রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
যেসব দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে  ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলো যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া জাগো হে কওমি তারুণ‍্য! রাতেই ঢাকাসহ তিন অঞ্চলে ঝড়ের আভাস অর্থনীতির মূল লক্ষ্য হতে হবে উদ্বৃত্ত সৃষ্টি: বাণিজ্য উপদেষ্টা চবির আরবি বিভাগের নতুন সভাপতি অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিন তালুকদার ডেঙ্গুতে একদিনে ১২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৪০ সিরাতকে ধারণের মাধ্যমেই সত্যিকার পরিবর্তন সম্ভব: ধর্ম উপদেষ্টা সিরাতুন্নবী (সা.) সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতার লাইভ ড্র অনুষ্ঠান ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দুর্ভাবনায় ভারত!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন
কবি, কলামিস্ট ও সাংবাদিক

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ও বিশ্বে সর্বাধিক ভাষায় প্রচারিত বিবিসি একটি পরিবেশন করেছে যে, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে কিনা ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা দুর্ভাবনায়। আর এই বিষয়ে দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।

অবশ্য খবরটি বিবিসির নিজস্ব নয়, ভারতেরই একটি সংস্থার। ভারতের অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) বরাতে বিবিসি খবরটি পরিবেশন করেছে। সংস্থাটি অন্যতম ভারতীয় থিংক ট্যাংক বলে পরিচিত। উক্ত খবরে বলা হয়েছে, ওআরএফ নিজেদেরকে ‘স্বাধীন’ বললেও ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠী রিলায়েন্সের সঙ্গে এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

একই সঙ্গে সরকারের সঙ্গেও বিভিন্ন বিষয়ে একযোগে কাজ করে ওআরএফ। প্রতিবছর নয়াদিল্লিতে ‘রাইসিনা ডায়ালগ’ নামে বহুপাক্ষিক সম্মেলন হয়, ওআরএফ সেটির মূল আয়োজক, আর এতে সহায়তা করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই সম্মেলনে মূলত ভূরাজনীতি এবং অর্থনীতি নিয়ে নীতিনির্ধারকরা আলোচনায় অংশ নেন। ভারত সরকারের আঞ্চলিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ওআরএফ এখন ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠছে।

ওআরএফ-এর ফেলো মনোজ যোশী ভারতের খুবই সুপরিচিত একজন সাংবাদিক এবং তিনি ভারত সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক টাস্ক ফোর্সের একজন সদস্য ছিলেন।

অর্থাৎ ওআরএফ খুবই প্রভাবশালী এবং সরকারের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক যুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান। তাই এ সংস্থাটির বক্তব্যকে ভারত সরকারের অভিমত বলে মনে করছেন অনেকে। আর সে কারণেই উক্ত বক্তব্যকে এদেশে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

মনোজ যোশীর বক্তব্যটি ওআরএফ ১৮ এপ্রিল প্রকাশ করেছে। আর সেটা বিবিসি প্রকাশ করেছে ঐদিনই। সংক্ষিপ্তরূপে দেখা যাক, আলোচিত সেই বক্তব্যটি কী?

‘বাংলাদেশ পোলস পোজ অ্যা চ্যালেঞ্জ টু রিজিওনাল স্টেবিলিটি’ শিরোনামের এই লেখায় বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের ভাবনা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয়, তাতে মাত্র ২২% ভোট পড়েছিল। সেই নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে এবং সে সময় অনেক সহিংসতা হয়। কাজেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আশা, বাংলাদেশের এবারের নির্বাচন যেন আগেরবারের চাইতে বিশ্বাসযোগ্য হয়।

কিন্তু বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কারও ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনাকে ভারত কিছুটা উদ্বেগের চোখে দেখে। কারণ, ভারত বিএনপির ব্যাপারে সন্দিহান। বিএনপি এর আগে যে দু’ দফা ক্ষমতায় ছিল, সে সময় বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গিবাদ শেকড় গেড়েছিল এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পাকিস্তানের সমর্থন পেয়েছিল। আর বাংলাদেশ এই বিষয়টি না দেখার ভান করেছিল।

বাংলাদেশে যেভাবে ইসলামী জঙ্গিদের তৎপরতা বাড়ছে, এমনকি আত্মঘাতী হামলা পর্যন্ত হয়েছে, সেখানে এই সমস্যা মোকাবেলায় বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগকেই বেশি নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে ভারত। তাই ভারতীয় কর্মকর্তারা সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ এবং তৃতীয় দেশগুলোর গুপ্ত সংস্থার তৎপরতা মোকাবেলায় আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তাদের একযোগে কাজ করার অভিজ্ঞতা বেশ ইতিবাচক। কারণ, ইসলামী জঙ্গিবাদ দমনে শেখ হাসিনা খুবই সক্রিয়।

আরও বলা হয়েছে, সবচেয়ে খারাপ যে পরিস্থিতির দিকে বাংলাদেশ যেতে পারে তা হলো সেখানে সংসদীয় রাজনৈতিক দলগুলি দুর্বল হয়ে ইসলামী গোষ্ঠীগুলো সেখানে শক্তিশালী হয়ে ওঠতে পারে (হেফাজতে ইসলাম)। দ্বিতীয় পরিস্থিতিতে সেনা সরকার গঠিত হতে পরে, যেটি দেশটির ইতিহাসে এর আগে কয়েকবার ঘটেছে।

লেখার উপসংহারে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ হয়তো তুলনামূলকভাবে একটি ভালো অবস্থানে আছে, কিন্তু ভবিষ্যতে নতুন ধরনের খুবই সহিংস এক ইসলামী জঙ্গিবাদ দেশটিকে ছিন্ন-ভিন্ন করে ফেলতে পারে।

কথা হচ্ছে, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। ভারতও তাই। সর্বোপরি দেশ দু’টি প্রতিবেশী এবং তাদের পারস্পরিক গভীর সম্পর্ক আছে। এই অবস্থায় ভারত এ দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে খোলামেলা ও লিখিতভাবে আলোচনা করতে পারে না। উপরন্তু একটি দেশ অন্য একটি দেশের নির্দিষ্ট একটি দলের প্রতি সমর্থন জানাতে পারে না। তবুও এসবই করছে ভারত। এটাই প্রথম নয়, প্রায়ই তারা এই অন্যায় কাজটি করে থাকে।

কিছুদিন আগে ভারতীয় সাংবাদিকরা এ দেশে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন। সে সময় তারা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, বাংলাদেশ কি চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে? প্রধানমন্ত্রীও তার যুৎসই জবাব দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, বাংলাদেশ কার সাথে বন্ধুত্ব করবে, না করবে সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। দ্বিতীয়ত, চীনের দিকে ঝুঁকে পড়লেও তাতে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এমন স্পষ্ট জবাবের জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।

বলতে চাচ্ছি, বাংলাদেশ কার সাথে বন্ধুত্ব করবে, আর কার সাথে করবে না তা তার নিজস্ব ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে অন্য কারও মাথা ঘামানো দরকার কী? তাছাড়া তারা যে আমাদের মহান স্বাধীনতার প্রতি মর্যাদা রেখেও কথা বলে না। কিছুদিন আগে আসামের এক বিজেপি এমপি বলেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে দখল করে ভারতের অংশ না করা ভুল ছিল। তার এসব বক্তব্য এ দেশের স্বাধীনতা ও মর্যাদার উপর চরম চপেটাঘাত। যাকে বলে প্রভূত্ব খাটানো।

এ দেশের কেউই এর প্রতিবাদ করেননি। শুধুমাত্র বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এর তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। তাহলে কি এ দেশের মানুষ জীবনের বিনিময়ে যে মহান স্বাধীনতা অর্জন করেছে, তা কি পিন্ডির পরিবর্তে দিল্লির দাসত্ব করার জন্য? না। তা হতেই পারে না। কারণ, এ ভূখন্ডের মানুষ বরাবরই স্বাধীনচেতা। তাই তারা সব সময়ই দখলদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, জীবন দিয়েছে, তবুও পরাধীনতা মানেনি। ভবিষ্যতেও মানবে না-এটাই চরম সত্য!

মজার বিষয়, মনোজ যোশীর ওই লেখায় ইসলামী মৌলবাদ নিয়ে জুজুর ভয় দেখানো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য মুসলিম জঙ্গিরা বেশি ভয়ংকর, না ভারতের হিন্দু জঙ্গিরা বেশি ভয়ংকর- সেটা খতিয়ে দেখা জরুরি নয় কি?

soyedfaizul@gmail.com
২৬ এপ্রিল ২০১৮


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ