দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ পরিপন্থী সকল সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে জাতীয় মূল্যবোধ সংরক্ষণ পরিষদ।
রোববার (২ নভেম্বর) দুপুর ২টায় অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক, সামাজিক ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, শিক্ষা-গবেষণা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও উলামায়ে কেরামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জাতীয় নেতৃত্ববৃন্দ।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব, সাংবিধানিক পরিচিতি, সামাজিক রীতি-নীতি ও জনগণের চেতনার ভিত্তি হলো ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ। এই মূল্যবোধকে শিক্ষাব্যবস্থা থেকে সরিয়ে ফেলা হলে তা প্রজন্মকে নৈতিকভাবে দুর্বল ও আত্মপরিচয়হীন করে তুলবে।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মওলানা এটিএম মাসুম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব, অধ্যক্ষ ইউনুস আহমদ, জামাআতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুফতি রেজাউল কারীম আবরার, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজি ও সোশ্যাল অ্যাকটিভিস্ট রুহুল আমীন সাদীসহ অনেকে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী জেনারেল সেক্রেটারি মওলানা এটিএম মাসুম বলেন, গান-বাজনা ইসলাম সম্মত নয়। শতভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীর সন্তানদের নাচ-গানের শিক্ষা দিয়ে নৈতিক মূল্যবোধ ধ্বংস করা যাবে না। যদি এই জাতি বিধ্বংসী সিদ্ধান্ত বাতিল না করা হয়, আমরা গণমানুষকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নামতে বাধ্য হবো। এ সিদ্ধান্ত ইসলামি চেতনা ও জুলাই সনদের শহীদদের ত্যাগের পরিপন্থী। কারণ জুলাইয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলিম সন্তানরাই জীবন দিয়েছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনূস আহমেদ বলেন, সমাজে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, ঘুষ-অনিয়ম—এসবের অন্যতম কারণ হলো ধর্মীয় শিক্ষার অভাব। নৈতিক, সুশিক্ষিত এবং আলোকিত জাতি গঠনের জন্য ধর্মীয় শিক্ষকের ভূমিকা অপরিহার্য। তাই আমরা দাবি করছি— গানের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে অবিলম্বে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। নইলে একটি সুন্দর দেশ গঠন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সূরা সদস্য শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ইতোমধ্যে আমরা লক্ষ্য করেছি, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারে কিছু শাহবাগী ও ধর্মবিরোধী মানসিকতার তথাকথিত সুশীল ব্যক্তিদের প্রভাবে ধর্মপ্রাণ মানুষের ন্যায্য দাবি উপেক্ষিত হচ্ছে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই—এ দেশের মানুষ ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী। তাই অবিলম্বে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। অস্থিতিশীলতার দোহায় দিয়ে আমাদের থামাতে পারবেন না, এর দায় আপনাদেরই নিতে হবে। আবু সাঈদ, মুগ্ধদের নতুন বাংলাদেশে ধর্মবিদ্বেষ চলবে না।
জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুফতি রেজাউল কারীম আবরার বলেন, আমরা দেখছি বিদ্যালয়গুলোতে নামমাত্র ইসলাম শিক্ষা বই থাকলেও কিন্তু পড়ানোর মতো ধর্মীয় শিক্ষক নেই। ইসলাম ধর্ম পড়ায় হিন্দু শিক্ষক অথবা যিনি কোরআনও শুদ্ধভাবে পড়তে পারেন না। ৫ আগস্টসহ ফ্যাসিস্টবিরোধী সকল আন্দোলন ও এ দেশের গণমানুষের যেকোনো অধিকার প্রতিষ্ঠায় এ দেশের ঈমানদার মুসলমানরাই অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। অথচ আজ সেই ধর্মপ্রাণ মানুষদের মৌলিক দাবি উপেক্ষা করা হচ্ছে। পরিষ্কার ভাষায় বলছি, অবিলম্বে গানের শিক্ষক নিয়োগসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিল করুন এবং সারাদেশে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
অনুষ্ঠানে মূল্যবোধ সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও অন্যান্য বক্তারা বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবিলম্বে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ, ধর্মীয় মূল্যবোধ বিরোধী সকল সিদ্ধান্ত বাতিল এবং ট্রান্সজেন্ডারসহ সমাজ ও পরিবার বিধ্বংসী সকল মতবাদ অনুপ্রবেশের পথ বন্ধ করতে হবে। নইলে জাতীয় মূল্যবোধ সংরক্ষণ পরিষদ সামনে আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।
আরএইচ/