বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪ ।। ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১ জিলকদ ১৪৪৫


জুমার নামাজ পড়তে যাওয়ায় সেলস এক্সেকিউটিভকে চাকরিচ্যুতির অভিযোগ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

যাকওয়ানুল হক চৌধুরী
সিলেট প্রতিনিধি

মারুফ খান, একটি  বেসরকারী কোম্পানীর হবিগঞ্জ সদর শােরুমের সেলস এক্সিকিউটিভ। গত শুক্রবার (৩০এপ্রিল) জুমার নামাজ পড়তে যাওয়ার অপরাধে তাকে চাকরিচ্যুতির হুমকি দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে মারুফ খান তাৎক্ষণিক এক লাইভে বলেন- মসজিদে যাওয়ার পর ম্যানেজার আমাকে কল দিলে আমি নামাজ না পড়ে সাথে সাথে চলে আসি, তবুও তিনি আমাকে ঘাড় ধরে শোরুম থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন।

লাইভে তিনি বলেন, আমি মারুফ খান, আরএফএল বেস্ট বাই, হবিগঞ্জ সদর শোরুমের একজন সেলস্ এক্সিকিউটিভ। আমি একজন মুসলমান! নামাজ আদায় করা আমাদের ইসলাম ধর্মে প্রত্যেকের জন্য ফরয। আর সেই ফরয নামাজ (পবিত্র জুম্মার নামাজ) পড়তে যাবার অপরাধে আজ আমাকে শোরুম থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। আজানের পর আমাদের শোরুম ম্যানেজারকে ফোন দিই। কিন্তু তিনি ফোন না ধরে কেটে দেন। তিনি ফোন ধরবেন কিভাবে তিনি তো প্রতিদিনের ন্যায় কাজ ছেড়ে বাহিরে গিয়ে আরাম করছিলেন! তিনি ফোন না ধরাতে কাপড় বদলিয়ে আমরা তিনজন শোরুম বন্ধ করে মসজিদে চলে যাই।

ঠিক ঐ মূহুর্তে ম্যানেজার আমাকে ফোন দিয়ে বলেন যে, আমি কার অনুমতি নিয়ে শোরুম বন্ধ করছি? সে আমাকে বলে যে, আমি চাকরি করতে চাই নাকি নামাজ পড়তে চাই? আমি তখন বললাম, স্যার! চাকরি করি বলে কি আমাকে নামাজ ছেড়ে দিতে হবে? তিনি আমাকে ওই কথা শুনে হুমকি দেন যে, আমাকে ঘাড় ধরে শোরুম থেকে বের করে দিবেন এবং আমাকে চাকরি থেকেও বের করে দিবেন। ওই মূহুর্তে আমি নামাজ না পড়ে মসজিদ থেকে চলে আসি এবং শোরুম খুলি। এরপর ম্যানেজার এসে আমাকে শোরুম থেকে বের হয়ে যেতে বলে। আমি কিছু বুঝে উঠতে না পেরে কী করবো না করবো? কোনো কিছু না ভেবে চলে আসি।

শুধুমাত্র মসজিদে গিয়ে পবিত্র জুম্মার নামাজ পড়ার অপরাধে আমাকে কাজ ও শোরুম থেকে বের করে দেয়া হলো। চাকরি করি তাই বলে কি আমি আমার ধর্ম ও নামাজ আদায় করতে পারবো না। নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছি এটাই কি আমার অপরাধ?
নামাজ পড়া যদি অপরাধ হয়ে থাকে! আর সেই অপরাধে যদি চাকুরিচ্যুত হতে হয়! তাহলে আমি আমার আল্লাহ ও রাসুলের বিধান পালন করতে গিয়ে সেই চাকরি করবো না। দোয়া করবেন, আল্লাহ ভরসা।

তার এ লাইভের পর ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই নিন্দা প্রকাশ করতে থাকেন।
পরের দিন শনিবার (১মে ২০২১) কোম্পানির পক্ষ থেকে তাদের ভেরিফাই পেইজ থেকে একটি লিখিত বক্তব্য দেন, এতে তারা তদন্তের কথা জানান, এবং বলেন- ‘অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই ম্যানেজারের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে’।

[caption id="" align="aligncenter" width="612"]No description available. কোম্পানিটির লিখিত বক্তব্য।[/caption]

লিখিত বক্তব্যে কোম্পানিটি বলে, হবিগঞ্জ সদর বেস্ট বাই শোরুমের একজন সেলস এক্সিকিউটিভকে নামাজ পড়তে যাওয়ার অপরাধে! শোরুম থেকে বের করে দেয়া হয়েছে-অভিযোগকারীর পক্ষ থেকে এমন একটি দাবি শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এমন একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। এ ঘটনায় বেস্ট বাই কর্তৃপক্ষ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দের সমন্বয়ে একটি তদন্ত টিম গঠন করেছে এবং তারা এরই মধ্যে সেখানে প্রকৃত ঘটনা জানতে কাজ শুরু করেছে। এছাড়া অভিযোগকারীর অভিযোগের ভিত্তিতে সাময়িকভাবে শোরুম ম্যানেজারকে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

বেস্ট বাই কর্তৃপক্ষ সবসময় সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এ ঘটনায় অগণিত ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে মর্মাহত করেছে যার জন্য আমরা অত্যন্ত ব্যথিত। আমরা আমাদের স্থাপনাগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধর্মীয় রীতিনীতি পালনের জন্য সব সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা রেখেছি। এছাড়া সকলকে ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে উৎসাহ দেয়াও আমাদের প্রতিষ্ঠানের অন্যতম একটি পলিসি।

প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পারি, মূলত ঘটনাটি শোরুম ম্যানেজার ও অভিযোগকারীর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। আমাদের কোম্পানির নীতি অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মীকে চাকুরীচ্যুত করতে পারে না এবং এ ধরনের কর্মকান্ডকেও সমর্থন দেয় না। যদি কেউ ব্যক্তিগতভাবে এমন উদ্যোগ নেয়, তবে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পলিসি রয়েছে।

উক্ত ঘটনাটি নিয়ে বেস্ট বাই এর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কাজ করছে এবং ওই ম্যানেজারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ