।। কে.এম. সুহেল আহমদ, কাতার।।
কাতারের একমাত্র বাংলাদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এম.এইচ.এম. স্কুল ও কলেজের পরিচালনা পর্ষদ ও অভিভাবক-শিক্ষক পরিষদের নির্বাচন আগামী ২৭ জুন। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে পরিচালনা পর্ষদ বহাল রেখে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাসহ নানা অনিয়মের তালিকা প্রদান করে অবৈধ নির্বাচন বন্ধ ও সরকার ঘোষিত নিয়মের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার দাবিতে কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামের মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ ও অভিভাবক-শিক্ষক পরিষদের প্রার্থী ও সচেতন অভিভাবকদের একটি প্রতিনিধি দল।
তারা আশা করেন ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মাদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে গণঅভ্যুত্থানের চেতনাধারী অভিভাবকরা তা কখনো মেনে নেবে না। তারা আশা করেন, শিক্ষা উপদেষ্টার যথোপযুক্ত নির্দেশনার মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে পরিবেশ তৈরি করে একটি সর্বজন প্রহণযোগ্য পরিচালনা পরিষদ গঠন করে বাংলাদেশের পতাকাবাহী স্বনামধন্য এ প্রতিষ্ঠানের গৌরবের ধারাবাহিকতা অব্যাহত করতে সক্ষম হবেন।
স্মারকলিপিটির বক্তব্যের চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো।
কাতারে বাংলাদেশিদের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এম,এইচ,এম,স্কুল ও কলেজের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন হতে চলেছে। গত প্রায় আঠারো বছর এই নির্বাচন বন্ধ ছিল তৎকালীন সরকার আধিপত্যবাদী নীতির কারনে। সেই একই মডেল অনুসরণ করে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে সেই আধিপত্যবাদেরই আরেক প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন বর্তমান দুর্নীতিগ্রস্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ ও তাদের ফ্যাসিবাদের দোসররা। যেমন:
১. বোর্ডের নিয়ম অনুসরণ না করে বা বর্তমান সরকারের অধ্যাদেশ না মেনে, পূর্বের কমিটি বাতিল না করে এবং এড-হক কমিটি গঠন না করে পতিত সরকারের লোকজনকে রাখার জন্য কমিটির মেয়াদ বাড়ান এবং সেই সময়ও শেষ হয়েছে মার্চ মাসে। কিন্তু এখনও তারা বসে আছে এবং নিজেরাই প্রার্থী হয়ে নির্বাচন ঘোষণা করেছে।
২. ভোটার তালিকা তফসিল ঘোষণার চল্লিশ দিন পূর্বে প্রকাশ করার নিয়ম থাকলেও নির্বাচনের দুই দিন বাকি থাকতেও ঘোষণা করেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। রাষ্ট্রদূতকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো জবাব দিতে পারেননি।
৩. অভিভাবকদের প্রকৃত সংজ্ঞা নির্ধারণ না করে ইচ্ছামত ফরম বিক্রি। যেমন, মা এবং বাবার মধ্যে কিভাবে অভিভাবকত্ব নির্ধারণ হবে।
৪. বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী founder member-দের নির্বাচনে সংযুক্ত না করা।
৫. ইচ্ছামত ফ্যাসিবাদের দোসরদের হাতে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া। যা নির্বাচনের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
৬. ভোটারের সঠিক সংজ্ঞা না দিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করা। যেমন, ভোটারকে এবং তিনি কোন কোন ক্ষেত্রে কয়টি ভোটের মালিক না বলা।
৭. সবাইকে মুখে মুখে ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝানো, কিন্তু কোন নির্বাচনী বিধিমালা প্রণয়ন না করা এবং প্রার্থীদের নমিনেশন ফরমের সাথে বিধিমালা না দেওয়া।
৮. নির্বাচন কমিশনের এমন বৈষম্যমূলক আচরণে ফ্যাসিবাদের চিত্র ফুটে উঠেছে।
৯. উপরোল্লিখিত কারণে নানাভাবে বিভিন্ন গ্রুপের উদ্ভব হয়েছে এবং আরেক ফ্যাসিবাদের পাঁয়তারা হচ্ছে।
১০. দুইটি দল প্যানেল গঠন করে নির্বাচনী প্রচারনা করছেন। যা নিয়মের পরিপন্থী।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের গণআকাঙ্ক্ষার বিপরীতে ও বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার বিপরীতে গিয়ে তড়িঘড়ি করে নির্বাচন দিয়ে স্কুলের উন্নয়ন সম্ভব না। এর ফলে অভিভাবকদের মধ্যে যে বিরোধ উষ্কে দেওয়া হয়েছে তা আমাদের সন্তানদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।
এটাও মনে রাখা দরকার যে, রাষ্ট্রদূতের বিদায়ের আগে এটি করতে হবে এমন বাধ্যবাধকতার অজুহাতে নির্বাচনের স্বচ্ছ প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না। রাষ্ট্রদূতের আগমন-বিদায় একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এর সাথে নির্বাচন নীতির কোনো সম্পর্ক নেই। আশা করি হ-য-ব-র-ল স্কুলের GB/PTA নির্বাচন স্থগিত করে বোর্ডির নির্দেশনা মেনে একটি নিয়মতান্ত্রিক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে মাননীয় উপদেষ্টা আমাদের প্রবাসী শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যযৎ বিনির্মাণে দৃষ্টান্তমূলক অবদান রাখবেন।
স্মারকলিপি প্রদানের সময় অন্যান্য অভিভাবকদের সাথে উপস্থিত ছিলেন আসন্ন নির্বাচনের GB প্রার্থী রাকিব মোহাম্মদ ( মিলকান). GB প্রার্থী ওমর ফারুক, GB প্রার্থী আলাউদ্দিন, PTA প্রার্থীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাহবুবুর রহমান, দিদারুল আলম আরজু, হুমায়ুন আহমেদ, ফিরোজ শেখ, ওমর ফারুক মুবিন, শামিম আহমেদ, আঞ্জুমান আরা রুমা প্রমুখ।
এনএইচ/