আওয়ার ইসলাম:বান্দার সঙ্গে আল্লাহর সেতুবন্ধনের উপায় হলো হজ পালন করা। যাদের আর্থিক ও শারীরিক সামর্থ্য রয়েছে, হজ তাদের জন্য ফরজ ইবাদত। হজের আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা করা, সফর, ভ্রমণ করা। ইসলামি পরিভাষায় হজ হলো নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত স্থানে বিশেষ কিছু কর্ম সম্পাদন করা। হজের নির্দিষ্ট সময় হলো আশহুরে হুরুম বা হারাম মাসগুলো তথা শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ; বিশেষত ৮ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত ৫ দিন।
বিশ্বের নানা প্রান্তের, নানা ভাষার মানুষ হজ পালনের জন্য সৌদি আরব গমন করেন। হজ ও উমরার সময় ব্যবহৃত হয় কিছু আরবি পরিভাষা, যা থাকলে হজ পালন অনেকটাই সহজ হয়, হজের আচার-আচরণ পালনে ভিন্ন অনুভূতি জাগে মনে। যেহেতু পরিভাষাগুলো আরবি এবং বহুল ব্যবহৃত, তাই সেসব পরিভাষা সম্পর্কে আজকে আলোচনা করা হলো। আশা করি, অনুসন্ধানী হজযাত্রীদের এগুলো উপকারে আসবে।
ইহরাম: হারাম বা নিষিদ্ধ করে নেওয়া। হজ ও ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট কিছু কথা ও কাজ নিজের ওপর নিষিদ্ধ করে নেওয়ার সংকল্প করা। বানানভেদে অনেকেই এটাকে এহরামও বলেন।
তাওয়াফ: প্রদক্ষিণ করা। পবিত্র কাবার চারপাশে প্রদক্ষিণ করাকে তাওয়াফ বলে।
ইজতিবা: ডান বগলের নিচ দিয়ে চাদরের প্রান্ত বাম কাঁধের ওপর উঠিয়ে রাখা। এভাবে ডান কাঁধ খালি রেখে উভয় প্রান্ত বাম কাঁধের ওপর ঝুলিয়ে রাখা। যে তাওয়াফের পর সাঈ আছে পুরুষের জন্য সে তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করা সুন্নত। আর ওই তাওয়াফের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইজতিবা অবস্থায় থাকা পৃথক একটি সুন্নত।
রমল: ঘন পদক্ষেপে দ্রুত হাঁটা। হজ বা ওমরার প্রথম তাওয়াফের সময় প্রথম তিন চক্কর ডান কাঁধ খোলা রেখে বীরের বেশে দ্রুততার হাঁটতে হয়, এটাকে রমল বলে।
তাওয়াফে কুদুম: কদুম অর্থ আগমন করা। সুতরাং এর অর্থ আগমনি তাওয়াফ। মিকাতের বাইরের লোকেরা যখন হজ বা ওমরার উদ্দেশ্যে কাবা শরিফে আসেন, তখন তাদের বায়তুল্লাহ তথা কাবার সম্মানার্থে এ তাওয়াফটি করতে হয়, এটি সুন্নত।
তালবিয়া: সাড়া দেওয়া। আল্লাহতায়ালার ডাকে সাড়া দিয়ে হজ বা উমরার উদ্দেশ্যে আগমনকারীকে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক...’ বলে যে কথাগুলো পাঠ করতে হয় তাকে তালবিয়া বলে।
মাকামে ইবরাহিম: হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের দাঁড়ানোর স্থান। একটি বড় পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে হজরত ইবরাহিম (আ.) কাবা নির্মাণের কাজ করেন। ওই পাথরে তার পদচিহ্ন পড়ে যায়, যা এখনও বর্তমান। কাবা শরিফের সামনে অবস্থিত এই পাথরকে মাকামে ইবরাহিম বলা হয়।
মাতাফ: তাওয়াফ করার স্থান। কাবা ঘরের চারদিকে সাদা পাথর বিছানো এলাকাকে মাতাফ বলা হয়। এই স্থান দিয়ে তাওয়াফ করা হয়।
মুলতাজাম: হাজরে আসওয়াদ (কালো বেহেশতি পাথর) ও রুকনে ইয়ামানির মাঝখানে অবস্থিত কাবা ঘরের স্থান, যা দোয়া কবুলের স্থান হিসেবে পরিচিত। তাই এখানে সবসময় লোকজনের ভিড় লেগে থাকে।
রুকন: স্তম্ভ, হজের রুকনের অর্থ হজের স্তম্ভগুলো। যার ওপর হজের ভিত্তি। এর কোনোটি বাদ গেলে হজ আদায় হয় না।
রুকনে ইয়ামানি: রুকনে ইয়ামানির অর্থ কাবার সেই স্তম্ভ যেটি ইয়ামান দেশের দিকে স্থাপিত।
হাতিম: কাবাসংলগ্ন উত্তর পাশে খোলা জায়গা, যা হজরত ইবরাহিম (আ.) কর্তৃক নির্মিত মূল কাবার অংশ ছিল।
মাসআ: সাঈ করার স্থান। সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী জায়গা, যেখানে লোকজন সাঈ করে।
সাঈ: দৌঁড়ানো। এখানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝখানে সাতবার যাওয়া আসা করাকে বোঝায়।
হলক: হজ বা উমরার কাজ সম্পন্ন হলে মাথার চুল কামাতে বা ছোট করতে হয়। মাথা কামানোকে হলক এবং চুল ছোট করাকে কসর বলা হয়।
কসর: সংক্ষিপ্ত করা। চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজগুলো দুই রাকাত করে আদায় করা।
জাবালে আরাফা: আরাফায় অবস্থিত পাহাড়, যাকে সাধারণ মানুষ জাবালে রহমত বা রহমতের পাহাড় বলে থাকে।
তাওয়াফে জিয়ারা: ১০ জিলহজ কোরবানি ও হলক-কসরের পর থেকে ১২ জিলহজের মধ্যে কাবা শরিফের তাওয়াফ করাকে তাওয়াফে ইফাজা বা তাওয়াফে জিয়ারা বলে। এ তাওয়াফ ফরজ।
আইয়ামে তাশরিক: জিলহজ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখকে আইয়ামে তাশরিক বলা হয়।
ইয়াওমুত তারবিয়া: জিলহজ মাসের ৮ তারিখ মিনায় যাওয়ার দিন।
ইয়াওমু আরাফা: আরাফা দিবস। জিলহজ মাসের ৯ তারিখ সূর্য হেলে যাওয়ার পর থেকে সূযাস্ত পর্যন্ত ফরজ হিসেবে আরাফায় অবস্থান করতে হয়। এ দিনকে ইয়াওমু আরাফা বলে।
উকুফ: অবস্থান করা। আরাফা ও মুজদালিফায় অবস্থান করাকে যথাক্রমে উকুফে আরাফা ও উকুফে মুজদালিফা বলা হয়।
জামরা: শাব্দিক অর্থ পাথর। মিনায় অবস্থিত প্রতীকী শয়তানের স্তম্ভকে পাথর মারার স্থান। জামরার সংখ্যা তিনটি।
দম: হজ ও উমরা আদায়ে ওয়াজিব ছুটে যাওয়া, ভুলত্রুটি হলে তার কাফফারাস্বরূপ একটি পশু জবাই করে গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হয়; এই পশু জবাইকে বলে দম দেওয়া।
ফিদইয়া: সাধারণ কোনো অপরাধ হয়ে গেলে তিনটি কাজের যে-কোনো একটি করতে হয়। ছয়জন মিসকিনকে এক কেজি দশ গ্রাম পরিমাণ খাবার প্রদান কিংবা তিন দিন রোজা পালন করা অথবা ছাগল জবাই করে গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া।
মাবরুর: হাদিসে কবুল হজকে মাবরুর হজ বলা হয়েছে।
হারাম: নিষিদ্ধ বস্তুকে হারাম বলে। আবার সম্মানিত স্থানকেও হারাম বলে। মক্কা ও মদিনার নির্দিষ্ট সীমারেখাকে হারাম বলে।
হালাল: ইহরাম শেষ হওয়ার পর মুক্ত অবস্থাকে হালাল হওয়া বলে।
রওজা: হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজ মিম্বর ও ঘরের মাঝখানের অংশকে রওজাতুম মিন রিয়াজিল জান্নাত বা জান্নাতের একটি বাগান বলে অভিহিত করেছেন। নবী করিম (সা.) তার ঘরের মাঝে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
হজ্জে আকবার: জিলহজের ১০ তারিখের দিনকে কোরআনে কারিমে ‘ইয়াওমুল হাজ্জিল আকবার’ তথা বড় হজের দিন বলা হয়েছে। জিলহজের ৯ তারিখ তথা আরাফা দিবস যদি শুক্রবারে হয় তাহলে আরাফা দিবস ও জুমাবার- উভয়ের ফজিলত লাভ হয়। তবে এটি আকবরি হজ নামে যে লোকমুখে প্রচলিত- ইসলামে এর কোনো ভিত্তি নেই, এগুলো মানুষের বানানো কথা।
আরও পড়ুন : এক নজরে পবিত্র হজের এ টু জেড
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        