আব্দুল্লাহ আলমামুন আশরাফী
তীব্র গরমে প্রায়ই আমাদের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। ভয়াল গরমের তীব্রতা থেকে বাঁচতে মানবজাতীর মুক্তির একমাত্র ঠিকানা কালজয়ী জীবনাদর্শ ইসলামে রয়েছে স্নিগ্ধ সুরভিত চমৎকার নির্দেশনামালা। হৃদয়প্রশান্তিকর দ্যুতিময় সে নির্দেশনামালার খানিকটা ঝলক উপস্থাপনের প্রয়াস পাবো ইনশাআল্লাহ।
ইসতিগফার
যাপিত জীবনের প্রতিটি ছত্রে ছত্রে ইসতিগফারের সৌরভ ছড়িয়ে দেয়ার বিকল্প নেই। সুখে দু:খে, হাসি কান্নায়, অনূকূল প্রতিকূল- সর্বাবস্থায় ইসতিগফারের সুরভিত পাথেয়টি আঁকড়ে ধরে রাখা চাই। তীব্র গরমের এই অসহ্য দুর্বিষহ সময়ে অধিক পরিমাণে ইসতিগফার একটি কার্যকরী উপায়। তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে ইসতিগফার একটি মোক্ষম হাতিয়ার। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে- আমি তাদেরকে বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি বর্ষন করবেন। তোমাদের ধনসম্পদ সন্তান-সন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের জন্য দান করবেন উদ্যান এবং তোমাদের জন্য নদ নদীর ব্যবস্থা করে দিবেন। (সূরা নূহ: ১০-১২)
ইসতিগফার জীবনকে সহজ করে। সমস্যা সংকট দূর করে যাপিত জীবনকে করে দেয় স্নিগ্ধ আলোকিত প্রশান্ত।
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তি নিয়মিত ইসতিগফার পড়লে আল্লাহ তাকে প্রত্যেক বিপদ হতে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন, সকল দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত করবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিযিক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। (সুনানে আবু দাউদ- ১৫১৮)
দুআ করা
তীব্র গরম থেকে বাঁচতে আল্লাহ তায়ালার কাছে অধিক পরিমাণে দুআ করার বিকল্প নেই। কারণ, গরম ঠাণ্ডা আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহ ইচ্ছায়ই প্রকৃতিতে কখনো তীব্র দাবদাহ ছড়িয়ে পড়ে, আবার কখনো তীব্র ঠাণ্ডায় সবকিছু হিমশীতল হয়ে যায়। তাই গরম ঠাণ্ডার স্রষ্টা আল্লাহর কাছেই বারবার ফিরে যাওয়া উচিত। আল্লাহর কাছেই আমাদের দূর্বলতা অসহায়ত্ব পেশ করা উচিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন।
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে কতিপয় লোক (বৃষ্টি না হওয়ায়) ক্রন্দনরত অবস্থায় এলে তিনি দু’আ করলেনঃ হে আল্লাহ! আমাদেরকে বিলম্বে নয় বরং তাড়াতাড়ি ক্ষতিমুক্ত-কল্যাণময়, তৃপ্তিদায়ক, সজীবতা দানকারী, মুষল ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করো। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তাদের উপর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে যায় (এবং বৃষ্টি হয়)।(সুনানে আবু দাউদ- ১১৬৯)
হাদিসে গরমকে আল্লাহর ক্রোধ বলা হয়েছে। আর আল্লাহর ক্রোধ থেকে বাঁচার জন্য নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেমন দান সদকা করতে বলেছেন, তেমনি দোয়াও শিখিয়ে গেছেন।দোয়াটি হলো- আল্লাহুম্মা আউজুবিকা মিন যাওয়ালি নি-মাতিকা ওয়া তাহাউলি আফিয়াতিকা ওয়া ফুজাআতি নিকমাতিকা ওয়া জামিয়ি সাখাতিকা।
অর্থ: হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি আপনার নিকট আপনার অনুগ্রহের অপসরণ, নিরাপত্তার প্রত্যাবর্তন, আকস্মিক পাকড়াও এবং যাবতীয় অসন্তোষ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (মুসলিম ২৭৩৯, আবু দাউদ ১৫৪৫)
বৃক্ষরোপণ
গরমের প্রচন্ডতা থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি পেতে চাইলে ফলপ্রসূ পদক্ষেপ হলো বৃক্ষরোপণ। পরিবেশ রক্ষাকারী গাছ কাটা হচ্ছে যত্রতত্র এবং এ কারণে পৃথিবীব্যাপী দেখা দিচ্ছে অসহ্য গরম। অথচ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের গাছ রোপণের প্রতি নির্দেশ ও উৎসাহ প্রদান করেছেন নানাভাবে। এ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশসহ অনেক নির্দেশ অমান্য করার অপরিহার্য পরিণতিতেই আমরা আজ নিপতিত। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব ও এর প্রতি উৎসাহ প্রদান করতে গিয়ে বলেছেন, আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত-
নবী (সাঃ) বলেন, যদি কিয়ামত এসে যায় এবং তখন তোমাদের কারো হাতে একটি চারাগাছ থাকে, তবে কিয়ামত হওয়ার আগেই তার পক্ষে সম্ভব হলে যেন চারাটি রোপন করে (আহমাদ হা/১২৯৩৩ ও ১৩০১২)।(আদাবুল মুফরাদ,- ৪৮১)
তীব্র গরমসহ সব ধরনের প্রতিকূলতা থেকে বেঁচে যাপিত জীবনকে সুখময় আনন্দদায়ক করে তুলতে ইসলামের দীপ্তিময় নির্দেশনাগুলো মেনে চলার বিকল্প নেই। আসুন, সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে যাই। ইসলামের নির্দেশনাগুলো মেনে জীবনকে সুখময় করে তুলি।
লেখক: মুহাদ্দিস- জামিয়া গাফুরিয়া মাখযানুল উলুম টঙ্গী, গাজীপুর। খতীব- আউচপাড়া জামে মসজিদ টঙ্গী, গাজীপুর
এমএইচ/