|| বিশেষ প্রতিনিধি ||
মধ্যপ্রাচ্যের ‘বিষফোঁড়া’ খ্যাত ইসরায়েল আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে ইরানের ওপর হামলা করে চরম বেকায়দায় পড়েছে। দখলদার দেশটি এমন ভয়াবহ সংকটে এর আগে কখনো পড়েনি। ইরানের হামলার মুখে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছে ইহুদিবাদী দেশটি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতার কথা বললেও এখনো সরাসরি কোনো সহযোগিতা করেনি। ফলে হতাশা বাড়ছে ইসরায়েলে।
এদিকে যুদ্ধের এক সপ্তাহ না পেরোতেই অস্ত্র সংকটে ভুগছে ইসরায়েল। প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অ্যারো ক্ষেপণাস্ত্র ইন্টারসেপ্টরের মজুদ শেষের পথে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ধ্বংসে শুক্রবার (১৩ জুন) আকস্মিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে, ইসরায়েলে ৩৭০ টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র এবং শত শত ড্রোন নিক্ষেপ করেছে ইরান। এসব ক্ষেপণাস্ত্র এবং শত শত ড্রোন ঠেকাতে ইসরায়েলের ব্যাপকভাবে তার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করেছে, এতে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেপণাস্ত্র মজুদে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আর এই ঘাটতি ইরানের দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবেলায় দেশটির ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্র কয়েক মাস আগে থেকেই ইসরায়েলের ‘অ্যারো’ ইন্টারসেপ্টরের ঘাটতির কথা জানে এবং সেই অনুযায়ী ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে আসছে। কিন্তু সেই মজুদও সীমিত। ইসরায়েলে অনেক অস্ত্র পাঠানোর পর, এখন যুক্তরাষ্ট্র নিজেও ইন্টারসেপ্টর ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার মার্কিন ও ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তার বরাতে আরেক মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের হামলার বর্তমান গতি বজায় থাকলে ইসরায়েল আর মাত্র ১০-১২ দিন তার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখতে পারবে। এর আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করতে হবে বা যুদ্ধে জড়িত হতে হবে।
সূত্রটি আরও বলেছে, ইসরায়েলকে তারা কোন কোন ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে চায় তা নির্বাচন করতে হবে এবং যেগুলো খোলা জায়গায় পড়বে তাদেরকে ছেড়ে দিতে হবে। যদিও ইসরায়েল ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছে। তবে এই পদ্ধতিতে বড় ধরণের হামলার মুখোমুখি হলে জনবহুল এলাকা বা গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর দিকে পরিচালিত সমস্ত ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়েছে ইসরায়েল।
আইডিএফ বলছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরায়েলে ছোড়া বেশিরভাগ ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে। এছাড়া অভিযানে এখন পর্যন্ত ইরানের প্রায় ৪০ শতাংশ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ধ্বংস করা হয়েছে।
এদিকে ইরান থেকে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও তা ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তেহরান। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম তাসনিম নিউজ এক প্রতিবেদনে জানায়, ইরানের হামলায় ইসরায়েলের বহু মানুষ হতাহত হয়েছে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে এসব তথ্য গোপন রাখতে উঠে পড়ে লেগেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের সরকারি দফতর ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ গোপন রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ বিষয়ে ইসরায়েলের সামরিক সেন্সর অফিস একাধিকবার সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ছবি বা তথ্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
তাসনিমের দাবি, আল-কুদস (জেরুজালেম), তেল আবিবসহ বেশ কয়েকটি দখলকৃত শহরে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানে। এতে বহু ভবন ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের পাল্টা হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১,৮০০ ইসরায়েলি আহত হয়েছেন। যদিও নিহতের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি, আঞ্চলিক কিছু সূত্রের বরাতে দাবি করা হচ্ছে, নিহতের সংখ্যা কয়েক শত ছাড়িয়ে যেতে পারে।
তাসনিম আরও দাবি করে, ইরানের ছোড়া অনেক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি কিছু প্রতিরক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র নিজের ভূখণ্ডেই ভেঙে পড়েছে, যেগুলোর কারণে শহরগুলোতে বাড়তি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সপ্তাহখানেক আগে ইসরায়েল যখন ইরানের ওপর হঠাৎ করে হামলা চালায় তখন দেশটির ভাবনায় ছিল না এতোটা প্রতিরোধের মুখে পড়তে পারে। ইরান অব্যাহতভাবে পাল্টা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে ইসরায়েলজুড়ে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। দেশটির সিংহভাগ মানুষ বাঙ্কারে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। ইরান এই হামলা অব্যাহত রাখলে বাঙ্কারে তাদের পক্ষে বেশিদিন অবস্থান করাও সম্ভব হবে না। ফলে দেশটির জনগণের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে নেতানিয়াহুর সরকার।
এমএইচ/