বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


কাদিয়ানি ধর্মের অনুসারীরা যেকারণে অমুসলিম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি আবদুল মাজিদ: কাদিয়ানীদের কাফের হওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মতামত এবং সিদ্ধান্ত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ১৯০৮ সালে ২৬ মে লাহোরে কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তার মৃত্যুর আগে ও পরে অসংখ্য রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও আদালত তাকে ও তার অনুসারীদেরকে কাফের ও অমুসলিম ঘোষণা করে। নিম্নে তার একটি তালিকা পেশ করছি।

❖ ইসলামী সম্মেলন সস্থার (ওআইসি) সিদ্ধান্ত : ১৯৮৫ সালে ২২ থেকে ২৮শে ডিসেম্বর ছয় দিন ব্যাপী সৌদি আরবের জেদ্দায় ওআইসির অঙ্গসংগঠন ইসলামী ফেকাহ একাডেমির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কাদিয়ানী ফিৎনা নিয়ে আলোচনা হয়। সেই আলোচনায় যে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় তা নিম্নরূপ: যেহেতু মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নবুওয়াত, রেসালাত এবং তার উপর ওহী নাযিলের দাবি করেছে এবং শরীয়তে ইসলামী দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেষ নবী হওয়াকে অস্বীকার করেছে ফলে মির্যা কাদিয়ানী ও তার সকল অনুসারী কাফের ও মুরতাদ।

একইভাবে লাহোরী সম্প্রদায়ের লোকেরাও কাদিয়ানীদের মত কাফের এবং মুরতাদ। যদিও তারা মির্যা গোলাম আহমদকে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যিল্লি বুরুযী বলে আখ্যায়িত করে থাকে। (ইসলামী ফেকাহ একাডেমীর ২য় সম্মেলনের উপর প্রকাশিত
পত্রিকা: সংখ্যা ২, প্রথম খণ্ড ১৪০৭ হি: ১৯৮৬ ইং)

ওআইসির ফেকাহ একাডেমীর সিদ্ধান্ত ইসলামী সম্মেলন সংস্থার ৫০টি দেশেরই সরকারী সিদ্ধান্তরূপে গণ্য হয়। কারণ সকল দেশের সরকারই এর সদস্য। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কাদিয়ানীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই।

রাবেতাতুল আলম আল ইসলামীর সিদ্ধান্ত: ১৯৭৪ সালের ১০ই এপ্রিল মুতাবিক ১৩৯৪ হিজরী রবিউল আওয়াল মাসে রাবেতার সদর দফতর মক্কা মুকাররমায় ১৪৪টি ইসলামী সংগঠনের এক আন্তর্জাতিক মহা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যা ছিল মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত সমস্ত মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধি সম্মেলন। এ সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাশ হয়। তা হল, কাদিয়ানীরা অমুসলিম, কাফের। এ প্রস্তাবটি উম্মতের সাম্প্রতিক কালের ইজমা তথা ঐকমত্যের মর্যাদা রাখে। (আন্ নদওয়া (সৌদি আরবের প্রসিদ্ধ জাতীয় দৈনিক) ১৪ই এপ্রিল ১৯৭৪) প্রস্তাবটি নিম্নরূপ : কাদিয়ানিয়্যাত একটি বাতিল ধর্ম। নিজেদের নোংরা উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য কাদিয়ানীরা মুসলমানদের ছদ্মবেশ ধারণ করেছে। এরা ইসলামের ভিত্তিসমূহকে ধূলিসাৎ করে দিতে চায়। এদের ইসলাম দুশমনি নিম্ন লিখিত বিষয় থেকে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।
১. মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নবী হওয়ার দাবি।
২. কুরআনের আয়াতসমূহকে বিকৃত করা।
৩. জিহাদের বিধান বাতিল হওয়ার ফতোয়া প্রদান।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ কাদিয়ানী ধর্মের গোড়াপত্তন করে এবং তাদেরই ছত্র ছায়ায় এরা কর্মতৎপর হয়। কাদিয়ানীরা সর্বদা মুসলিম উম্মাহর স্বার্থের সাথে গাদ্দারী করে এসেছে এবং সাম্রাজ্যবাদ ও ইহুদীবাদের যোগসাজশে ইসলামের শত্রুদের সহায়তা করে আসছে। এ শক্তিগুলোর সহায়তায় এরা সব সময় ইসলামের মৌলিক আকীদা-বিশ্বাসের পরিবর্তন ও বিকৃতি সাধন এবং তার মুলোৎপাটন করার জন্য বিভিন্ন পন্থায় তৎপর। এ হল রাবেতার সিদ্ধান্তসমূহের সংক্ষেপরূপ।

মু’তামিরুল আলম আল ইসলামীর সিদ্ধান্ত: এই সংস্থাটি জাতিসংঘসহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থায় বেসরকারী সদস্য হিসাবে স্বীকৃত। তারাও কাদিয়ানীদেরকে ইসলাম ধর্ম বহির্ভূত একটি কাফের গোষ্ঠি হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে।

জামিয়া আযহার মিশরের সিদ্ধান্ত: মুসলিম বিশ্বের অন্যতম আলোচিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মিশরের জামেয়া আজহার (স্থাপিত ৯৭২ইং) কাদিয়ানীদেরকে ইসলাম বহির্ভূত কাফের বলে ফতোয়া প্রদান করে। বিভিন্ন দেশ ও সরকারের সিদ্ধান্ত-
❖ ১৯১৯ইং সালে আফগান সরকার কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করে।
❖ ১৯৭৪ইং সালে সৌদী সরকার কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম কাফের ইসলাম বহির্ভূত একটি সম্প্রদায় বলে ঘোষণা দেয়।
❖ ১৯৭৪ইং সংযুক্ত আরব আমিরাত কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম কাফের ঘোষণা দেয়।
❖ ১৯৭৪ইং সালে বাহরাইন কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম কাফের ঘোষণা দেয়।
❖ ১৯৭৪ইং সালে কাতার কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম কাফের ঘোষণা দেয়।
❖ ১৯৫৭ইং সালে সিরিয়া কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম কাফের ঘোষণা দেয়।
❖ ১৯৫৮ইং সালে মিশর কাদিয়ানীদেরকে অমুসলিম কাফের ঘোষণা দেয় এবং তাদের বিরুদ্ধে আইন পাশ করে।
❖ ১৯২৭ইং সালে মরিসাশের প্রধান বিচারপতি কাদিয়ানীদেরকে কাফের ঘোষণা দেয়। (সাপ্তাহিক ইন্টারন্যাশনাল খতমে নবুওয়াত, করাচী, ১৬-২২ ডিসেম্বর ১৯৮৮, শুমার নং ২৮)
❖ ১৯৮২ইং সালে মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী জনাব মুসা তিহাম কাদিয়ানীদেরকে কাফের ঘোষণা দেয়।
❖ ১৯৯০ইং এর দশকে আফ্রিকা মহাদেশের দেশ গাম্বিয়া কাদিয়ানীদেরকে কাফের ঘোষণা করে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইয়াহইয়া আবু বকর মির্যা কাদিয়ানী ও তার অনুসারীদেরকে কাফের বলে ঘোষণা দেয়।
❖ ১৯৩৫ইং সালে তুরস্ক কাদিয়ানীদেরকে কাফের বলে সিদ্ধান্তদেয়।
❖ ১৯৭৪ইং সালে পাকিস্তানের জাতীয় এসেম্বলি সর্বসম্মতিক্রমে ৭ই সেপ্টেম্বর বিকাল ৪:৩৫ সময় কাদিয়ানীদেরকে কাফের অমুসলিম ঘোষণা দেয়। পাকিস্তানের জাতীয় এসেম্বলি দীর্ঘ বত্রিশ দিন কাদিয়ানী নেতা ও তাদের তৃতীয় খলীফা মির্যা নাসেরের সাথে শুনাশুনানির পর কাদিয়ানীদেরকে কাফের ঘোষণা দেয়। তখন পাকিস্তান পিপল্স পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো ক্ষমতায় ছিলেন।

কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ আদালতের একটি রায়: ১৯৩৫ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারী ব্রিটিশ শাসনামলে ভাওয়ালপুরের জেলা জজ মুহাম্মদ আকবর সাহেব রায় দিয়েছিলেন যে, কাদিয়ানীরা কাফের এবং ইসলাম থেকে বের হয়ে গেছে। সেই মামলাটি “মুকাদ্দামায়ে ভাওয়ালপুর” হিসাবে পরিচিত। মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল ১৯২৬ সালে। রায় হয়েছিল ১৯৩৫ সালে। দীর্ঘ দশ বছর শুনানির পর প্রায় পৌঁনে দুইশত পৃষ্ঠার এক রায়ে জেলা জজ মুহাম্মদ আকবর সাহেব রায় দেন, কাদিয়ানীরা কাফের, ইসলাম তাদের ধর্ম নয়। (উপরের তথ্যগুলোর জন্য দেখুন, তাহাফফুজে খত্মে নবুওয়াত কি সদ সালা তারীখ, মাওলানা মুশতাক আহমদকৃত, পৃষ্ঠা ৭৭৩-৮০৫)

কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি রায় ১৯৮৬ইং সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর মাননীয় হাইকোর্টের বিজ্ঞ বিচারপতি সুলতান হোসাইন আহমেদ খান এবং বিচারপতি এম মাহমুদুর রহমান সরকার কর্তৃক কাদিয়ানীদের একটি বই বাজেয়াপ্ত করা সঠিক ছিল এই মর্মে রায় দিয়ে কাদিয়ানীদের দরখাস্ত খারিজ করে দেন।

কাদিয়ানীরা তাদের দরখাস্তের মাধ্যমে সরকারের বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত অবৈধ ছিল এই মর্মে আদালতের রায় প্রত্যাশা করেছিল। কিন্তু আদালত কাদিয়ানীদের দরখাস্ত খারিজ করে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মতামত দেন। বইটির নাম ছিল কাদিয়ানীদের লেখা “ইসলাম ও নবুওয়াত”। বইটিতে তারা ‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী নয়; বরং তার পরও নবুওয়াত জারী আছে’ এমন ইসলাম ও কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী মতামত তুলে ধরে।

তারপর বিজ্ঞ বিচারপতিদ্বয় বইটি ‘বাজেয়াপ্তের ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল’ এমন মত প্রকাশ করে রায়ে বলেন: “প্রকৃতপক্ষে পুস্তকটিতে লিখিত বক্তব্য অপরাধমূলক। যা মুসলমানদের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে লিখিত।

তিনি বলেন, এখন বলতে দ্বিধা নেই যে, প্রকৃতপক্ষে পুস্তকটির মাধ্যমে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে ইচ্ছাকৃত আঘাত হানা হয়েছে, যা অত্যন্ত ক্ষতিকারক। আহমদীয়া সম্প্রদায় (কাদিয়ানী) যদিও তাদের ধর্ম চর্চার অধিকার আছে কিন্তু মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে নয়। ফলে সরকার ন্যায়সঙ্গতভাবেই পুস্তকটি বাজেয়াপ্ত করেন। অতএব বাদীর দায়েরকৃত দরখাস্তটি ১০২ অনুচ্ছেদের আলোকে খারিজ করা হল। (ডি. এল. আর, (উখজ) ভলিয়ম ৪৫, পৃ. ১৮৫-১৮৯)

 

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সিদ্ধান্ত-
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামের সেবা করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেই ইসলামিক ফাউন্ডেশন কাদিয়ানীদেরকে কাফের ঘোষণা দিয়ে কয়েক বছর পূর্বে একটি বই প্রকাশ করেছে। বইটির নাম “কাদিয়ানীবাদের শবযাত্রা” ২য় মুদ্রন ২০১৫ইং। সেই বইয়ের ১০ ও ১২ পৃষ্ঠায় স্পষ্ট লেখা আছে কাদিয়ানীরা কাফের অমুসলিম।

সবকিছুর পর এখন জানা দরকার আসলে কাদিয়ানীরা কাফের কেন? প্রত্যেক সমাজ, শ্রেণী ও গোষ্ঠির কিছু অপরিহার্য বিশ্বাস থাকে যা নিজের মধ্যে ধারণ করা দ্বারা ব্যক্তি উক্ত গোষ্ঠির মধ্যে গণ্য বলে বিবেচিত হয়। যেমন কেউ আওয়ামীলীগের কর্মী বলে দাবি করলে তাকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্থপতি।

আওয়ামীলীগ নেতা বা কর্মী হতে চায় অথচ শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের স্থপতি বলে বিশ্বাস করে না সে যেমন মোটেও আওয়ামীলীগের নেতা বা কর্মী হওয়া সম্ভব নয় তেমনি ইসলামেরও কিছু বিশ্বাস এমন আছে যা অন্তরে ধারণ করা ছাড়া কেউ নিজেকে ইসলামের অনুসারী বা মুসলমান বলে দাবি করতে পারবে না। সে সকল বিশ্বাসের মধ্যে অন্যতম হল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী বা আল্লাহর পক্ষ থেকে শেষ বার্তাবাহক।

তারপর আর কোন ধরণের কোন নবী বা রাসূল কেয়ামত পর্যন্ত আসবে না। এই বিশ্বাসের সাথে দ্বিমত পোষণকারী কখনই মুসলমান তথা ইসলামের অনুসারী হতে পারে না। মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী এই বিশ্বাসকে ধ্বংস করে নিজেই নবী ও রাসূল হওয়ার দাবি করেছেন। ফলে সে ও তার অনুসারীরা কুরআন সুন্নাহর দৃষ্টিতে কাফের।

যেমন মির্যা কাদিয়ানীর নবুওয়াতের দাবি যা কাফের হওয়ার প্রথম কারণ: মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বলেন-
১. সত্য খোদা তিনি যিনি কাদিয়ানে নিজের রাসূলকে পাঠিয়েছেন। (রুহানী খাযায়েন ১৮/২৩১)
২. আমার দাবি আমি নবী ও রাসূল। (রুহানী খাযায়েন ১৮/২১১)
৩. আমি ঐ খোদার কসম করে বলছি যার হাতে আমার জান, তিনিই আমাকে পাঠিয়েছেন এবং নবী নাম দিয়েছেন। (রুহানী খাযায়েন ২২/৫০৩)

কাদিয়ানী এমন একটা প্রতারক গোষ্ঠি যারা যা বলে তা বিশ্বাস করে না আর যা বিশ্বাস করে তা বলে না। এজন্য মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নবী দাবি করার বিষয়টি তারা প্রকাশ করে না, যা অনেক মুসলমানকে তাদের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলেছে।

মির্যা কাদিয়ানী ও তার জামাত কাফের হওয়ার দ্বিতীয় কারণ : হযরত ঈসা আ. পিতা ছাড়া জন্ম হওয়ার বিশ্বাসকে অস্বীকার করা-মির্যা কাদিয়ানী ও তার জামাতের কাফের হওয়ার দ্বিতীয় কারণ। যা ইসলামের অপরিহার্য আরেকটি বিশ্বাসকে অস্বীকার করা সেটা হল, কুরআন ও সুন্নাহর বর্ণনা ও ১৪শ বছর যাবৎ ইসলামের অকাট্য বিশ্বাস হযরত ঈসা আ. কে আল্লাহ তাআলা পিতা ছাড়া সৃষ্টি করেছেন। মির্যা কাদিয়ানী এই অকাট্য বিশ্বাস কে অস্বীকার করে বলেছেন, হযরত মারয়ামের পুত্র ঈসা তার পিতা ইউসুফের সাথে বাইশ বছর পর্যন্ত কাঠের কাজ করেছেন। (রুহানী খাযায়েন ৩/২৫৪-২৫৫) অন্য এক জায়গায় বলেন, ঈসা আ.-এর চার ভাই দুই বোন ছিল। তারা সকলেই ঈসা আ. এর আপন ভাই বোন ছিল। অর্থাৎ ইউসুফ ও মারয়ামের সন্তান ছিল। (রুহানী খাযায়েন ১৯/১৮)

মির্যা কাদিয়ানী ও তার জামাত কাফের হওয়ার তৃতীয় কারণ: কুরআন-সুন্নাহ ও ইসলামের চৌদ্দশত বছর ধরে এ বিশ্বাস চলে আসছে যে, ঈসা আ. আসমানে চলে গেছেন। কেয়ামতের পূর্বে আবার আসমান থেকেই নাযিল হবেন। মির্যা কাদিয়ানী এই বিশ্বাসকে অস্বীকার করে নিজেই সেই ঈসা হওয়ার দাবি করল। আর বললো, ঈসা আ. মারা গেছেন। কাশ্মিরে তার কবর। দেখুন তার বক্তব্য: “ঈসা আ. মারা যায়নি-এটা বলা মস্তবড় শিরক এবং নেকীকে ধ্বংসকারী এবং বিবেক বহির্ভূত।” (রুহানী খাযায়েন ২২/৬৬০) “ঈসা আ. গোপনে জমীনের উপর দিয়ে পালিয়ে কাশ্মির চলে আসেন এবং সেখানেই মারা যান। তোমরা শুনেছ, শ্রীনগর খান ইয়ার মহল্লায় তার কবর।” (রুহানী খাযায়েন ১৯/৫৭-৫৮)

মির্যা কাদিয়ানী ও তার জামাত কাফের হওয়ার চতুর্থ কারণ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননা মির্যা কাদিয়ানী ও তার অনুসারীরা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননা মূলক যেসব জঘন্য বক্তব্য তার বইতে লিখেছেন তার কিছু চিত্র দেখুন:
১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীরা খ্রিষ্টানদের হাতের পানীয় খেত অথচ প্রসিদ্ধ আছে যে, তাতে শুকরের চর্বি থাকত। (মির্যা কাদিয়ানীর চিঠি, আল-ফযল ২২-২-১২২৪)
২. যিল্লী (ছায়া) নবুওয়াত মসীহে মওউদের (মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী) পা’কে পিছনে নেয়নি; বরং সামনে বাড়িয়েছে এবং এত সামনে বাড়িয়েছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাঁধ বরাবর এনে দাঁড় করিয়েছে। (কালিমাতুল ফসল১১৩, মির্যা কাদিয়ানীর পুত্রকৃত)
৩. এটা সম্পূর্ণ বাস্তবধর্মী একটা কথা যে, প্রত্যেক ব্যক্তিই (আধ্যাত্মিকতার পথে) উন্নতি করতে পারে এবং উচ্চ আসনে সমাসীন হতে পারে। এমনকি মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও সামনে বেড়ে যেতে পারে-নাউজুবিল্লাহ। (আল ফযল ১৭-৭-১৯২২, এটি কাদিয়ানীদের নিজস্ব পত্রিকা)
৪. মুহাম্মদ পুনরায় আগমন করেছেন আমাদের মধ্যে এবং পূর্বের থেকে নিজ মহিমায় আরও বেশি অগ্রসর হয়েছেন। যে পূর্ণাঙ্গ মুহাম্মদকে দেখতে চাও সে কাদিয়ানে গোলাম আহমদকে দেখে যাও। (বদর, কাদিয়ান ২৫-১০-১৯০৬) এই বক্তব্যে মির্যা সাহেবকে পূর্ণাঙ্গ মুহাম্মদ আর রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অপূর্ণাঙ্গ মুহাম্মদ বলে চরম অবমাননা করা হয়েছে।
৫. মির্যা সাহেব নিজে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেও দাবি করতেন। (রুহানী খাযায়েন ১৮/২০৭)
৬. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বারা দ্বীন প্রচারের কাজ পরিপূর্ণভাবে হয়নি। আমিই পূর্ণ করেছি। (রুহানী খাযায়েন ১৭/২৬৩ দ্র. টিকা) এটা মির্যা কাদিয়ানীর উক্তি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে এমন কুৎসিত অবমাননাকর বক্তব্য সে তার বই ও পত্র-পত্রিকায় লিখে গেছে। কোন নবীর অবমাননা করা কুফুরী। কারণ আল্লাহ তাদেরকে সৃষ্টির মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত করেছেন। এই অবমাননার কারণে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ও তার জামাতকে কাফের মনে করা হয়।

অন্যান্য নবীদের ব্যাপারে অবমাননাকর বক্তব্য:
অন্যান্য নবীদের সাথেও অবমাননাকর আচরণ করে তিনি আলোচিত হয়েছেন এবং এটাও একটা কুফুরী। হযরত ঈসা আ. সম্পর্কে বলেন⎯
১. ইউরোপের লোকদের মদ এইভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করার কারণ হল, হযরত ঈসা আ. মদ পান করতেন। তা কোন রোগের কারণে অথবা পুরাতন অভ্যাসের কারণে। (রুহানী খাযায়েন ১৯/৭১)
২. স্মরণ থাকা দরকার যে, তার (ঈসা আ.) কোন এক পর্যায়ের মিথ্যা বলার অভ্যাস ছিল। (রুহানী খাযায়েন ১১/২৮৯)
৩. দুনিয়াতে নবীগণ কম আসেননি। তবে আমি কারো চেয়ে জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় কম নই। (রুহানী খাযায়েন ১৮/৪৭৭) এই হল নবীদের মত পবিত্রাত্মাদের সাথে তার আচরণ। এসকল কারণে কাদিয়ানীরা বিশ্ব মুসলিমের কাছে কাফের বলে স্বীকৃত। কুরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিতে এসকল বক্তব্য প্রদানকারী ও বিশ্বাসী অমুসলিম কাফের।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ