলহাম্দুলিল্লাহ! এর স্বপক্ষে পেলাম বহু প্রমাণও। এক পর্যায়ে ১১ জন তালিবে ইলমের মাধ্যমে থিমটি প্রায়োগিকভাবে যাচাই করার চেষ্টা করলাম। অবশেষে যখন পুরো আস্থা তৈরী হলো গত বছর (১৪৪১-৪২হি.) এক বছর মেয়াদে ‘হিফজুল করআনের আলোকে হিফজুল হাদীস’ থিমটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাস্তবায়ন শুরু হলো।

আওয়ার ইসলাম: আপনাদের সিলেবাসে কোন কোন হাদিসের কিতাব থাকবে?
আসাদুল্লাহ সুলতান: আসলে হাদীসের যে মৌলিক কিতাবগুলো রয়েছে, সেগুলোর একেকটা কিতাবই তো একেকটা সাগর। যদি সেগুলোর একটিও সিলেবাসে বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়, তাহলে মাত্র এক বছরে তা মুখস্থ করা স্বাভাবিকভাবে অসম্ভব। তাই মুহাক্কিক, নির্ভরযোগ্য ও অনুসরণীয় মনীষীদের কিছু নির্বাচিত সংকলন সিলেবাসের জন্য চয়ন করা হয়েছে। যথা:
ক-মিন সিহাহিল আহাদীসিল কিসার- শাইখ মুহিউদ্দীন আওয়ামা হাফি.
খ-হুজুর সা. নে ফরমায়া- আল্লামা তাকী উসমানী হাফি.
গ-আল আরবাঈন- ইমাম নববী রহ.
ঘ-তামামুল মিন্নাহ ফি হিফজিসসুন্নাহ- মাওলানা আব্দুল হাকীম হাফি.
ঙ-রিয়াজুস সালেহীন - ইমাম নববী রহ.
চ-শামায়েলে তিরমিযি- ইমাম তিরমিযি রহ.
ছ-আলকালিমুত তাইয়্যিব- ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ.
জ- আবু হানিফার রহ. সনদে হাদীস- সংকলিত
ঝ-‘এ সব হাদীস নয়’ (মওজুয়াত)- মাওলানা আব্দুল মালেক হাফি.
(এ তালিকা প্রস্তুতিমূলক ও পরিবর্তণযোগ্যও বটে)

আওয়ার ইসলাম: এ সিলেবাস প্রণয়ণের কারণ ও বৈশিষ্টগুলো যদি বলতেন?
আসাদুল্লাহ সুলতান: সিলেবাস প্রণয়ণে আমরা যে বিষয়গুলো লক্ষ রাখতে চেষ্টা করেছি।
১. হাদীসগুলো হবে বিষয়ভিত্তিক এবং সমকালের আলোচিত বিষয়সমূহে পক্ষ-বিপক্ষের উল্লেখযোগ্য দলিলাদি।
২. সংখ্যাগত পরিমাণ হবে মধ্যম পর্যায়ের মেধাবীদের বিবেচনায়।
৩. পর্যায়ক্রম ও ধারাবাহিকতা হবে যথাসম্ভব ছোট থেকে বড় হাদীস।
৪. অনুবাদ জটিলতায় সময় ক্ষেপন থেকে বাঁচাতে হাদীসগুলো হবে বাংলা অনুবাদসহ।
বড়দের নির্দেশনা ও পরামর্শে সেটি আরো সুবিন্যস্ত ও উপযোগী করার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। ইনশাআল্লাহ!

বি. দ্র. তিন পর্বের সাক্ষাৎকারে আজ দেওয়া হলো প্রথম পর্ব। 

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ