বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫ ।। ২০ কার্তিক ১৪৩২ ।। ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
বিএনপি-জামায়াতের বাইরে নতুন রাজনৈতিক জোটের উদ্যোগ এনসিপির  মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের কারণ পাইলটের উড্ডয়ন ত্রুটি পুলিশের খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারে আবারও পুরস্কার ঘোষণা বিশাল স্বর্ণ ভান্ডার মিলল পাকিস্তানে একীভূত হওয়া ৫ ব্যাংকের অর্থ ও আমানত সুরক্ষিত থাকবে : গভর্নর ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় সম্মিলিত শিক্ষার্থী ফোরামের মানববন্ধন বৈষ্যমের বিরুদ্ধে সিলেটবাসীকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলন করতে হবে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রনে সরকারকে ন্যাপের আহ্বান জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ব্যতীত দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠন সম্ভব নয়: কামাল হোসেন ঘূর্ণিঝড় টাইফুন কালমেগি আঘাত, নিহত বেড়ে ১০০, নিখোঁজ ২৬

আমরা মুসলমান হওয়ায় বঞ্চিত হচ্ছি: নির্বাসিত রোহিঙ্গা ব্লগার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন, নিপীড়নের ছবি দেখলে চোখের পানি আটকে রাখতে পারেন না নেয় স্যান লুইন৷ জার্মানিতে নির্বাসিত এই ব্লগার স্বজাতির দুর্ভোগের কথা গোটা বিশ্বকে জানানোর চেষ্টা করেন৷

তবে প্রবাসে থাকলেও জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি৷

স্নিকার, জিনস, শার্ট এবং জ্যাকেটের সঙ্গে ফ্যাশনেবল চশমাও পরেন তিনি৷ ফ্রাঙ্কফুর্টের ট্রেন স্টেশনে আরো হাজারো মানুষ থেকে তাঁকে আলাদা করা মুশকিল৷ জার্মানির অন্যতম ব্যস্ত এই শহরে বসবাসরত অসংখ্য চাকুরিজীবীর ভিড়ে তিনিও হারিয়ে যেতে পারেন অনায়াসে৷ রোহিঙ্গা ব্লগার নেয় স্যান লুইনকে সাদা চোখে দেখলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে তাঁর কোন মিল খুঁজে পাবেন না৷ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তিনি তাদেরই একজন৷

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের জন্য রোহিঙ্গাদের লাইন৷ কুতুপালং ছাড়াও টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন এলাকার কয়েকটি কেন্দ্রে চলছে এই নিবন্ধন কার্যক্রম৷

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ১৯৭৮ সালে জন্ম নেয়া লুইন'এর ছোটবেলা কেটেছে ইয়াঙ্গুনে৷ যে সময় তাঁর জন্ম, তখন মিয়ানমার সরকার অনেক রোহিঙ্গাকে নিজের দেশের মানুষ মনে করতো৷ নেয় সেই দলের একজন৷ মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে সেদেশের পাসপোর্ট ছিল তাঁর৷ সুযোগ পেয়েছেন উচ্চশিক্ষা গ্রহণের৷

তবে ১৯৮২ সালের পর থেকে তাঁর স্বজাতির প্রতি যে বৈষম্য করা হচ্ছে সেটাও উপলব্ধি করেছেন তিনি৷
মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বসবাস কয়েক শতক ধরে, যদিও সেদেশের সরকার সেটা মানতে রাজি নয়৷ বৌদ্ধপ্রধান দেশটিতে তাই রোহিঙ্গারা রাষ্ট্রহীন, বাঙালি অভিবাসী হিসেবে বিবেচিত৷ অথচ ১৯৮২ সালের আগ পর্যন্ত পরিস্থিতি এখনকার মতো ছিল না৷

লুইন এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘১৯৮২ সালে মিয়ানমার যে নাগরিকত্ব আইন অনুমোদন করে সেখানে নয়টি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব অস্বীকার করা হয়৷ সেই সম্প্রদায়গুলোর একটি রোহিঙ্গা৷''

ষোল বছর ধরে নির্বাসনে

ইয়াঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তি পড়ার সময় থেকেই রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হন লুইন৷

লেখাপড়া শেষে ২০০১ সালে সেদেশের পাসপোর্ট নিয়েই চাকুরি করতে চলে যান সৌদি আরবে৷ সেখানে একটি নির্মাণ সংস্থায় ম্যানেজার হিসেবে চাকুরি নেন৷ পাশাপাশি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের দাবিতে ইন্টারনেটে লেখালেখিও চালিয়ে যান৷ এক্ষেত্রে তাঁকে সহায়তা করেছেন তাঁর বাবা৷

২০০৫ সালে তিনি চালু করেন রোহিঙ্গাব্লগার ডটকম নামের একটি ব্লগসাইট৷ রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার সরকারের দমনপীড়ন এবং সিস্টেমেটিক নির্যাতনের কথা প্রকাশ করা হয় এই ব্লগসাইটে৷ এটি এখন বছরে এক কোটিবারের মতো পড়া হয়৷

নেয় স্যান লুইনের ব্লগার জীবন মিয়ানমারের সরকারের চোখে পড়তে বেশি সময় লাগেনি৷ ২০০৯ সালে নিজের পাসপোর্ট নবায়ন করতে গিয়ে টের পান, সেদেশের সরকার তাঁর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করেছে৷ ফলে অন্যান্য রোহিঙ্গাদের মতো লুইনও পরিণত হন রাষ্ট্রহীন এক মানুষে৷ এমন অবস্থায় সৌদি আরবে বসবাস দুরূহ হয়ে পড়ে তাঁর জন্য৷ ফলে ২০১১ সালে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন জার্মানিতে৷

একটি ব্লগ, একটি দায়িত্ব

‘‘একশো'র বেশি ব্লগারের একটি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করি আমি৷ তারা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর হামলার খবর পেলে তা সঙ্গে সঙ্গে যাচাই করেন এবং ছবি, ভিডিও সংগ্রহ করে আমার কাছে পাঠান৷ এরপর আমি তা ইন্টারেনেট প্রকাশ করি,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন লুইন৷ তাঁর এই নেটওয়ার্কের অনেক সদস্যই বাস করেন মিয়ানমারে, বিশেষ করে রাখাইনে, যেখানে রোহিঙ্গাদের উপর সেদেশের সেনাবাহিনীর সর্বশেষ অভিযান চলছে৷ এই অভিযান থেকে বাঁচতে প্রায় পাঁচলাখের মতো রোহিঙ্গা গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন৷

https://twitter.com/arafatul/status/910778164233871360

বাংলাদেশগামী শরণার্থীদের ছবি দেখলে চোখের জল আটকে রাখতে পারেন না লুইন৷ তিনি বলেন, ‘‘রাখাইনে ছোট ছোট শিশুদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে বা জবাই করা হয়েছে, এমন রিপোর্টও প্রকাশ হয়েছে৷ এমন পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে এক কাপড়েই বাংলাদেশের দিকে ছুটছেন আমার স্বজাতিরা৷ তারা আশা করেন, সেদেশে বেঁচে থাকতে পারবেন৷ কিন্তু তাদের ভবিষ্যত কেউ জানে না৷''

রোহিঙ্গাদের এই করুণ দশা সত্ত্বেও মিয়ানমারের শান্তির প্রতীক অং সান সু চি'র নীরবতা লুইনকে কষ্ট দেয়৷ সু চি'র ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কেও তিনি সচেতন৷ তা সত্ত্বেও একটি দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে যেটুকু ক্ষমতা সু চি'র প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে তাও তিনি রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে করছেন না বলে মনে করেন লুইন৷

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযান আন্তর্জাতিক সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে৷ জার্মানিসহ নানা দেশে এই ঘটনার প্রতিবাদ হচ্ছে দেখে সন্তুষ্ট লুইন৷ তিনি মনে করেন, শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক স্তর থেকে চাপ দেয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পুনর্বাসন সম্ভব হতে পারে৷ তাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব না দেয়া পর্যন্ত এই সংকটের সমাধান হবে না বলে মনে করেন নির্বাসিত এই ব্লগার৷ প্রশ্ন হচ্ছে, মিয়ানমার সরকার আদৌ কি তা করবে?

সূত্র: ডয়েচেভেলে/ প্রতিবেদন: এস্থার ফেলডেন/আরাফাতুল ইসলাম


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ