শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


আবারও মাওলানা আযহারীর বিতর্কিত ফতোয়া!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রশিদ আহমাদ কাসেমী ও কাউসার লাবীব

প্রথমেই একটা কথা স্পষ্ট করা দরকার; আমরা ব্যক্তিগতভাবে মাওলানা মিযানুর রহমান আযহারীর বিরোধী নই৷ তবে তিনি যদি বিতর্কিত কোনো কথা বলেন বা ভুল মাসআলা বলেন, তাহলে তার ভুলের বিরোধিতা করলে তাঁর বিরোধিতা হয় না।

কিছুদিন আগে মাওলানা আযহারী  ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন। বেশ সাড়া পড়ে ইসলাম প্রিয় মানুষের মাঝে। আজ তিনি তার ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও আপলোড করেছেন। এতে তিনি সামুদ্রিক প্রাণী খাওয়ার বিধান বর্ণনার ক্ষেত্রে একটি বিতর্কিত  ফতোয়া প্রদান করেছেন।

ফতোয়া নিয়ে তার বিতর্কিত মন্তব্যের রেকর্ড আগেও আছে। তিনি তার ফেসবুক পেজের এক লাইভে বলেছিলেন, তার ফতোয়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয় বিধায়, তিনি আর ফতোয়া দিবেন না। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি তিনি রক্ষা করতে পারলেন না। ইউটিউব চ্যানেলের প্রথম ভিডিওতেই ফতোয়া দিলেন। আশঙ্কা তৈরি করলেন আরেকটি বিতর্কের।

তিনি তার আজকের ফতোয়ায় বলেন, জাপান থেকে সনিয়া শারমিন নামের এক বোন আমাদের প্রশ্ন করেছেন, সামুদ্রিক কোন কোন প্রাণী খাওয়া যাবে আর কোনটা খাওয়া প্রাণী খাওয়া  যাবে না? বিশেষ করে উদাহরণস্বরূপ শামুক, ঝিনুক, অক্টোপাস, স্কুইড এবং  কাকড়ার কথা তিনি উল্লেখ করেছেন।

এ প্রশ্নের জবাবে মাওলানা আযহারী বলেন, ‘এক্ষেত্রে আমরা বিশ্বাসীরা এই মূলনীতি অবলম্বন করতে হবে যে, যেটা তাইয়িবাত বা পবিত্র সেটা খাওয়া আমাদের জন্য হালাল। আর যেটা খবায়েস বা অপবিত্র সেটা আমাদের জন্য হারাম। তাহলে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি। সামুদ্রিক সব ধরনের প্রাণী বা সি ফুড খাওয়া জায়েজ। যদি এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না হয় বা তাতে বিষাক্ত কোন জিনিস নেই এমনটা প্রমাণিত হয় তাহলে।’

আমরা যদি সুন্নাহ, ফুকাহাকেরাম ও আইম্মায়ে কেরামের মতের দিকে লক্ষ করি,  ‘সমুদ্রের সব কিছু হলাল’ এটা কোনো মাজহাবের মত নয়৷ তবে উনি যে উত্তর দিয়েছেন, তা কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ উলামায়ে কেরামের মত৷ তবে অধিকাংশ উলামাগণের নিকট, এটি সঠিক নয়৷

মাওলানা আযহারী এর আগেও তিনি মারজু কওল বা দুর্বল মতামতের পথে হেঁটে বিতর্কে জড়িয়ে ছিলেন। তার ফতোয়ায় সামুদ্রিক কুকুর, শুকরসহ সব প্রাণী জায়েয যদি বিষাক্ত বা ক্ষতিকর না হয়৷ অথচ এটা স্পষ্ট ভুল কথা৷

প্রমাণ ১- বিশেষজ্ঞ মুজতাহিদ ফুকাহাদের অভিমত হল, মাছ ছাড়া অন্য কোনো জলজ প্রাণী খাওয়া জায়েজ নেই। আর যেহেতু অক্টোপাস, স্কুইড (সামুদ্রিক বিশেষ প্রাণী), শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি মাছ নয়, তাই এগুলো খাওয়াও নাজায়েজ। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/১১৪; আল-বাহরুর রায়েক : ৮/৪৮৫; হাশিয়ায়ে তাহতাবি : ৪/৩৬০ ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৪/১১৮)।

এছাড়া এগুলো কুরআনে বর্ণিত ‘খাবায়েস’ (নোংরাবস্তু)-এর অন্তর্ভুক্ত। সুরা আল-আরাফে আল্লাহ তায়ালা এগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। ‘খাবায়েস’ বলা হয়, যা মানুষ স্বভাবগত ঘৃণা করে। (বিস্তারিত তাফসিরে কাবির, আদওয়াউল বায়ান, আল-লুবাব, আলহাবি সংশ্লিষ্ট আয়াত)। আর মাছ ছাড়া অন্যান্য জলজপ্রাণী রুচিশীল মানুষ স্বভাবতই ঘৃণা করে। সুতরাং সেগুলোও কুরআনের হুকুম অনুযায়ী নিষিদ্ধ।

প্রমাণ ২- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম এ ধরনের জলজ প্রাণী খেয়েছেন বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। অধিকন্তু, হজরত আবদুর রহমান ইবনে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জনৈক চিকিৎসককে ব্যাঙ মেরে ওষুধ বানাতে নিষেধ করেছিলেন। ’ -সুনানে আবু দাউদ: ৩৮৭১

প্রমাণ ৩- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের জন্য দুই প্রকারের মৃত জীব ও দুই ধরনের রক্ত হালাল করা হয়েছে। মৃত জীব দুটি হলো মাছ ও ফড়িং এবং দুই ধরনের রক্ত হলো কলিজা ও প্লীহা।-ইবনে মাজাহ: ৩৩১৫; মুসনাদ আহমাদ: ৫৬৯০

ইসলামের দীর্ঘ ইতিহাসে সামুদ্রিক প্রাণীর বিষয়ে এ ফতোয়াই প্রদান করা হচ্ছে। তাই মাওলানা আযহারী এ জায়গাতে আবারও ভুল করে বসলেন।

সবশেষে বলবো, অনেকের একটি ভুল ধারণা আছে, তারা মনে করে, ‘আযহারী সাহেব কিছু বললেই আপনারা খালি ভুল ধরেন।’ বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। এতদিন তো আমরা মাওলানা আযহারী কোনো কথার বিরোধিতা করিনি৷ তিনি এখন বিরোধপূর্ণ কথা বলেছেন, তাই সঠিকটা মানুষের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ভালোভাবে ইসলাম বুঝার ও মানার তৌফিক দান করুক। আমীন।

-এইচএ

আরো পড়ুন:- আলোচিত সেই টকশো নিয়ে মুখ খুললেন সঞ্চালক সাইফুর সাগর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ