শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ।। ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১০ জিলকদ ১৪৪৫


ফজর ও মাগরিবের নামাজের পরের ফজিলতপূর্ণ ১০ আমল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাফেজ মাওলানা আব্দুল মাজীদ মামুন রাহমানী

প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর রাসূল সা. বিভিন্ন ফজিলতপূর্ণ দু'আ পাঠ করতেন। বিশেষ করে ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর পাঠ করার মত অনেক ফজিলতপূর্ণ দু'আ হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে। এখানে ১০ টি দু'আ উচ্চারণ, অর্থ ও ফজিলতসহ উল্লেখ করা হলো।
১. জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর দু'আটি ৭ বার পাঠ করবে اللَّهُمَّ أَجِرْنِي مِنَ النَّارِ ‏.‏ উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্ নার। অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন।

ফজিলত : হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিবের পর কারো সাথে কথাবার্তা না বলে সাতবার নিম্নের দোয়াটি পাঠ করে এবং ওই দিনে বা রাতে তার মৃত্যু হয় তাহলে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে। আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৭৯।

২. সুরা ইখলাস, ফালাক্ব ও সুরা নাস, প্রত্যেকটি ৩ বার করে, ফজর ও মাগরিবের পর। ফজিলত : রাসুল সা. বলেন, সকাল-সন্ধ্যায় এগুলো পাঠ করলে সকল প্রকার অনিষ্টতা থেকে হেফাজতের জন্য যথেষ্ট হবে । তিরমিজি, হাদিস নং ৩৫৭৫।
৩. ফজর ও মাগরিবের পর ৩ বার পড়বে।رَضِيتُ باللهِ رَبَّاً، وَبِالْإِسْلَامِ دِيناً، وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيَّاً উচ্চারণ : রাদিতু বিল্লাহি রাব্বান ওয়াবিল ইসলামী দ্বিনান ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যান। অর্থ : আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বিন হিসেবে ও মুহাম্মাদ সা. কে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট।

ফজিলত: আল্লাহর রাসুল সা. বলেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা তিনবার করে দু'আটি পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সন্তুষ্ট করবেন। তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৮৯ : ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৮৭০ ; আবু দাউদ হাদিস : ৫০৭২।
৪ . সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার পাঠ করা

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي، إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْت.

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, খালাকতানি, ওয়া আনা আব্দুকা, ওয়া আনা আলা আহিদকা ওয়া ওয়া’দিকা মাস্তাতা’তু, আউজু বিকা মিন শাররি মা সানা’তু, আবুউ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা, ওয়া আবুউ লাকা বিজাম্বি ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগিফরুয যুনুবা ইল্লা আন্তা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রতিপালক। আপনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি আপনার গোলাম। আমি আপনার ওয়াদা-প্রতিশ্রুতির ওপর যথাসাধ্য আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আমার ওপর আপনার অনুগ্রহ স্বীকার করছি। আবার আমার গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন। কেননা আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ ক্ষমা করতে পারবে না।

ফজিলত : আল্লাহর রাসুল সা. বলেন , যদি কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা ইস্তিগফারটি পড়ে এবং ঐ দিনে বা রাতে ইন্তেকাল করে, তবে সে জান্নাতি হবে। বুখারি, হাদিস : ৬৩০৬।

৫. ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর ৩ বার পড়বে بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ উচ্চারণ : বিসমিল্লা-হিল্লাযি লা ইয়াদুর্‌রু মা‘আস্‌মিহি শাইয়ূন ফিল আরদি, ওয়ালা ফিস্‌ সামায়ি ওয়া হুয়াস্‌ সামিউল আলিম।

অর্থ : আল্লাহ তা‘আলার নামে” যাঁর নামের বরকতে আকাশ ও মাটির কোন কিছুই কোন অনিষ্ট করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।
ফজিলত : প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় যে ব্যক্তি এ দু‘আটি তিনবার পাঠ করবে কোন কিছুই তার কোন অনিষ্ট করতে পারবে না । তিরমিজি, হাদিস নং ৩৩৮৮ ; ইবনু মাজাহ, হাদিস : ৩৮৬৯।

৬. সকাল -সন্ধ্যায় ৩ বার করে পড়বে
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمّ وَالْحَزَنِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ " .
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উযুবিকা মিনাল্‌ হাম্মি ওয়াল্‌ হুয্‌নি, ওয়া আউযুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি ওয়া আউযুবিকা মিনাল জুবনি ওয়াল বুখলি,ওয়া আ’উযু বিকা মিন্‌ গালাবাতিদ্‌-দায়নি ওয়া কাহ্‌রির রিজাল।

অর্থ : ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার নিকট যাবতীয় চিন্তা-ভাবনা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আমি আপনার নিকট দুর্বলতা ও অলসতা হতে আশ্রয় কামনা করছি, আপনার নিকট কাপুরুষতা ও কৃপণতা হতে নাজাত কামানা করছি এবং আমি আপনার নিকট ঋণভার ও মানুষের দুষ্ট প্রভাব হতে পরিত্রাণ চাচ্ছি।

ফজিলত: রাসূল সা. এ দু'আটি শিক্ষা দিয়ে আবু উমামা রা. কে বলেন তুমি সকাল- সন্ধায় উপরোক্ত দু'আটি পড়বে। আল্লাহ তোমার দুশ্চিন্তা দূরীভূত করবেন এবং তোমার কর্জ পরিশোধের ব্যবস্থা করবেন।

আবু উমামা রা. বলেন, অতঃপর আমি ঐরূপ আমল করি, যার ফলশ্রুতিতে আল্লাহ তাআলা আমার চিন্তা-ভাবনা বিদূরিত করেন এবং ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেন। আবু দাউদ, হাদীস : ১৫৫৫।

৭. ফজরের পর ৩ বার পড়বে سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ وَرِضَا نَفْسِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ ‏"‏ ‏.‏ উচ্চারণ: সুবহা-নাল্ল-হি ওয়াবি হাম্‌দিহি আদাদা খল্‌কিহি ওয়া রিদা- নাফ্‌সিহি ওয়াযিনাতা আরশিহি ওয়ামি দা-দা কালিমা-তিহি।

অর্থ : আমি আল্লাহর প্রশংসার সাথে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তাঁর মাখলুকের সংখ্যার পরিমাণ, তাঁর সন্তুষ্টির পরিমাণ, তাঁর আরশের ওজন পরিমাণ ও তাঁর কালিমাসমূহের সংখ্যার পরিমাণ।

ফজিলত : কালিমাটি ফজরের পর ৩ বার পড়লে ফজরের নামাজ যেখানে পড়েছে সেখানে বসে চাশতের সময় ( অর্ধদিবস) পর্যন্ত ইবাদত -বন্দেগীতে লিপ্ত থাকার চেয়েও বেশি পরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। মুসলিম, হাদিস : ৬৮০৬।

৮. ফজর ও মাগরিবের পর আউযুবিল্লাহিস সামিয়িল আলিমি, মিনাশ শাইতানির রজিম ৩ বার পড়ে সূরা হাশরের শেষ ৩ আয়াত ১ বার পড়বে
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ
هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاء الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

উচ্চারণ : হুওয়াল্লা হুল্লাযি লা ইলাহা ইল্লা হুয়া, আলিমুল গাইবি ওয়াশ শাহাদাদতি, হুওয়ার রাহমানুর রাহিম। হুআল্লা হুল্লাযি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল মালিকুল কুদ্দুসুস সালামুল মু’মিনুল মুহাইমিনুল আযিযুল জাব্বারুল মুতাকাব্বির। সুবহানাল্লাহি আম্মা ইউশরিকুন। হুআল্লাহুল খালিকুল বা-রিউল মুছাওয়িরু লাহুল আসমাউল হুসনা। ইউসাব্বিহু লাহু মা ফিস-সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্; ওয়া হুয়াল আযিযুল হাকিম।

অর্থ : তিনিই আল্লাহ তা'আলা, যিনি ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই; তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে জানেন, তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা। তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মাহাত্মশীল।

তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা' আলা তা থেকে পবিত্র। তিনিই আল্লাহ তাআলা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নামগুলো তাঁরই। নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়। সুরা হাশর, আয়াত :২২- ২৪।

ফজিলত : যে ব্যক্তি এই আমল করবে আল্লাহ তায়ালা তাঁর জন্য সত্তর হাজার রহমতের ফেরেশতা নিযুক্ত করে দিবেন। তাঁরা সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঠকারীর জন্য রহমতের দু'আ করবে। সেদিন সে মারা গেলে শহিদের মৃত্যু হাসিল হবে । যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এভাবে পাঠ করবে, সে-ও সকাল পর্যন্ত এই মর্তবা লাভ করবে। তিরমিজি, হাদিস : ২৯২২।

৯. এই দু'আটি ১০০ বার পড়বে «سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ» উচ্চারণ : সুব্‌হানাল্লা-হি ওয়াবিহামদিহি। অর্থ: আল্লাহ তা'আলার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করছি।

ফজিলত : রাসুল সা. বলেন, যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার তাসবিহটি পাঠ করবে তাঁর পাপগুলো মুছে ফেলা হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনারাশির সমান হয়ে থাকে। বুখারি, হাদিস : ৬৪০৫।

১০. কঠিন রোগব্যাধি থেকে রক্ষার জন্য এই দু'আটি পড়বে اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُونِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল জুনুনি, ওয়াল জুযামি, ওয়া মিন সাইয়্যিইল আসকাম।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সব দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে।

লেখক : শিক্ষার্থী, বিন্নূরিয়া ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, করাচি, পাকিস্তান।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ