|| শাব্বির আহমাদ খান ||
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে- সেটা নিয়ে এখন আলোচনা তুঙ্গে। মাঠে সক্রিয় প্রধান দল বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ দিচ্ছে। বিএনপির মিত্রদের অনেকেই এতে সমর্থন দিচ্ছে। সরকার বলছে, আগামী ডিসেম্বর থেকে নিয়ে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তবে সরকারের এই অস্পষ্টতা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা অস্বস্তি রয়েছে। তারা বলছেন, সরকারের উচিত বিষয়টি পরিষ্কার করা।
নির্বাচন ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছে ইসলামি দলগুলো। বেশির ভাগ ইসলামি দল বিএনপির সুরে ডিসেম্বরেই নির্বাচন না চাইলেও তারা চায় নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ ঘোষণা হোক। নির্বাচন ডিসেম্বরে না হলেও অন্তত আগামী বছরের শুরুর দিকে হোক-সেটা তারা চায়।
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সরকারকে কিছুটা সময় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে দলটি মনে করে, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন হওয়া উচিত। এর পরে রোজা, ঈদ, কোরবানি রয়েছে। তাছাড়া বৃষ্টি-বাদলের দিন চলে আসবে। এতে নির্বাচন করা কঠিন হয়ে যাবে।
আরেক বড় দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বাচনের চেয়ে সংস্কারের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে। তাদের মতে সংস্কারের স্বার্থে সরকার চাইলে কিছুটা সময় নিতে পারে। তবে দলটিও মনে করে, সংস্কার ও নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ থাকা উচিত।
নির্বাচনের রোডম্যাপ ইস্যুতে তিনটি ইসলামি দলের মহাসচিবের সঙ্গে কথা বলেছে আওয়ার ইসলাম। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এবং খেলাফত মজলিস- তিন দলের মহাসচিবই মনে করেন, নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত। নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা ছাড়া জনজীবনে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে তা দূর করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে স্পষ্টভাবে বলেছি—নির্বাচনের জন্য আপনি আপনার সুবিধামতো একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন। আর সেই সুবিধাজনক সময় হতে পারে ঈদের আগে অথবা পরে। এর চেয়ে উপযুক্ত সময় আর হতে পারে না।’
খেলাফত মজলিস মহাসচিব বলেন, ‘ডিসেম্বর মানেই যে নির্বাচন অবশ্যই ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে হবে—বিষয়টি এমন নয়। অনেক রাজনৈতিক দলই ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চ—এই সময়সীমার মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছে।’
ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচনের ঘোষণা না দিলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে না। বরং তা অবনতির দিকে যেতে পারে।’
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি বলেন, ‘আমরা একটি স্পষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ চাই। অনেক আগেই আমরা ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছি। তবে রাষ্ট্রের কল্যাণে প্রয়োজনে এক-দুই মাস সময় এগিয়ে বা পিছিয়ে যাওয়া গ্রহণযোগ্য।’
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান যে দাবি ও লক্ষ্যকে সামনে রেখে সংঘটিত হয়েছে, তা হলো একটি ইনসাফভিত্তিক, দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠন। বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকার সর্বস্তরে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না।’
এই নেতা বলেন, ‘যদি সরকার দ্রুত সংস্কার সম্পন্ন করে ডিসেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব করে তোলে, তাহলে সেটিকে স্বাগত জানানো হবে। আর যদি এক-দুই মাস বিলম্ব হয়, সেটাও গ্রহণযোগ্য। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দিষ্টভাবে জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করায় রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্দেহ ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এই অনিশ্চয়তা দূর করার জন্য ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে কোন মাসে, কোন তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে ঘোষণা করতে হবে। তাহলেই রাজনৈতিক দলসমূহ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা ফিরবে।’
এমএইচ/