বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪ ।। ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ৮ জিলকদ ১৪৪৫

শিরোনাম :
হাছান মাহমুদ ও ডোনাল্ড লুর বৈঠকে যেসব আলোচনা হলো  বিএনপির আরও ৫২ নেতাকে বহিষ্কার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্টিফিক সোসাইটির নবীনবরণ ও পূনর্মিলনী অনুষ্ঠিত স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় চোখ নিরাপদে রাখার কৌশল ছাত্রদের মোবাইল ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে হবে: মাওলানা আরশাদ মাদানি ‘ঢাকা শহরে কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে না’ : ওবায়দুল কাদের পেছনে ফিরে তাকাতে চাই না, সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চাই: ডোনাল্ড লু আর্ত মানবতার সেবায় ‘উই আর ওয়ান ফাউন্ডেশন’ ফরিদপুরের নগরকান্দায় শ্রমজীবী মানুষের মাঝে ছাতা, গেন্জি ও গামছা বিতরণ বিশ্বনবী সা. কে নিয়ে কটূক্তি, যুবককে জনতার গণধোলাই

নতুন কোনো কর্মসূচি নয়: ভাস্কর্য ইস্যুর সুন্দর সমাধান চান আলেমরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মোস্তফা ওয়াদুদ
নিউজরুম এডিটর>

হাজারও ইস্যুর ভীড়ে বর্তমানে টক অব দ্যা কান্ট্রি’ ভাস্কর্য। পদ্মা সেতুর মুখে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের প্রথম বিরোধিতা হয় স্থানীয় মসজিদসমূহের ইমামদের নিয়ে গঠিত ‘ইমাম-মুসুল্লি ঐক্য পরিষদ’ নামের একটি ব্যানারে। সংগঠনটির সভাপতি মাওলানা মোরশেদের নেতৃত্বে গত ১৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রেরণ করা হয় একটি স্মারকলিপি।

এরপর ধোলাইপাড়ে অনুষ্ঠিত ‘তৌহিদী জনতা ঐক্য পরিষদ’ ব্যানারে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদ সভা। সেখানে ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। প্রতিবাদ হয় ঢাকার বিএমএ মিলনায়তনের একটি প্রোগ্রামেও। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক এ প্রতিবাদ করেন। ধীরে ধীরে দেশের তৌহিদী জনতা বিরোধিতা করতে ভাস্কর্য নির্মাণের। এরপরই দেশের বিভিন্ন মাহফিল থেকে ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা আসতে থাকে।

বসে থাকেনি ভাস্কর্য নির্মাণের পক্ষের লোকও। তারাও বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করে হুমকি-ধমকি দিতে থাকে। পরবর্তীতে দেশের শীর্ষ তিন আলেমের নামে মামলা হয়েছে। মামলা করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন। হঠাৎ করে এ সংগঠনটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে দেশজুড়ে। তারা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমের নামে।

এরপরই দেশের পরিবেশ অশান্ত হতে শুরু করে। দেশের বিভিন্ন স্থানের হামলা-মামলা, মিছিল-মিটিং হয়। দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হতে থাকে।

মাওলানা মামুনুল হকের কিছু বক্তব্য ঘিরে দেশজুড়ে এমন অস্থিরতা বিরাজ করছে- মামলাকরীরা এমন অভিযোগ করলে সর্বপ্রথম ভাস্কর্য ইস্যুতে সংবাদ সম্মেলন করেন মাওলানা মামুনুল হক। দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি, নিজের আদর্শিক ও রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করার জন্য এ সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন তিনি। গত ২৯ নভেম্বর ২০২০ ইংরেজি তারিখে করা সংবাদ সম্মেলনে তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের অবস্থান ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নয়।

এদিকে ভাস্কর্য নির্মাণকে ঘিরে সরকারের মন্ত্রীরা বিভিন্নরকমের বক্তব্য দেন। সরকারের সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, যে কোনো মূল্যে ধোলাইপাড়ে ভাস্কর্য নির্মাণ হবেই। এদিকে সরকারের নতুন ধর্মমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের ছয়দিন পর এক সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন, ভাস্কর্য আর মূর্তি এক নয়। এছাড়াও সরকারের অন্যান্য উচ্চমহল ভাস্কর্য নির্মাণকে কেন্দ্র করে একাধিক বক্তব্য প্রদান করেন। কারো কারো বক্তব্য সহনশীল থাকলেও কারো বক্তব্যে আলেমদের প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

এরপর গত ৩ ডিসেম্বর দেশের শীর্ষ আলেমরা ফতোয়া প্রদান করে বলেন, ইসলামে ভাস্কর্য তৈরি করা হারাম। মূর্তি আর ভাস্কর্য একই জিনিস। দুটির মাঝে ইসলামে কোনো পার্থক্য নেই। যে কোনো উদ্দেশে বানানো ভাস্কর্যই ইসলামে হারাম। ভাস্কর্য আর মূর্তি নিয়ে বাংলা একাডেমি অভিধান ও সংসদ অভিধানে বর্ণিত সমর্থবোধক শব্দগুলোও তুলে ধরে ‘ভাস্কর্য ও মূর্তি একই জিনিস’-এটা প্রমাণ করে দেন তারা।

তারপর গত ৮ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখ (মঙ্গলবার) সংবাদ সম্মেলন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সেখানে দলটির আমীর সৈয়দ রেজাউল করীম তাদের অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘ইসলাম বা শরিয়তের দৃষ্টিতে বিষয়টা কী-সেটা আমরা তুলে ধরেছি। এখন সরকার জনগণের মনোভাব বুঝে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু কোন কোন মহল আলেমদের বিরুদ্ধে নানা রকম বক্তব্য দিয়ে একটা অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি মনে করেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সাথে বৈঠক হতে পারে এ বিষয়ে। সংবাদ সম্মেলনে মুফতি ফয়জুল করীম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা আমাদের উপর অবিচার। আমরা জনগণের কাছে এর বিচার দিলাম। জনগণই এর সমুচিত জবাব দিবে। তবে ভাস্কর্য ইস্যুতে আমরা সুন্দর একটি সমাধান চাই।

তারপর যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় কওমী মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় দেশের শীর্ষ আলেমদের বৈঠক। সেখানেও ইসলামে ভাস্কর্য নির্মাণ করা জায়েজ নয় এ বিষয়টি পরিস্কার করে উল্লেখ করেন। তাদের পক্ষ থেকে সরকারের সাথে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়। ইতিমধ্যে তারা গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন। চিঠিতে ঢাকার ধোলাইপাড়ে শেখ মুজিবের ভাস্কর্যের বিকল্প কিছু করার ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।

সবশেষ গত (১০ ডিসেম্বর) বৃহস্পতিবার হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। সেখানে তারা বলেন, ভাস্কর্য ইস্যুতে আমরা নতুন কোনো কর্মসূচি দিতে চাইনা। বরং আমাদের দায়িত্ব ছিল সরকারকে জানিয়ে দেয়া। আমরা সরকারকে ইসলামের পরিস্কার বিধান জানিয়ে দিয়েছি। এখন সরকার যদি ভাস্কর্য নির্মাণ করতে চায়, আমরা বাধা দিতে পারবো না। ভাস্কর্য নির্মাণে বাধা দেয়া আমাদের কাজ নয় বরং ভাস্কর্য নির্মাণ করা হারাম এটা অবগত করাই ছিলো আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য।

এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে এখন সরকার এবং ইসলামপন্থীরা-দুই পক্ষই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চান বলে জানা গেছে বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ