|| মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব ||
হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। এটি প্রত্যেক সক্ষম (শারীরিক ও আর্থিকভাবে) মুসলিমের জীবনে একবার ফরজ। হাজী হজ শেষে বাড়ি ফিরলে তাকে স্বাগত জানানো ও তাকে হজ পালনের জন্য অভিনন্দন জানানো সুন্নত। এটি নবী কারিম ﷺ -এর শিক্ষা। তবে এক্ষেত্রে কিছু ব্যাপার বৈধ ও কিছু ব্যাপার নিষিদ্ধ।
যা বৈধ ও সুন্নত:
- স্বাভাবিক আনন্দ প্রকাশ:
- হাজীর সুস্থভাবে ফেরাকে উপলক্ষ করে আনন্দ প্রকাশ করা এবং পরিবার-প্রতিবেশীদের সঙ্গে খুশি ভাগ করে নেওয়া।
- হাজীকে শুভেচ্ছা জানানো। যেমন, “تقبل الله حجك وغفر ذنبك وأخلف نفقتك” বাংলা অর্থ: “আল্লাহ আপনার হজ কবুল করুন, আপনার গুনাহ মাফ করুন এবং আপনার খরচের বদলা দিন।”
হাদিসে এসেছে,
أن رسول الله ﷺ كان إذا قفل من غزو أو حج أو عمرة يكبر على كل شرف من الأرض ثلاث تكبيرات ثم يقول لا إله إلا الله وحده لا شريك له ، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير آيبون تائبون عابدون ساجدون لربنا حامدون صدق الله وعده ونصر عبده وهزم الأحزاب وحده ) رواه البخاري.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজী হজ থেকে ফিরে আসলে দোয়া করতেন,
“لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد، وهو على كل شيء قدير، آيبون، تائبون، عابدون، ساجدون، لربنا حامدون...”
অর্থ: “আমরা আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছি, তাওবাকারী, উপাসক, সিজদাকারী, আমাদের প্রভুর প্রশংসাকারী...” (বুখারী)
- কোলাকুলি, মুসাফাহা, অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন করা:
সাহাবায়ে কেরাম সফর থেকে ফেরার পর কোলাকুলি করতেন। এমনকি নবী ﷺ নিজেও জাইদ ইবনে হারিসা (রা.)-কে জড়িয়ে ধরেছিলেন।
এভাবে হাজীকে গৃহে স্বাগত জানানো, তাকে নিয়ে দোস্ত-আত্মীয়দের মাঝে কোনো সহজ সরল খাবার আয়োজন (যাকে ফিকহে "نقيعة" বলা হয়) করাও সুন্নত।
যা পরিহারযোগ্য ও নিষিদ্ধ:
- লোক দেখানো আয়োজন, যেমন বাড়ির গেটে পোস্টার ঝোলানো, দেয়ালে লেখা, রঙিন বাতি দিয়ে সাজানো, পটকা-আতশবাজি ফোটানো, এসব অহেতুক খরচ, রিয়া (লোক দেখানো ইবাদত) ও ইসলামবিরোধী বাড়াবাড়ি।
কুরআনে বলা হয়েছে:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالْأَذَى كَالَّذِي يُنْفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ صَفْوَانٍ عَلَيْهِ تُرَابٌ فَأَصَابَهُ وَابِلٌ فَتَرَكَهُ صَلْدًا } سورة البقرة الآية 264
“হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের সদকা বরবাদ করো না লোক দেখানোর মাধ্যমে।” (সূরা বাকারা: ২৬৪)
وَعَنْ جُنْدُبٍ قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللَّهُ بِهِ وَمَنْ يُرَائِي يُرَائِي اللَّهُ بِهِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (6499) و مسلم (48 / 2987)، (7477) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি খ্যাতি অর্জনের জন্য কোন কাজ করে, আল্লাহ তা’আলা তার দোষ-ক্রটিকে লোক সমাজে প্রকাশ করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর জন্য কোন কাজ করে, আল্লাহ তা’আলাও তার সাথে লোক দেখানোর আচরণ করবেন (প্রকৃত সাওয়াব হতে সে বঞ্চিত থাকবে)। (বুখারী ও মুসলিম)
- কোনো কোনো এলাকায় প্রচলন রয়েছে যে, হাজী ফিরে আসলে তার জন্য বকরি জবাই করা হয়। সেই রক্তের উপর দিয়ে হাজী সাহেব যান। এটি শরিয়তে অনুমোদিত নয়। কুরআনে বলা হয়েছে:
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ } سورة الأنعام الآية 162
“বল, আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন-মরণ সবই আল্লাহর জন্য।” (সূরা আন-আম: ১৬২)
ইসলামে আনন্দ প্রকাশ, শুভেচ্ছা ও আপ্যায়নের অনুমতি আছে। কিন্তু অহেতুক খরচ, লোক দেখানো ও বিদআতি রীতি থেকে বিরত থাকা জরুরি। হাজী নিজেও যেন অহংকার ও আত্মপ্রশংসা থেকে দূরে থাকেন এবং নিজের ইবাদত কবুলের জন্য আল্লাহর কাছে দোআ করেন।
এমএম/