বুধবার, ১৫ মে ২০২৪ ।। ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ৭ জিলকদ ১৪৪৫


মাদরাসা শিক্ষার্থীদের স্যোশাল মিডিয়া আসক্তি: কিভাবে দেখছেন আলেমরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাদরাসা শিক্ষার্থীদের স্যোশাল মিডিয়া আসক্তি নতুন বিষয় নয়। স্যোশাল মিডিয়া নামক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের সাথে সাথে এর প্রতি আগ্রহও তৈরি হচ্ছে তাদের। আর দিন দিন প্রযুক্তি যত সহজ হচ্ছে, মাদরাসায় এর ব্যবহারও সমানতালে বেড়ে চলছে। বর্তমানে এর ব্যবহার এতই ভয়ানক আকার ধারণ করছে যে, এটি উপকারের চেয়ে অপকারই বয়ে আনছে বেশি। বেসরকারি একটি এনজিওর প্রতিবেদনে দেখা গেছে প্রায় ৬৬ শতাংশ মাদরাসা ছাত্র ও ৫৬ শতাংশ মাদরাসা ছাত্রী দিনরাতের প্রায় ৩ ঘন্টা স্যোশাল মিডিয়ায় ব্যয় করছেন। এতে পড়াশুনার প্রতি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ যেমনি কমছে তেমনি ক্ষতি হচ্ছে ভবিষতের। এর থেকে উত্তরণের পথ, ক্ষতিকর দিক, সুবিধা অসুবিধা এসব নিয়ে দেশের বিশিষ্ট তিনজন আলেমের সাথে কথা বলে প্রতিবেদনটি সাজিয়েছেন মোস্তফা ওয়াদুদ।।

মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। দেশসেরা বক্তা ও রাজনীতি সচেতন মানুষ। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম ‘মাদরাসা শিক্ষার্থীদের স্যোশাল মিডিয়া আসক্তি থেকে মুক্তি কিভাবে পেতে পারে? নতুন করে জন্ম নেয়া এ স্যোশাল মিডিয়া আসক্তিকে আপনি কিভাবে দেখেন?

উত্তরে তিনি বলেন, ছাত্র জীবনে আদর্শ ছাত্র হওয়ার জন্য মোবাইল ব্যবহার একটি প্রতিবন্ধক বিষয়। এর থেকে উত্তরণের জন্য সারাদেশের মাদরাসাগুলোতে একযোগে নির্দিষ্ট একটি আইন বা কানুন করা যেতে পারে। সেটা মোবাইল পাওয়া গেলে মাদরাসা থেকে বহিস্কার, অথবা পরামর্শ সাপেক্ষে অন্য যে কোনো আইন তৈরি করে তার প্রয়োগ করা যেতে পারে।

কিন্তু বর্তমানে স্যোশাল মিডিয়ার কল্যাণের কথা বলে থাকেন অনেকে। ‘সমসাময়িক বিষয়ে জ্ঞান না রাখলে সে মূর্খ।’ ইফতার কিতাবে এমন একটি মূলনীতিও রয়েছে। তাহলে স্যোশাল মিডিয়াকে উপেক্ষা করার সুযোগ কোথায়?

এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমরা আদর্শ ছাত্রদের মোবাইল বা স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারে নিষেধ করছি। যখন সে একটা পর্যায়ে যাবে। যেমন ছাত্র থেকে শিক্ষক হবে তখন ব্যবহার করুক। অথবা মাদরাসা বন্ধের সময়গুলোতে ব্যবহার করুক। তাতে তো আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু মাদরাসা হলো নির্দিষ্ট কিছু বিষয় লেখাপড়ার জায়গা। নির্দিষ্ট বিষয়ের বাইরে জানতে যাওয়া আদর্শ ছাত্রের লক্ষণ হতে পারে না।

মাদরাসায় মোবাইল, ট্যাব কিংবা স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারের ক্ষতির দিকগুলো কী কী জানতে চাইলে এ বক্তা বলেন, ক্ষতির দিক অনেক। এটাকে কোনো পরিমাণে বেঁধে দিলে হালকা হয়ে যাবে। ধরুন ছাত্রটি সারারাত স্যোশাল মিডিয়ায় কাটিয়েছে। সকালে ক্লাসে বসে ঝিমানো শুরু করলো। সে পড়াও ধরলো না। কিছু বুঝলোও না। পরের দিন পড়াও শুনাতে পারলো না। এতে করে সে ভালো আলেম হতে পারবে না। এরকম আরো অনেক দিক আছে।

স্যোশাল মিডিয়ার ব্যবহার এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় চলে গিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে স্যোশাল মিডিয়া থেকে বিরত থাকা কতটা সঠিক সিদ্ধান্ত বলে আপনি মনে করছেন? কেননা মাদরাসা সম্পর্কে একটি কথা বলা আছে যে, উনারা বুঝেন তবে বহুদিন পর। যেমন, ইংরেজি শিক্ষা। শুরুতে হারাম ফতোয়া দেয়া হলেও বর্তমানে খুব জোর দেয়া হয় এ শিক্ষার প্রতি।

আমরাতো স্যোশাল মিডিয়া থেকে বিরত থাকার কথা বলছি না। তাছাড়া স্যোশাল মিডিয়া শুধু অপকার বয়ে আনে, কোনো উপকার করে না; বিষয়টি এমনও নয়। কেননা স্যোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত মানুষের খুব কাছাকাছি পৌঁছানো যায়। ইসলাম প্রচারে একটি শক্তিশালী মাধ্যমও হতে পারে এটি। সুতরাং আমরাতো ব্যাপকভাবে নিষেধ করছি না। বরং নির্দিষ্ট করে শুধু মাদরাসার চার দেয়ালের ভিতরে এসব ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে বলছি। অতএব মাদরাসা শিক্ষার্থীরা সময় ফুরিয়ে যাওয়ার পরে বুঝে অভিযোগটি সঠিক নয়।

জেনারেল শিক্ষার্থীদের অনেকেই সাইবার অপরাধে জড়িত। যেটা প্রতিদিনের পত্রিকাগুলোতে আমরা দেখতে পাই। এখন মাদরাসা শিক্ষার্থীরা কিভাবে সাইবার আক্রমণ থেকে নিজেদের ও ইসলামের হেফাজত করতে পারে?

এ ব্যাপারে তাঁর পরামর্শ জানতে চাইলে বলেন, একটা সন্তান যখন মাদরাসায় থাকে। তখন উস্তাদের নেগরানিতে থাকে। সুতরাং তখন সে সাইবার অপরাধ থেকে বিরত থাকবে। আর যখন বাসায় থাকবে তখন সে বাবা-মায়ের নেগরানিতে থাকে। সেখানেও সাইবার অপরাধ থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি এর ভয়াবহ আক্রমণ থেকে হেফাজতে থাকবে।

কথা বলেছিলাম লালবাগ মাদরাসার মুহাদ্দিস মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজীর সাথে। তিনিও স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। গদবাঁধা ব্যবহার থেকে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বিরত থাকার প্রতি মত দিয়েছেন।

মাদরাসা শিক্ষার্থীদের স্যোশাল মিডিয়া আসক্তি ও এর থেকে উত্তরোণের পথ কি হতে পারে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, স্যোশাল মিডিয়া আজকাল ভাইরাসের মতো সর্বত্র ছড়িয়ে গিয়েছে। বিষের মতো দেখা দিয়েছে স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার। বর্তমান যুগ হিসেবে যদিও স্যোশাল মিডিয়ার প্রয়োজন অনেক। কিন্তু এর অপব্যবহার রোধও জরুরি।

স্যোশাল মিডিয়া থেকে উত্তরণের জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম বেঁধে দেয়া যেতে পারে। আপনি দেখবেন আমাদের দেশের অফিস আদালতেও অফিস সময়ে স্যোশাল মিডিয়ার ব্যবহার নিষিদ্ধ। তাই নির্দিষ্ট নিয়ম বেঁধে দিলে মাদরাসার ছাত্ররা এর আসক্তি থেকে মুক্তি পাবে বলে আমি মনে করি।

স্যোশাল মিডিয়ার ব্যবহার এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় চলে গিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে স্যোশাল মিডিয়া থেকে বিরত থাকা কতটা সঠিক সিদ্ধান্ত বলে আপনি মনে করছেন? কেননা মাদরাসা সম্পর্কে একটি কথা বলা আছে যে, উনারা বুঝেন তবে বহুদিন পর। যেমন, ইংরেজি শিক্ষা। শুরুতে হারাম ফতোয়া দেয়া হলেও বর্তমানে খুব জোর দেয়া হয় এ শিক্ষার প্রতি। আসলে বিরত থাকার কথাও বলছি না আমরা। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর সে স্যোশাল মিডায়া ব্যবহার করে ইসলামের সেবায় এগিয়ে আসুক সেটা আমরাও চাই। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার করি। তবে সেটা ছাত্র যামানায় করা হয়নি। এখন স্যোশাল মিডিয়ার ব্যবহার ক্যান্সারে রুপ নিয়েছে। এই ক্যান্সারজনিত সমস্যা থেকে বিরত থাকার কথা বলছি আমরা।

জেনারেল শিক্ষার্থীদের অনেকেই সাইবার অপরাধে জড়িত। যেটা প্রতিদিনের পত্রিকাগুলোতে আমরা দেখতে পাই। এখন মাদরাসা শিক্ষার্থীরা কিভাবে সাইবার আক্রমণ থেকে নিজেদের ও ইসলামের হেফাজত করতে পারে? এ ব্যাপারে আপনি কি পরামর্শ দিবেন?

অপরাধীরা সব জায়গায়ই অপরাধ করে। এখন তারা স্যোশাল মিডিয়ায় অপরাধ করে। স্যোশাল মিডিয়ার পূর্বেও তারা ভিন্ন প্রক্রিয়ায় অপরাধ করে বেড়াতো। অতএব সাইবার অপরাধ বা সাইবার আক্রমণ করে যারা ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদঘার করছে। তাদের থেকে আমাদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এবং আমাদের জায়গা থেকে যথাযথভাবে তার সমুচিত জবাব দিতে হবে।

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ