রবিবার, ০১ জুন ২০২৫ ।। ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ৫ জিলহজ ১৪৪৬


"মুসলিম দেশগুলোকে আর অন্যদের নির্দেশনার অপেক্ষা করা উচিত নয়"


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জোর দিয়ে বলেছেন, মুসলিম দেশগুলোর আছে বিপুল সম্পদ, অসাধারণ মানবসম্পদ, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও গৌরবময় ঐতিহ্য। এ উপাদানগুলোকে কাজে লাগিয়ে তারা নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় উঠে আসতে পারে।

ইরানী প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি ওমান টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকারটি মূলত ওমানে তার সরকারি সফরের অংশ হিসেবে দিয়েছেন। 

মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, মুসলিম দেশগুলোকে আর অন্যদের নির্দেশনার অপেক্ষা করা উচিত নয়; বরং তাদের নিজেদেরই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সক্রিয় ও প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করা উচিত।

সাক্ষাৎকারে ওমান সফর ও সুলতান হাইথামের সঙ্গে সাক্ষাৎ সম্পর্কে ইরানী প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক নানা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ, আন্তরিক ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে গঠিত। ওমানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে, যা হাজার বছরেরও পুরনো হতে পারে।

আমরা শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা, পর্যটন, স্বাস্থ্য, জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য শক্তি বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি এবং বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছি।

পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সাম্প্রতিক আলোচনার মধ্যস্থতা করছে ওমান। এ বিষয়ে পেজেশকিয়ান বলেন, আমরা ওমানের প্রচেষ্টার জন্য কৃতজ্ঞ। এ প্রচেষ্টা আমাদের সর্বোচ্চ নেতার পক্ষ থেকেও স্বীকৃত। ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশেষভাবে এ আলোচনায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন এবং এটা এক বিজয়ী-বিজয়ী (win-win) দৃষ্টিভঙ্গিতে এগোচ্ছে।

পারমাণবিক আলোচনায় ন্যায্য চুক্তির বিষয়ে ইরানের অবস্থান কী হবে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের অধিকার আন্তর্জাতিক আইনে সুরক্ষিত। সর্বোচ্চ নেতার ফতোয়া অনুযায়ী, ইরান কখনো পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চায়নি বা চাইবে না। আমাদের শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহারের অধিকার আমরা ছাড়ব না।

তার ভাষায়, ইসরাইল আমাদের বিজ্ঞানীদের হত্যা করেছে, অথচ তারা আমাদেরকেই সন্ত্রাসবাদী বলে। প্রকৃত সন্ত্রাসবাদী কারা? যারা নারী-শিশু হত্যা করে, তারা? নাকি অন্য কেউ? আমাদের উদ্দেশ্য সম্মানজনক জীবনযাপন।

আগামী দিনে ইরান-ওমান সম্পর্কের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলোর প্রসঙ্গে ইরানী প্রেসিডেন্ট বলেন, রাজনৈতিকভাবে আমরা একমত। ফিলিস্তিন, গাজা, ও সামগ্রিক আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বিষয়ে আমাদের অবস্থান অভিন্ন। তবে অর্থনৈতিকভাবে নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা কিছু প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি। সমুদ্র, আকাশ ও স্থলপথে যে বাধাগুলো আছে তা দূর করতে এবং যৌথ বিনিয়োগ গড়ে তুলতে একমত হয়েছি। লক্ষ্য ১০ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য।

তিনি বলেন, ওমান এমন এক কেন্দ্র হতে পারে যা ইরান, মধ্য এশিয়া, রাশিয়া, এমনকি আফ্রিকার সাথেও পণ্য ও সম্পদের সংযোগ স্থাপন করতে পারে।

এ অঞ্চলের উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ইরান-ওমান সম্পর্ক কীভাবে উপসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আনতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে পেজেশকিয়ান বলেন, পবিত্র কুরআনের আদেশ অনুযায়ী, মুসলমানরা একে ওপরের ভাই। আমাদের ঐক্য থাকা উচিত। শত্রুরা আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতির মাধ্যমে বিভক্ত করছে, যাতে আমাদের সম্পদ লুণ্ঠন করে অস্ত্র বিক্রি করতে পারে। আমরা এই সমীকরণ পাল্টাতে পারি। শান্তিপূর্ণ সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও শিল্পে এগিয়ে যেতে পারি।

গাজা সংকটে ইরানের অবস্থান প্রসঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, দুনিয়া কি সত্যিই দেখতে পাচ্ছে না যে, একটি রাষ্ট্র কিভাবে গাজার নিরস্ত্র জনগণকে নির্বিচারে হত্যা করছে? হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করছে? আমরা মুসলিম দেশগুলোকে একত্র হয়ে গাজা ও লেবাননের নিপীড়িত মানুষের পক্ষে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই।

উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, আমরা মুসলিম প্রতিবেশীদের সঙ্গে সহযোগিতা ও বন্ধুত্ব চাই। তাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও স্বাধীনতাকে সম্মান করি।

পশ্চিমা আধিপত্যের প্রেক্ষিতে ইরানের পররাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট বলেন, এক্ষেত্রে আমরা কুরআন ও নবী (স.)-এর নির্দেশ অনুসরণ করতে চাই। আমরা এক জাতি, এক সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। কুরআন বলেছে, ‘তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সম্মানিত সেই ব্যক্তি, যে সবচেয়ে পরহেযগার’। (সূরা হুজুরাত: ১৩)

চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক ও পশ্চিমের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষায় ইরানের কৌশল প্রসঙ্গে পেজেশকিয়ান বলেন, যারা আমাদের সম্মান করে, আমরা তাদের সম্মান করি। পারস্পরিক স্বার্থ ও সম্মানের ভিত্তিতে আমরা সম্পর্ক গড়তে প্রস্তুত। শুধু জায়নিস্ট শাসন ছাড়া, আমরা সবার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য উন্মুক্ত।

উদীয়মান নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থায় ইরান কী ভূমিকা রাখতে চায়? এমন প্রশ্নে দেশটির প্রেসিডেন্ট বলেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও মুসলিম ঐক্য গড়তে পারলে আমরা নিজস্ব স্বাধীন ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে পারি। ইসলামি দেশগুলো বিপুল সম্পদ ও প্রতিভার অধিকারী। আমাদের খেলাটি অন্যদের কোর্টে না দিয়ে নিজেদেরই খেলা উচিৎ, নিজেরাই নেতৃত্বে আসা উচিত।

এ সময় তিনি মুসলিম বিশ্বের যুবসমাজের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে বলেন, আমি যুব সমাজকে বলি, জ্ঞান, দক্ষতা ও শিল্পে পারদর্শী হও। কুরআনের ভাষায়, ‘তোমরা শ্রেষ্ঠ হবে যদি বিশ্বাস রাখো’ (সূরা আল ইমরান: ১৩৯)। আল্লাহ মহান, করুণাময়, সৃষ্টিশীল ও সৌন্দর্যের আধার। আমাদের যুবকরা যেন এই আল্লাহকে চিনে, বিশ্বাস করে ও তার দিকে এগিয়ে যায়।

সূত্র: মেহের নিউজ

এসএকে/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ