আসছে নতুন বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই রাজধানীতে বড় ধরনের মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে দেশের দুই প্রভাবশালী ইসলামী দল—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব সমাবেশ থেকে দেশবাসীর উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা দিতে চায় দল দুটি।
দলীয় সূত্র জানায়, সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সাংগঠনিক ও লজিস্টিক বিষয়ে একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শীর্ষ নেতারা জানান, সমাবেশ থেকে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যার বিচার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সর্বস্তরে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার জোরালো দাবি জানানো হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, সমাবেশের অনুমতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। জনভোগান্তি কমাতে ছুটির দিন বা বিশেষ সময় বিবেচনায় রাখা হতে পারে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই সমাবেশগুলো ঘিরে জনমনে বাড়তি কৌতূহল তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। বড় সমাবেশের মাধ্যমে প্রতিটি দলই রাজপথে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি ও জনসমর্থনের বার্তা দিতে চাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা এই মহাসমাবেশগুলোকে রাজনৈতিক ‘শক্তি প্রদর্শন’ হিসেবেও দেখছেন।
গত সেপ্টেম্বর থেকে অভিন্ন দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আটটি দল যুগপৎ আন্দোলনে রয়েছে। এসব দলের মধ্যে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও খেলাফত মজলিস। সর্বশেষ গত নভেম্বরে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করেছে জোটভুক্ত দলগুলো। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে অনুষ্ঠিতব্য গণভোটে ‘হ্যাঁ’-এর পক্ষে জনমত গঠনে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নতুন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে।
৩ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর মহাসমাবেশ
জামায়াতে ইসলামী আগামী ৩ জানুয়ারি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। দুপুরে অনুষ্ঠিতব্য এ সমাবেশে দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ও সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দেবেন।
দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম জানান, মহাসমাবেশ থেকে শরিফ ওসমান হাদি হত্যার বিচার, নির্বাচনের আগেই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং সর্বস্তরে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার দাবি জানানো হবে।
মহাসমাবেশ সফল করতে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার পৃথকভাবে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সভাপতিত্ব করেন।
৯ জানুয়ারি ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ
জামায়াতের সমাবেশের ছয় দিন পর, আগামী ৯ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) রাজধানীতে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটির দাবি-দাওয়া জামায়াতের দাবির সঙ্গে অভিন্ন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক শেখ ফজলুল করীম মারুফ জানান, সাম্প্রতিক এক বৈঠকে চরমোনাই পীর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। শরিফ ওসমান হাদি হত্যার সঙ্গে জড়িতদের এখনো আইনের আওতায় না আনতে পারার ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। একই সঙ্গে আগামী ৯ জানুয়ারি ঢাকায় মহাসমাবেশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এনএইচ/