মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫ ।। ৫ কার্তিক ১৪৩২ ।। ২৯ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম :
‘নির্বাচনে খুব একটা উৎসাহিত না, করলে তিনটি আসনের কোনোটিতে করব’ রুপসার ইলাইপুরে হাতপাখা প্রতীকের নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন নির্বাচনে এআইয়ের অপব্যবহার রোধে কেন্দ্রীয় সেল গঠনের ঘোষণা সিইসির ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মসজিদের অজুখানা নিয়ে সংঘর্ষ : আহত ২০, গ্রেফতার ৪ ইসলামি দলগুলো আদর্শিক দেউলিয়াপনার পরিচয় দেয় কেন? দলের অসুস্থ নেতাকে দেখতে গেলেন জমিয়ত সভাপতি দাবি না মানলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রা করবেন ইবতেদায়ি শিক্ষকরা কুয়েতে মসজিদে সিসি ক্যামেরা বসাতে বিশেষ নির্দেশনা ধর্ম অবমাননা কাঠামোগত ইসলামবিদ্বেষের ফল ইসরায়েলি বন্দিশালা থেকে ফেরত এলো ১৩৫ বিকৃত মরদেহ

‘হেফাজত আবারও ফিরে আসুক স্বমহিমায়’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| মাওলানা রুহুল আমীন সাদী ||

হেফাজত নিয়ে ব্যক্তিগত একপাক্ষিক স্মৃতিচারণ। হেফাজতের নতুন কমিটি হবে। হাটহাজারী মাদরাসায় মিটিং। এ উপলক্ষে একটা আলাদা সাজ সাজ রব চারদিকে। সবাই চট্টগ্রাম যাচ্ছেন। যাদের টাকা পয়সা ভালো তারা প্লেনে যাচ্ছেন। এবং ডমেস্টিক এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে পেছনে প্লেন রেখে একটা সেলফি তুলে জাতিকে এটা জানাতেও ভুলছেন না৷ 
যাদের টাকা কম তারা গাড়ি রিজার্ভ করে এবং যাদের আরও কম তারা বাসেই যাচ্ছেন। বেশ আনন্দদায়ক ঘটনা। 
বিশিষ্ট আলেম হাবীবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমী ফোনে বললেন,  চলেন ঘুরে আসি। হেফাজতের মিটিং দেখা হলো এবং রাস্তায় কথাবার্তাও বলা যাবে।

আমি বললাম, আমাকে তো দাওয়াত দেওয়া হয়নি কীভাবে যাব? কমিটি গঠনের প্রোগ্রামে দাওয়াত ছাড়া যাওয়া উচিত হবে না। 

মুফতি হাবীবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমী অবাক হলেন, আমার না যাওয়ার খবর শুনে। বললেন, আজিজুল হক ইসলামাবাদীর সাথে কথা বলেন। আপনি তো হেফাজতের কমিটিতে থাকার উচিত। 

বললাম,  আমার আগ্রহ নেই। এবং ফোন করে দাওয়াত নেওয়া আমার কাজের সাথে যায় না।  

অল্প কিছুক্ষণ পর ইউকে হেফাজতের এক নেতা ফোন করে ইসলামাবাদী ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করার জন্য নির্দেশ দিলেন। (উনি সিনিয়র ব্যক্তিত্ব তাই নির্দেশ দিলেন।) 

একটা পর্যায়ে আমি রাজি হই এবং আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে কল দিই হাটহাজারীর মিটিংয়ে উপস্থিত থাকার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। 

ইসলামাবাদী ভাই জানালেন, আপনি কমিটিতে ঢুকলে তো ভালোই হবে। কিন্তু আপনি এখন কোন রাজনৈতিক দলে অ্যাকটিভ আছেন জানান। আমরা সবগুলো রাজনৈতিক দলে কোটা ঠিক করে দিয়েছি। উনারা তালিকায় আপনার নাম দিলেই শুধু আমরা আপনাকে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটিতে রাখতে পারব৷ 

আমি বললাম, আমি রাজনৈতিক দলে অ্যাকটিভ নই। তিনি বললেন, তাহলে আল্লামা বাবুনগরীর রহ, খাদেমের সাথে কথা বলে দেখেন কিছু করা যায় কি না।  

আমি বললাম, হেফাজতের কমিটিতে থাকার জন্য তেমন আগ্রহ আমার নেই। 

সেদিন অনুভব করেছিলাম দলীয়ভাবে উদ্বাস্তু হলে এসব জায়গায় ঠাঁই হবে না। তার ঠাঁই হয় পল্টনের ফুটপাত এবং কফি হাউসে। 

আল্লামা আহমদ শফী রহ.-এর ইন্তেকালের পর নতুন এই কমিটি হলো। একেক দল থেকে যোগ্য অযোগ্য যে যাকে পেরেছেন কমিটিতে ঢুকিয়েছিলেন সেদিন। 

এর দুই সপ্তাহ পর মুফতি হারুন ইজহার ভাই আমাকে বলেছিলেন, আপনাকে এবং সৈয়দ শামছুল হুদা ভাইকে হেফাজতের কমিটিতে রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। 

গাজী ইয়াকুব ভাইকে সহকারী সমাজ সেবা সম্পাদক করা হয়েছিল। আমি শুধুমাত্র ইয়াকুব ভাইকে বলেছিলাম, আপনি না থাকলেই ভালো হতো। কারণ আপনার সামাজিক কাজ এই পদের চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ। 

এরপর অনেক দিন গত হলো। হেফাজতের উলামায়ে কেরামকে আওয়ামী সরকার গণহারে গ্রেফতার করল। কিছু নিরীহ আলেম গ্রেফতার হলেন৷ তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করলাম। অনেক কাহিনি। 

একদিন এনএসআই থেকে ফোন এলো আমার মোবাইলে। তারা হেড অফিসে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিলো।

বেশ ভয় পেলাম। কয়েকজনের সাথে অগ্রিম যোগাযোগ করলাম। উনারা বললেন, গ্রেফতার হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই যাবেন। যেহেতু আলেমদেরকে ধরা হচ্ছে৷ আশংকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। 

নির্দিষ্ট দিন দোয়া দুরুদ পড়ে হাজির হলাম শিল্পকলার পেছনে এনএসআই অফিসে। অনেক জিজ্ঞাসাবাদের পর অফিসার বললেন,  আপনাকে গ্রেফতার করার প্ল্যান ছিল। কিন্তু হেফাজতের কমিটিতে আপনার নাম নাই তাই বেঁচে গেলেন৷ 

আমার মনে পড়লো আজিজুল হক ইসলামাবাদী ভাই আমাকে হেফাজতের কমিটিতে রাখেন নাই। তাই আপাতত বেঁচে গেলাম। উনি বের হলে এক কাপ গরম কফি খাওয়ানোর নিয়ত করেছিলাম সেইদিন। সেই নিয়ত এখনো ফিলাপ হয়নি। 

এই হলো হেফাজতকেন্দ্রিক একটা অবস্থার চিত্র। নেতা নির্ধারণের সিস্টেমের একটা বাহ্যিক দিক। 

আজকের হেফাজত নিয়ে প্রচুর কথাবার্তা। হেফাজত সিন্ডিকেটের নিকট জিম্মি হয়ে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আরও অনেক কিছু। আমরা চাইবো হেফাজত আবারও ফিরে আসুক স্বমহিমায়।  

উলামায়ে কেরামের রক্তস্নাত এই কাফেলা দলবাজি মুক্ত হোক। এবং কেনাবেচার রাজনীতি থেকে ফিরে আসুক। নেতৃত্ব নির্ধারণ হোক যোগ্যতার ভিত্তিতে। কোনোভাবেই দলীয় পরিচয় থেকে নয়। 

যে হেফাজত আওয়ামী জামানায় এত রক্ত দিলো সেই হেফাজত আজকের নিরাপদ সময়ে কেনো নীরব সেই প্রশ্নের উত্তর বের করলেই সমাধান বেরিয়ে আসবে।

সিন্ডিকেটে সাময়িক সুখ পাওয়া যায় কিন্তু মাঠ পর্যায়ের শ্রদ্ধা থাকে না।

আলেম লেখক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ