মাথায় হিজাব, হাতে কোরআন আর মুখে ইরানি বিপ্লবের প্রশংসা—এই নিখুঁত ইসলামি নারী পরিচয়ের আড়ালে লুকিয়ে ছিল ভয়ঙ্কর এক ষড়যন্ত্র। ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা দাবি করেছে, এই নারী আসলে ছিলেন ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ-এর সদস্য। নাম ক্যাথরিন পেরেজ সকদাম, যিনি ছিলেন ব্রিটিশ-ফরাসি বংশোদ্ভূত একজন নমুসলিম।
২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সাংবাদিক, গবেষক ও ইসলামি চিন্তাবিদের ছদ্মবেশে বিভিন্ন সময়ে ইরানে প্রবেশ করেন ক্যাথরিন।
তিনি ইরানপন্থী লেখিকা হিসেবে পরিচিতি পান, এমনকি তার লেখা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সরকারি ওয়েবসাইটেও ছাপা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তার সবচেয়ে ভয়ানক কৌশল ছিল—ইরানের শীর্ষ সামরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের স্ত্রীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব, আড্ডা, কথোপকথনের মাধ্যমে গোপন তথ্য হাতিয়ে নিতেন ক্যাথরিন। এসব তথ্য তিনি রেকর্ড করে পাঠাতেন মোসাদে।
ইরানি গোয়েন্দারা মনে করে, ক্যাথরিনের সরবরাহ করা গোপন তথ্যের ভিত্তিতেই ২০২০ ও ২০২১ সালে ইরানের একাধিক পরমাণু বিজ্ঞানী ও সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, আজও ইসরায়েলের বিভিন্ন টার্গেটেড অপারেশনে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্যাথরিনের সংগৃহীত পুরনো তথ্যভাণ্ডার।
২০২১ সালের শেষ দিকে ইরানের গোয়েন্দারা তার গতিবিধি নিয়ে সন্দিহান হলে ক্যাথরিন ইরান ত্যাগ করেন। তবে যাওয়ার আগে তিনি রেখে যান একটি ভয়াবহ ইতিহাস—যেখানে নারীত্ব, ধর্মীয় মুখোশ ও বুদ্ধিমত্তাকে অস্ত্র বানিয়ে দুর্ভেদ্য নিরাপত্তা বলয় ভেঙে ফেলা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু একটি গুপ্তচর কাহিনি নয়—বরং এটি দেখায়, ধর্মীয় বিশ্বাস ও মানবিক সম্পর্ককে কীভাবে দুর্বৃত্তচক্র ব্যবহার করতে পারে এক দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ভেঙে দিতে।
সূত্র: দৈনিক যুগান্তর