দাওয়াতুস সুন্নাহ বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। লক্ষ্য ছিল চাঁদের তারিখ নির্ভর ইবাদতসমূহ, বিশেষত রোজা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা পালনের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে একই দিনে উদযাপন প্রসঙ্গে চলমান বিভ্রান্তির নিরসন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি বলেন, “একই দিনে রোজা ও ঈদ পালনের দাবি একটি নব ফিতনা। এর পেছনে কাজ করছে কিছু লোকের অজ্ঞতা, হটকারিতা এবং গোড়ামী। তারা চাঁদ দেখার সুন্নাহি পদ্ধতি বাদ দিয়ে জাতির উপর একটি অসম্ভব বিষয় চাপিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করছে।”
তিনি আরও বলেন, “এ বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর পেছনে সাধারণত জেনারেল শিক্ষিত কিছু ব্যক্তি জড়িত। ইসলামিক বিষয় নিয়ে গবেষণার জন্য দেশে অসংখ্য আলেম, মুফতি আছেন। তারা গবেষণা করছেন এবং শারঈ দৃষ্টিকোণ থেকে স্পষ্ট করেছেন, সারা বিশ্বে একই দিনে রোজা ও ঈদ পালন করা সম্ভব নয়।”
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “১৬ কোটি মানুষের দেশে অল্প কিছু মানুষ সৌদি আরবের সাথে মিলিয়ে রোজা ও ঈদ পালন করে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।”
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন— মুফতি ইমামুদ্দিন (ফরিদাবাদ মাদ্রাসা), মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী, মুফতি আবু বকর সিদ্দিক, ড. মুফতি গোলাম রব্বানী, মুফতি সাইফুল্লাহ হাবিবি, মুফতি নাসির উদ্দিন নূরী, মুফতি আল আমিন আজাদ ও মুফতি মামুনুর রশিদ।
সভায় সভাপতিত্ব করেন মাওলানা জসিম উদ্দিন, মুহাদ্দিস, লালবাগ মাদ্রাসা। তিনি বলেন, “সারা বিশ্বে একই দিনে রোজা ও ঈদ পালন নবউদ্ভাবিত মতবাদ, যা ১৪০০ বছরের ইসলামী ঐতিহ্যের পরিপন্থী। এটি বাংলাদেশে শুরু হয়েছে চাঁদপুর জেলার একটি গ্রামের মাধ্যমে, যা স্পষ্ট ফিতনা।”
পর্যালোচনা সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দাওয়াতুস সুন্নাহ বাংলাদেশের পরিচালক মুফতি জুবায়ের বিন আব্দুল কুদ্দুস। তিনি বলেন,
“রোজা ও ঈদের সাথে চাঁদ দেখা সরাসরি সম্পৃক্ত। লোনার ক্যালেন্ডার বা জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভিত্তিতে ঈদ উদযাপন শরীয়ত সম্মত নয়। কারণ, হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘চাঁদ দেখে রোজা শুরু করো ও চাঁদ দেখে শেষ করো’ (সহিহ বুখারী: ১৯০৯)।”
তিনি আরও বলেন, “ইসলামের ইতিহাসে সাহাবা, তাবেঈ, তাবে তাবেঈ এবং পরবর্তী যুগের সমস্ত আলেমগণ স্থানীয় চাঁদ দেখার ভিত্তিতেই ইবাদতের হিসাব করেছেন। কখনোই সারা পৃথিবী একসাথে একই দিনে রোজা বা ঈদ পালন করেনি। বাস্তবেও এমন বহু দৃষ্টান্ত আছে যেখানে বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে চাঁদ দেখা গেছে এবং সেই অনুযায়ী রোজা ও ঈদ পালন হয়েছে।”
তিনি বিভিন্ন বছরের প্রাসঙ্গিক ঘটনাগুলোর উদাহরণ দিয়ে বলেন—
২০১৮: ক্যালিফোর্নিয়ায় চাঁদ দেখা গেলেও পৃথিবীর অন্যান্য দেশ তা গ্রহণ করেনি।
২০২২: আফগানিস্তান, নাইজার, মালিতে ঈদের চাঁদ দেখা গেলেও সৌদি আরবসহ কেউ তা অনুসরণ করেনি।
২০২৫: ঈদুল ফিতরের চাঁদ আরব দেশগুলোতেই এক দিনে দেখা যায়নি।
২০২৫: ঈদুল আযহার চাঁদ মরক্কোতে একদিন পরে দেখা গেছে, ফলে তারা ৭ জুন ঈদ পালন করছে।
সভা থেকে সরকার ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়—
- চাঁদ দেখা কমিটিকে অধিকতর উন্নত ও সক্রিয় করতে হবে।
- সকল মুসলমানকে চাঁদ দেখার বিষয়ে সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে।
- জ্যোতির্বিজ্ঞান নয় বরং শারঈ পদ্ধতি—চাঁদ দেখা—অনুযায়ী ইবাদত পালন করতে হবে।
পর্যালোচনা সভার সমাপনী বক্তব্যে বলা হয়, “সকল বিভ্রান্তি ও ফিতনা পরিহার করে সুন্নাহ অনুযায়ী চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রোজা-ঈদসহ সকল ইবাদত পালনের মাধ্যমেই প্রকৃত ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব, ইনশাআল্লাহ।”
এমএইচ/