হামিম আরিফ: বেশ কয়েকদিন টঙ্গীর ময়দানে তাবলিগের আমল, ইবাদত বন্ধ থাকার পর পুনরায় ফিরছে। টঙ্গি ময়দানের মসজিদ ও গোদাম ইতোমধ্যেই পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
তবে ইজতেমা মাঠে নির্বাচনের আগে বড় কোনো অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে।
শুক্রবার থেকে ইজতেমা ময়দানে ফের আমল শুরু হয়েছে বলে আওয়ার ইসলামকে জানিয়েছেন কাকরাইল শুরা সদস্য হাফেজ মাওলানা জোবায়ের আহমদের ছেলে মাওলানা হানজালা।
গত ১ ডিসেম্বর তাবলিগের আমির দাবিকারী বিতর্কিত মাওলানা সাদের উগ্র অনুসারীরা মাঠে নৃশংস হামলা চালানোর পর মাঠের দায়িত্ব নেয় প্রশাসন। এতদিন ইজতেমা ময়দানসহ সেখানকার মসজিদ মাদরাসাও বন্ধ ছিল।
মাওলানা হানজালা আওয়ার ইসলামকে জানান, শুক্রবার মাঠে জুমার নামাজ আদায় হয়েছে। শবগুজারি পয়েন্টে আগের আমল চালু হচ্ছে ইনশাল্লাহ।
জামিয়া ইসলামিয়া গাওয়াইর মাদরাসার মুহাদ্দিস ও তাবলিগ জামাতের বর্তমান মিডিয়া কো অর্ডিনেটর মুফতি জহির ইবনে মুসলিম আওয়ার ইসলামকে জানান, টঙ্গীর টিনশেড মসজিদে আগের মতো আমল হবে ইনশাল্লাহ। তবে মাঠ এখনো প্রশাসনের অধীনেই থাকবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মাঠে অনুষ্ঠান করা যাবে না। তবে নির্বাচনের পর পর মাঠ পুরোপুরি আলেম ও তাবলিগের মুরব্বিদের হস্তান্তর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা।
গত ১ ডিসেম্বর ইজতেমা মাঠ প্রস্তুতের জন্য মাঠে অবস্থান করা তাবলীগের সাথী ও উলামায়ে কেরামসহ মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ওপর সাদপন্থীরা নৃশংস হামলার চালায়। সকাল ১১ টায় ইজতেমা মাঠের গেট ভেঙে প্রবেশ করে তারা লাঠি, রড ও দা নিয়ে হামলে পড়ে মাঠে ইবাদতরত মুসল্লি ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের উপর।
সাদপন্থীদের হামলায় গুরুতর আহত এক মুক্তিযোদ্ধার আকুতি!
এতে মৃত্যুবরণ করে তাবলীগের পুরনো সাথী ইসমাইল মন্ডল। সহস্রাধিক মাদরাসা শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। সেদিনের আহতদের অবস্থার বিবরণ দিয়ে টঙ্গী হাসপাতালের ডাক্তার বলেন, এত রক্তাক্ত জখমি রোগী আগে কখনো টঙ্গীতে আসেনি।
হামলার দিন বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আলেম ও তাবলীগের মুরব্বিদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ইজতেমা মাঠ প্রশাসনের হাতে থাকবে এবং নির্বাচনের আগে কোনো অনুষ্ঠান হবে না।
তবে পরদিন থেকেই এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সারাদেশে উলামায়ে কেরাম প্রতিবাদ মিছিল করেন। তারা ইজতেমায় নামাজ, ইবাদতের আমল ফেরাতে দ্রুত তাবলিগের মুরব্বি ও উলামায়ে কেরামের দায়িত্বে ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানান।
এর আগে ৬ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের জরুরি বৈঠকেও টঙ্গি ময়দানকে মসজিদ মাদরাসা সবগুজারির জন্য অবমুক্ত করে হামলা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান উলামায়ে কেরাম।
জানা যায়, ইজতেমা মাঠে এখনো সাদপন্থীদের নৃশংসতার চিহ্ন রয়ে গেছে। মাল সামানা ও চাটাইগুলো এখনো উপড়ানো। এগুলো সরাতে বেশ কয়েকদিন লাগতে পারে। তাই ইজতেমা মাঠের নিয়মিত আমল ফিরতে কয়েকদিন সময় লাগবে।
উল্লেখ্য, আগামী ৭ ডিসেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত টঙ্গী ময়দানে তাবলিগ জামাতের নিয়মতান্ত্রিক জোড় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ১৮ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে তিন দিনের ইজতেমা। সে কারণে মাঠ প্রস্তুতের কাজ করছিলেন তাবলীগের সাথী ও মাদরাসা শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের ওপর হামলা করে সাদপন্থীরা।
মাওলানা সাদ কান্ধলভী তাবলিগ জামাতের একজন শীর্ষ মুরব্বি। তবে গত কয়েক বছর ধরে তার নিজেকে আমির দাবি ও নবীর শানে বিতর্কিত কিছু বক্তব্যসহ কিছু ভুল মাসআলা দেয়ায় তা সংশোধনের চেষ্টা করেন ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দসহ বাংলাদেশের উলামায়ে কেরাম।
কিন্তু এসব ভুল থেকে এখন পর্যন্ত পরিস্কারভাবে ফিরে না এসে নিজের অবস্থানে অটুট আছেন।
এ দিকে উলামায়ে কেরাম ও তাবলীগের বাংলাদেশের মুরব্বিগণ ঘোষণা দিয়েছেন, মাওলানা সাদ তার ভুল থেকে ফিরে আসলে সবাই তাকে মানবেন। কিন্তু এসব ভ্রুক্ষেপ না করে নিজের অবস্থান অটুট রাখায় তাবলীগ জামাতে চলমান এ সঙ্কট।
চলমান এ পরিস্থিতিতে উলামায়ে কেরাম ঐক্যমত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মাওলানা সাদ কান্ধলভী তার ভুল থেকে ফিরে না এলে তাকে বাংলাদেশে আসতে দেয়া হবে না এবং তার মতও প্রচার করতে দেয়া যাবে না। বাংলাদেশের তাবলীগের মারকাজ কাকরাইল সে অনুযায়ী নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সাদপন্থীদের হামলায় গুরুতর আহত এক মুক্তিযোদ্ধার আকুতি!
ইজতেমা মাঠের মাদরাসা শিক্ষকের করুণ কাহিনী!
আরআর
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        