রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫ ।। ১৭ কার্তিক ১৪৩২ ।। ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে তাবলিগের শুরায়ি নেজাম ঘূর্ণীঝড় মেলিসায় ক্যারিবীয় অঞ্চলে ৫০ জনের মৃত্যু জয়পুরহাটে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে বিএনপি নেতা সচিবালয়ে ইবতেদায়ি শিক্ষকদের প্রতিনিধি দল পঞ্চগড়ে বন্ধ হাসপাতাল চালু করতে জামায়াতের ১০ লাখ টাকা সহায়তা অবশেষে শাপলা কলি প্রতীকই নিচ্ছে এনসিপি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা এনসিপির, ঢাকার আসনে লড়বেন নাহিদ পরিবেশকে প্রভাবমুক্ত রেখে সমন্বিত যোগাযোগ ব‍্যবস্থা তৈরির আহ্বান জাকির নায়েকের বাংলাদেশ সফর ইস্যুতে যা বললেন ধর্ম উপদেষ্টা অবিলম্বে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করুন: জাতীয় মূল্যবোধ সংরক্ষণ পরিষদ

পরোপকারীরা আল্লাহর প্রিয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি আবু দাউদ আরকামী।।

পার্থিব দুনিয়ায় মানুষ মানুষের সহযোগী। বিপদে-আপদে একে অন্যের পাশে দাঁড়াবে এমনটাই দাবি মানবতার। ইসলামে পরোপকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা ঈমানের দাবি এবং আল্লাহ তা‘আলার অত্যন্ত পসন্দনীয় কাজ।

এ জীবন শুধু নিজের ভোগ-বিলাসিতার জন্য নয়; বরং গোটা সৃষ্টির উপকার সাধন এবং কল্যাণকামিতা প্রত্যেক মানুষের অন্তরে জাগ্রত থাকবে, এটাই ইসলামের বিধান।

এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে- “যে ব্যক্তি মানুষের বেশি উপকার করে, সেই শ্রেষ্ঠ মানুষ।”

অন্য হাদীসে এসেছে- ‘আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে।’

এ হাদীস জানাচ্ছে- পরোপকারের লাভ কেবল আখিরাতেই নয়, দুনিয়ায়ও পাওয়া যায়। তবে তা পাওয়া যায় কেবল তখনই, যখন লক্ষবস্তু হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি।

নিজের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে পারে সবাই, কিন্তু পরের জন্য কিছু করার মতো উদারতা ও মহত্ব ক’জনের আছে। যারা অন্যের উপকার করে তারা আল্লাহর প্রিয়। আল্লাহ যেমন উদার ও মহামহিম তেমনি এই গুণ যার মধ্যে আছে তাকে পছন্দ করেন। পরোপকার দ্বারা সহজেই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়।

মানুষের সৎগুণাবলির অন্যতম হচ্ছে পরোপকার। পরোপকার হচ্ছে, অন্যের প্রয়োজনে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। বিপদে-আপদে পাশে থাকা ও যথাসম্ভব সহযোগিতা করা। সামাজিক জীব মানুষ। একে অপরের সহযোগিতা ছাড়া জীবনযাপন করা প্রায় অসম্ভব। যখন কোনো সমাজে একে অপরের প্রতি সহযোগিতার মনোভাব হ্রাস পায়, সে সমাজের মানুষ সব দিক দিয়েই পিছিয়ে পড়ে। সে সমাজে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, শান্তি হ্রাস পায়। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ কমে যায়। সম্পর্কের ক্ষেত্রে দূরত্ব তৈরি হয়।

এমন অনেক সমস্যা আছে, যা একা কোনো ব্যক্তির পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। তবে তার সঙ্গে যদি এক বা একাধিক ব্যক্তির শ্রম ও প্রচেষ্টা জড়িত হয়, তাহলে ওই সব সমস্যার সমাধান সহজেই হয়ে যায়।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের সঙ্গে সদয় ব্যবহার ও দয়া করে না, আল্লাহ তায়ালাও তার সঙ্গে সদয় ব্যবহার এবং দয়া দেখাবেন না।’ অন্য হাদিসে আছে, ‘আমার উম্মতের বহু লোক নামাজ ও রোজার আধিক্যের কারণে জান্নাতে যাবে না। বরং আল্লাহ তায়ালা তাদের অন্তরের পরিশুদ্ধতা, আন্তরিকতা, দানশীলতা ও সব মুসলমানের প্রতি দয়াদ্র হওয়ার কারণে তাদের প্রতি করুণা করবেন। ফলে তারা জান্নাতে যাবে।’

পরোপকারী হতে হলে অনেক ধন-সম্পদের মালিক হতে হবে—এমন ধারণা অমূলক। বরং ইচ্ছাটাই এখানে মূল প্রতিপাদ্য। প্রত্যেক মানুষই তার নিজ নিজ অবস্থানে থেকে পরোপকারী হতে পারে। কেননা পরোপকার নির্দিষ্ট কোনো সীমারেখায় আবদ্ধ নয়। পরোপকার অনেক ধরনের। পরোপকারী হতে পারে ধর্মীয়, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে। হতে পারে অর্থ দিয়ে, শক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে এবং বিদ্যা দিয়ে। আল্লাহ তা‘আলা একেকজনকে একেকরকম যোগ্যতা দিয়েছেন। যার যেই যোগ্যতা আছে, সে যদি তার সেই যোগ্যতাকে সৃষ্টির সেবায় নিয়োজিত করে, তবেই তার সেই যোগ্যতা সার্থক হয়। এর দ্বারা সে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানে সাফল্যমণ্ডিত হয়। বস্তুত আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে যে-কোন যোগ্যতা দেন এজন্যে যে, সে তা মানব-সেবায় নিয়োজিত করে নিজ জীবনকে সফল করে তুলবে।

আমাদের চারপাশে কত রকম মানুষের বসবাস! তাদের জীবনে রয়েছে নানা সমস্যা। তাদের সেই সমস্যা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়াও তো পরোপকার।

পরোপকার মানুষকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে। পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব মনীষী স্মরণীয় হয়ে আছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই ছিলেন পরহিতৈষী। আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন পরোপকারীর মূর্তপ্রতীক। মানুষের উপকার করতে পারলে তিনি খুব আনন্দিত হতেন। অপরের দুঃখে তিনি দুঃখিত হতেন। কারো চোখে পানি দেখলে তিনি কেঁদে ফেলতেন। নিজে না খেয়ে, না পরে অন্যকে খাওয়াতেন, পরাতেন। তেমনি এই শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন সাহাবায়ে কেরাম (রা.)। সাহাবায়ে কেরাম যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করলেন তখন মদিনার আনসাররা তাদের অর্থ-সম্পদ, জায়গা-জমি, বাড়িঘরসহ সব ধরনের উপকরণ দিয়ে সাহায্য করে পরোপকারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।

হাদিসে আছে, ‘মুসলমান মুসলমানের ভাই, সে তার ওপর জুলুম করবে না এবং তাকে ধ্বংসের দিকে ফেলে দেবে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের অভাবে সাহায্য করবে, আল্লাহ তায়ালা তার অভাবে সাহায্য করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার বিপদগুলোর কোনো একটি বিপদ দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন।’ এ জন্য এই মহৎ গুণটি প্রত্যেক মুসলমানের মধ্যে থাকা চাই।

তাই আসুন আমরা সকলেই পরোপকারী হই। অপরের বিপদে তার পাশে দাঁড়াই। অন্যের প্রয়োজনে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করি। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সকলকে পরোপকার করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ