বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫ ।। ৫ কার্তিক ১৪৩২ ।। ৩০ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম :
জামায়াতের রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার প্রশ্নই আসে না: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ময়মনসিংহে ইসলামি বইমেলা শুরু ১৩ নভেম্বর ভারতের পুনে দুর্গে নামাজ আদায় করা নিয়ে দেশভর তোলপাড় ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের আরও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে: শায়খে চরমোনাই কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত 'বাংলাদেশ' নামের পত্রিকা : স্বাধীনতার ৩৩ বছর আগের এক ঐতিহাসিক দলিল ভারতের সঙ্গে ১০ চুক্তি বাতিল হওয়ার খবরটি ভুল : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নাতির কাছে কায়দা শিখছেন অভিনেতা মিশা সওদাগর জামায়াত সেক্রেটারি পরওয়ারের বক্তব্য ঔদ্ধত্যপূর্ণ: এনসিপি ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস এ৩৩০ সম্পন্ন হলো আবু ত্বহা ও সাবিকুন নাহারের তালাক

প্রচলিত ১০টি হারাম কাজ, যেখানে ডুবে বিশ্ব মুসলিম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম
আওয়ার ইসলাম

হারাম  আরবি শব্দ, যার অর্থ ‘নিষিদ্ধ’ বা অবৈধ। শরিয়তে হারাম হচ্ছে এমন জিনিস যা কুরআন ও সুন্নাহের ভিত্তিতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।ইসলামি শরিয়তে হারাম অনেক জিনিস রয়েছে যা আমরা জানি ও মানি। কিন্তু এমন কিছু জিনিস রয়েছে যেগুলো হারাম জেনেও আমরা করতে দ্বিধা করি না।

অথচ হারাম কাজ জেনে বুঝে করা কবিরা গুনাহ। আর একটি কবিরা গুনাহ জাহান্নামে পৌঁছে দিতে সক্ষম। তবে আল্লাহ যাকে ক্ষমা করেন সেটা ভিন্ন কথা। এমন কতগুলো জিনিস নিয়েই আজকে কথা বলবো ।

১. গান শোনা
গান শোনা কবিরা গুনাহ। কিন্তু আমরা অনেকে তা মানতেই রাজি না। কিন্তু বড় বড় আলেমগণ একে হারাম বলেই স্বাব্যস্ত করে থাকেন।

ইমাম মুহাম্মদ রহ. জামে সগির গ্রন্থর ১৩৯ পৃষ্ঠায় বলেন, হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মত যেনো বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার থেকে মুক্ত থাকে।

২. মদ ও জুয়া খেলা
মদ ও জুয়া ইসলামের সবচেয়ে বড় পাপগুলোর মধ্যে একটি। আল্লাহ ও তাঁর নবি সা. আমাদের মদ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।

সুরা নিসার ৪৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ঈমাণদারগণ! তোমরা যখন নেশাগ্রস্ত থাক, তখন নামাযের ধারে-কাছেও যেওনা, যতক্ষণ না বুঝতে সক্ষম হও যা কিছু তোমরা বলছ, আর (নামাযের কাছে যেও না) ফরয গোসলের আবস্থায়ও যতক্ষণ না গোসল করে নাও।

কিন্তু মুসাফির অবস্থার কথা স্বতন্ত্র আর যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে থাক কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি প্রস্রাব-পা য়খানা থেকে এসে থাকে কিংবা নারী গমন করে থাকে, কিন্তু পরে যদি পানিপ্রাপ্তি সম্ভব না হয়, তবে পাক-পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-তাতে মুখমন্ডল ও হাতকে ঘষে নাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা ক্ষমাশীল। (সুরা নিসা-৪৩)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়।

আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও, নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর যা বাঁচে তাই খরচ করবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্দেশ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করতে পার। (সুরা বাকারা-২১৯)

৩. নিজকে বা অন্যকে আঘাত করা
নিজের শরীরে- গায়ে আঘাত করা। দু:খ পেলে বা কষ্ট পেলে নিজের বুকে-মুখে আঘাত করা।
এটা সম্পূর্ণ হারাম। অন্যকে আঘাত করার ব্যাপারেও একই কথা।  আল্লাহ বলেন,

হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা'আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু। (সুরা নিসা-২৯)

৪. সুদ খাওয়া
রিবা (সুদ) ইসলামে কখনোই অনুমোদিত নয়।কারণ এটি একটি পদ্ধতি যা দরিদ্রকে দরিদ্র ও ধনীকে আরো বেশি ধনী করে তোলে!

সূরা বাকারার ২৭৫-২৭৯ নং আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘যারা সুদ খায় তারা জিনে ধরা পাগল ব্যক্তির মতো হাশরের মাঠে দাঁড়াবে। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে, ব্যবসা তো সুদের মতোই।

অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন। প্রতিপালকের নির্দেশ আসার পর যে ব্যক্তি বিরত হয়েছে, সে পূর্বে যা নিয়েছে তা তারই থাকবে।

তার ব্যাপার আল্লাহর এখতিয়ারে। কিন্তু এ নির্দেশের পরেও যারা সুদে জড়িত হবে তারা জাহান্নামে যাবে। তারা চিরকাল সেখানেই থাকবে।

আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-খয়রাতকে বর্ধিত করেন। কোনো অস্বীকারকারী পাপীকে তিনি পছন্দ করেন না।

হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাক; তবে সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও।

যদি না ছাড় তবে জেনে রাখ, এটা আল্লাহ ও তার রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধ। কিন্তু তোমরা যদি তওবা করো, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই থাকবে। তোমরা অত্যাচার করবে না, তোমরা অত্যাচারিত হবে না।’

৫. পুরুষের স্বর্ণ ব্যবহার
পুরুষদের স্বর্ণ ব্যবহার হারাম। তবে তা মহিলাদের জন্য জায়েয বা বৈধ। স্বর্ণ ব্যবহারে নারীদের কোনো সাওয়াব নাই। অনেকে মনে করে নারীদের গহনা ব্যবহার করলে সাওয়াব হয়।কিন্তু বিষয়টি এমন না।

আল্লাহ তায়ালা পুরুষদের স্বর্ণ  ব্যবহার করা হারাম করলেও তা নারীদের জন্য বৈধ। তবে সাওয়াবের নয়। তবে তারা যদি শুধু মাত্র স্বামীকে খুশি করতে স্বর্ণ পরিধান করে তাহলে তা সাওয়াবের হবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, তারা কি এমন ব্যক্তিকে আল্লাহর জন্যে বর্ণনা করে, যে অলংকারে লালিত-পালিত হয় এবং বিতর্কে কথা বলতে অক্ষম (সুরা যুখরূপ-১৮)

৬. হস্তমৈথুন হারাম
আজকের পৃথিবীতে ঘরে ঘরে ইন্টারনেট তাই মানুষও খুব সহজেই খারাপ দুনিয়ায় বিচরণ করতে সক্ষম হয়। তাই তাদের নৈতিক অবক্ষয় খুব দ্রুতই হচ্ছে।এ ক্ষেত্রে যারা যুবক তারা জড়িয়ে পড়ছে খরাপ কাজে।

জিনা ব্যবিচারে লিপ্ত হচ্ছে। আবার কেউ কেউ হস্তমৈথুনের মত জঘণ্য কাজেও নিজেদের জড়িয়ে ফেলছে। অথচ ইসলামে তা জঘণ্য অপরাদ।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন,নাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমরা কতক যুবক ছিলাম, আর আমাদের কোন কিছু ছিল না।

এই হালতে আমাদেরকে রাসুলুল্লাহ বলেন,  হে যুব সম্প্রদায়  তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিয়ে করে। কেননা, বিয়ে তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান হিফাজত করে এবং যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম পালন করে। কেননা, সওম তার যৌনতাকে দমন করবে। (বোখারি-৫০৬৬)

৭. আল্লাহ নাম ছাড়া অন্য করো নামে পশু জবাই করা
এমনকি যদি কোন মুসলিম আল্লাহ নাম বিসমিল্লাহ্ আল্লাহ ও আকবার না বলে একটি পশুকে হত্যা করে তবে তা হারাম হবে! তাই পশু জবাই করতে জবাইকারী বলবে বিসমিল্লাহ আল্লাহ আকবার।

৮. শরীরে ট্যাটু বানানো
শরীরে ট্যাটু অঙ্কিত করা কোনভাবেই ইসলামে জায়েজ নেই। কঠোরভাবে ইসলামে নিষিদ্ধ। হাদিস শরিফে রাসুল সা.  এ ব্যাপারে নিষেধ করেছেন।

৯. আত্মহত্যা করা
এই যুগে আমরা প্রায়শই মানুষকে আত্মহত্যা করতে দেখি। বিশেষদ তরুণদের মধ্যে এই প্রবণতা অনেক বেশি।  আত্মহত্যা করা সম্পূর্ণ হারাম।

১০. স্ত্রী কে প্রহার করা
স্ত্রীকে কোনো কারণ ছাড়াই আঘাত করা মহাপাপ। কারণ আল্লাহ তায়ালা বিবাহ এক অর্পূর্ব
ভালোবাসার সেতুবন্ধন। ই তাকে ভারোবাসা দিয়ে আগলে রাখতে হবে। নারী জাতিকে আল্লাহ তায়ালা পুরুষের পাজরের বাঁকা হাড় থেকে। তাই তাদের সঙ্গে নমনীয় আচরণ করবে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে এই হারাম বিষয়গুলো জেনে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। পাশাপাশি নিজের পরিবার এবং আত্মীয় স্বজনদেরও বিরত রাখার তাওফিক দিন। অঅমিন।

দ্যা ইসলামিক ইনফরমেশন অবলম্বনে লিখেছেন আব্দুল্লাহ তামিম। 

আরও পড়ুন: জান্নাতুল বাকি: যেখানে ঘুমিয়ে নুরানি কাফেলা

আরএম-


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ