আজ ৫ আগস্ট। ২০২৪ সালের এই দিনে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন মোড় নেয়। দীর্ঘ ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসন শেষে গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। দীর্ঘ সময় ধরে বিরোধী কণ্ঠরোধ, গুম-খুন, দুর্নীতি ও দমননীতির শিকার ছিল দেশের জনগণ।
আলেম সমাজ ছিল এই শাসনের সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত অংশ। ছোটখাটো প্রতিবাদেও আলেমদের “জঙ্গি” আখ্যা দিয়ে গ্রেফতার ও কারাবন্দি করা হতো। অনেকে শহীদ হয়েছেন, অনেকে পঙ্গু। কারাগার হয়ে উঠেছিল আলেমদের জন্য এক বিভীষিকাময় বন্দিশালা।
আজ ৫ আগস্ট, দেশের নতুন স্বাধীনতা দিবসে কারানির্যাতিত আলেমদের সঙ্গে কথা বলেছে আওয়ার ইসলাম —তাঁদের অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি ও আগামী দিনের স্বপ্ন নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলামের সাব এডিটর মোহাম্মাদ হুজাইফা।
আওয়ামী লীগের মত কোনো কর্তৃত্ববাদী দল এই দেশের ক্ষমতায় থাকতে পারে না: মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
আওয়ার ইসলাম: আওয়ামী সরকারের আমলে আপনিও একজন কারানির্যাতিত আলেম। এই অভিজ্ঞতা আপনাকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে? বিশেষ করে ৫ আগস্টে সরকার পতনের প্রেক্ষাপটে আপনার অনুভূতি শুনতে চাই।
মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন: একজন শান্তিকামী মানুষ হিসেবে, আলেম হিসেবে ও ইসলামিক দলের একজন দায়িত্বশীল হিসেবে বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগের মতো স্বৈরাচারী দল কখনো বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকার যোগ্য নয়। ১৫ বছর ধরে মানুষের অধিকার হরণ করে, গুম-খুন ও নির্যাতনের মাধ্যমে তারা ক্ষমতা ধরে রেখেছিল।
৫ আগস্ট আমাদের মুক্তির দিন। আমরা নিজের চোখে সরকারের পতন দেখেছি—এটা আমাদের জীবনের অন্যতম আনন্দময় মুহূর্ত। এ বিপ্লবের জন্য যারা শহীদ হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, তাঁদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও দোয়া রইল।
আওয়ার ইসলাম: জুলাই বিপ্লবে আপনি কোথায়, কিভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন?
মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন: আমি একটা রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ার কারণে স্বশরীরে অংশগ্রহণ করতে পারি নাই। তবে আমাদের নেতৃত্বে আমাদের সহযোগী সংগঠনগুলো ও ছাত্র সংগঠন এবং মোহাম্মদপুরের জনতা এই আন্দোলনে নেমেছিল। গত ৩ আগস্ট আমরা বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলাম।
আওয়ার ইসলাম: আওয়ামী সরকার আপনাকে কেন কারাগারে বন্দি করেছিল?
মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন: আওয়ামী লীগ সরকার যে সমস্ত আলেমদেরকে নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি তাদেরকেই মূলত গ্রেফতার করত। সর্বশেষ মোদিবিরোধী যে আন্দোলন হয়েছিল সে আন্দোলনে হেফাজতের ব্যানারে আমাদের স্পষ্ট ভূমিকা ছিল। এই কারণেই আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
আওয়ার ইসলাম: জুলাই বিপ্লব যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সংগঠিত হয়েছিল আপনার দৃষ্টিতে সেই আকাঙ্ক্ষা কতটা পূরণ হয়েছে?
মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন: রাষ্ট্র সংস্কার ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের আকাঙ্ক্ষা এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগ কিছুটা অগ্রগতি এনেছে। পুরো পরিবর্তন সময়সাপেক্ষ।
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নিজের অজান্তেই বলে উঠেছিলাম ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হলো’: মুফতি সাইদ আহমাদ
শিক্ষক, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া,সাত মসজিদ
আওয়ার ইসলাম: আওয়ামী লীগের শাসনামলে আপনিও একজন অভিযুক্ত ছিলেন। আপনাকেও মানসিক টর্চার করা হয়েছে। ৫ আগস্টে সরকার পতনে আপনার অনুভূতি কী?
মুফতি সাইদ আহমাদ: ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর নিজের অজান্তেই বলে উঠেছিলাম বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। আমরা ৭১ দেখিনি। তবে ২৪ এ স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করেছি। দেশের মানুষকে কোন উপলক্ষে এত আনন্দ করতে দেখিনি। এবং এ আনন্দ ছিল সকলের।
আওয়ার ইসলাম: জুলাই বিপ্লবে আপনি কিভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন? সেই সময়ের কিছু স্মৃতি শুনতে চাই।
মুফতি সাইদ আহমাদ: জুলাই আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ছিল মিরপুর ১০। আমার বাসা মিরপুর ১০ গোল চক্কর এবং মিরপুর ২ নাম্বার মডেল থানার মাঝামাঝি জায়গায়। আন্দোলনের সময় এই পুরো এলাকা রনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। ছাত্র জনতার সাথে পুলিশ ও যুবলীগের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার কেন্দ্রস্থল ছিল এই এলাকা। ১৮ জুলাই আমি গুলিবিদ্ধ হই। এই সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করাও সহজ ছিল না। দুইবার অপারেশন করে গুলি বের করতে হয়েছে।
আওয়ার ইসলাম: আপনি কেন অভিযুক্ত ছিলেন?
মুফতি সাইদ আহমাদ: জামিয়া রাহমানিয়ায় শিক্ষকতার কারণে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় মুক্ত মত প্রকাশ ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে আমার অবস্থান সবসময় পরিষ্কার ছিল। তাছাড়া মাওলানা মামুনুল হকের বিভিন্ন কর্মসূচিতে আমার অবস্থান ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে তাদের কাছে শনাক্ত ছিল। হেফাজতে ইসলাম ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরীর আমি একদিন সক্রিয় সদস্য। এইসব পরিচিতিকে কেন্দ্র করে আমি ক্ষমতাশীলদের নজরদারিতে পড়ে যাই।
আওয়ার ইসলাম: জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা কতটা পূরণ হয়েছে বলে মনে করেন?
মুফতি সাইদ আহমাদ: জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে এটা এ বিপ্লবের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সরকার কখনো ভাবেনি, তাদের পতন হবে। আর আমাদের থেকেও এ ভাবনা দূর হয়ে গিয়েছিল যে, জীবদ্দশায় শেখ হাসিনার পতন সম্ভব। জুলাই বিপ্লবে শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক পতন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ মনে করি।
শেখ হাসিনার পতন পরবর্তী বাংলাদেশ নিয়ে আমাদেরকে ভাবতে হবে। শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামনে আমরা বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ছিলাম। শেখ হাসিনার পতনের পর আমরা সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছি। আমি মনে করি একতা ঐক্যবদ্ধতা ছাড়া কোন কিছু অর্জন সম্ভব নয়। আমাদেরকে সর্বপ্রথম ঐক্যবদ্ধ হয়ে তারপর আমাদের লক্ষ্য পানে পৌঁছতে হবে। আমাদের লক্ষ্য জুলুম অবিচারের ময়লা আবর্জনা মুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলা। মানুষের গোলামি থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ যেন এক আল্লাহর গোলামি করতে পারে সেই পরিবেশ তৈরি করা। এটাই প্রকৃত স্বাধীনতা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সহায় হোন।
আমরা এমন একটা দিনের স্বপ্ন দেখতাম যেদিন মানুষ হাসিনার পতনে উল্লাস করবে: মাওলানা এহসানুল হক
শিক্ষক, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া,সাত মসজিদ
আওয়ার ইসলাম: আজকের এই দিনে আপনার অনুভূতি শুনতে চাই।
মাওলানা এহসানুল হক: ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে যারা লড়াই করেছে, আমি তাদেরই একজন ক্ষুদ্র কর্মী। এই সংগ্রামে আমারও অবদান ছিল। তাই আমরা প্রতিদিন অপেক্ষা করতাম, কখন সেই দিন আসবে—যেদিন শেখ হাসিনার পতন ঘটবে। বিশেষ করে আমরা যারা কারাগারে ছিলাম, নির্যাতন সহ্য করেছি এই দিনটি আমাদের জন্য এক বিশাল প্রাপ্তি, সীমাহীন আনন্দের দিন। আমি এক বছর জেলে ছিলাম। মুক্তির পর মনে হয়েছিল, যেন আরও বড় এক কারাগারে এসে পড়েছি। মাথার ওপর দশটি মামলা ঝুলছিল। মাসে আট-দশবার আদালতে হাজিরা দিতে হতো। অনেক কঠিন সময় পার করেছি আমরা। তবুও আমরা স্বপ্ন দেখতাম, এমন একটি দিনের—যেদিন দেশের মানুষ হাসিনার পতনে আনন্দে উল্লাস করবে। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ৫ই আগস্ট। আল্লাহ আমাদের সেই দিনটি দেখার সুযোগ দিয়েছেন। কাজেই এই দিনটি আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় দিন। এই আনন্দ আর কিছুর সঙ্গে তুলনা হবে না। আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দিন—এই ৫ই আগস্ট।
আওয়ার ইসলাম: সরকার আপনাকে কেন টার্গেট করেছিল?
মাওলানা এহসানুল হক: আওয়ামী সরকার একটি নির্দিষ্ট প্রকল্প হাতে নেয়—ইসলামপন্থীদের গ্রেফতারের প্রকল্প। বিশেষ করে যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আপসহীনভাবে সোচ্চার ছিলেন, তাদের দমন করাই ছিল এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। টার্গেট করা হয় আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী এবং আল্লামা মামুনুল হককে। আমি তাদের পক্ষে সোচ্চার ছিলাম। লেখালেখি আর সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলাম। এটিই ছিল আমার ‘অপরাধ’।
এরপর যখন মোদীবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়, সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বহু আলেমকে গ্রেফতার করা হয়। আমাকেও গ্রেফতার করা হয়। আমার নামে দশটি মামলা দেওয়া হয়। দুটি মামলায় ওয়ারেন্ট জারি করা হয়। মামলায় জামিন পেলেও জেল গেট থেকে আবার নতুন গ্রেফতার দেখিয়ে ফের জেলে পাঠানো হয়। এভাবে তিন দফা আমাকে কারাবন্দি করা হয়। দীর্ঘ প্রায় এক বছর কারাগারে থাকার পর আমি মুক্তি পাই।
আওয়ার ইসলাম: জুলাই বিপ্লব যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সংগঠিত হয়েছিল—আপনার দৃষ্টিতে সেই আকাঙ্ক্ষা কতটা পূরণ হয়েছে?
মাওলানা এহসানুল হক: যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, তা আজও পূরণ হয়নি। মানুষ শেখ হাসিনার পতন দেখেছে, ফ্যাসিবাদের অবসান ঘটেছে। কিন্তু যে স্বপ্ন ও প্রত্যাশা নিয়ে মানুষ রক্ত দিয়েছে, জীবন উৎসর্গ করেছে, সেই প্রত্যাশার কাছাকাছিও আমরা পৌঁছাতে পারিনি। গত এক বছরে সেই স্বপ্ন পূরণের কোনো বাস্তব সম্ভাবনাও দেখা যায়নি। রাষ্ট্র কিংবা বড় রাজনৈতিক দলগুলোর কেউই সেই পথ ধরে হাঁটছে না। তাই আমি মনে করি, জুলাই বিপ্লবের মূল লক্ষ্য পূরণ হয়নি। তবে এটা ঠিক, এই বিপ্লব আমাদের কিছু প্রাপ্তিও দিয়েছে—আমরা আজ কিছুটা হলেও স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি। তারপরও, মানুষের মনের গভীরে যে আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল, তা এখনো অপূর্ণই থেকে গেছে।
আমরা জেল খেটেছি অভ্যুত্থান সৃষ্টির জন্য: মাওলানা মাহমুদুল হাসান সাগর
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, উম্মাহ একাডেমি
আওয়ার ইসলাম: আওয়ামী সরকারের আমলে আপনিও একজন কারানির্যাতিত আলেম। ৫ আগস্টে সরকার পতনের এই দিনে আপনার অনুভূতি কী?
মাওলানা মাহমুদুল হাসান সাগর: হ্যাঁ, আওয়ামী আমলে আমি জেল খেটেছি। জেলে থাকাকালে মিথ্যা জবানবন্দি আদায়ের জন্য আমার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল এই স্মৃতি এখনো ভোলা যায়নি, সবসময় মনে গেঁথে আছে। তবে আমি শুধু এজন্যই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করি নাই, বরং ২০১৩ সাল থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আলেমদের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। এক কথায় বললে, আমি জেল খেটেছি এই অভ্যুত্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে।
আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইসলাম প্রতিষ্ঠা, ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা। শেখ হাসিনার পতন ছিল একটি মাধ্যম—একটি ছোট লক্ষ্য। ৫ আগস্টে সেই ছোট লক্ষ্য পূরণ হয়েছে, এটা অবশ্যই আনন্দের। তবে বড় স্বপ্ন এখনো বাকি। তা বাস্তবায়নে আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।
আওয়ার ইসলাম: জুলাই বিপ্লবে আপনি কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন?
মাওলানা মাহমুদুল হাসান সাগর: আমি কেরানীগঞ্জ এলাকায় কয়েকটি গ্রুপের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেছি। এদিকে বড় কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ নেই, আবার যুব সমাজও খুব একটা সংগঠিত নয়—ফলে আন্দোলন গড়ে তোলা সহজ ছিল না। তবুও আমরা শেষ দিকে কেরানীগঞ্জে আন্দোলন জমাতে পেরেছিলাম। সেখান থেকে আমরা ঢাকার কেন্দ্রে—বিশেষ করে শহীদ মিনার এলাকায় চলে যেতাম দল নিয়ে আন্দোলনে অংশ নিতে।
ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার সুবাদে ঢাকার বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্রদের সাথেও যোগাযোগ করেছি, তাদের সংগঠিত করেছি, আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেছি।
আরেকটি বিষয় আমি বিশেষভাবে লক্ষ্য করেছিলাম—আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেকে আহত হতেন, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা পেতেন না। আমি নিজে উদ্যোগ নিয়ে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের জন্য নাস্তা, পানি, স্যালাইন ইত্যাদির ব্যবস্থাও করতাম।
আওয়ার ইসলাম: আওয়ামী সরকারের আমলে আপনি কেন গ্রেফতার হয়েছিলেন?
মাওলানা মাহমুদুল হাসান সাগর: আমার গ্রেফতারের পেছনে কোনো ব্যক্তিগত কারণ ছিল না। আমি ছিলাম আদর্শের রাজনীতিতে। আমার আদর্শের সঙ্গে আওয়ামী ফ্যাসিজমের সংঘর্ষ ঘটেছিল। আমি খেলাফত ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলাম, এজন্য সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থার নজরে পড়ি। এক পর্যায়ে গ্রেফতার করা হয় আমাকে।
আওয়ার ইসলাম: আপনি মনে করেন কি, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে?
মাওলানা মাহমুদুল হাসান সাগর: আমি কখনোই ভাবিনি যে জুলাই বিপ্লবের সব আকাঙ্ক্ষা একসাথে পূরণ হয়ে যাবে। বরং এই বিপ্লব ছিল দীর্ঘ প্রক্রিয়ার একটি সূচনা—দেশ, জাতি, সমাজ ও ব্যক্তিকে গড়ে তোলার এক যাত্রা। তাই কিছু স্বপ্ন এখনো অপূর্ণ থাকলেও আমি হতাশ নই। আমাদের সামনে এখন বড় কাজ হলো—এই যে ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি, তাকে টিকিয়ে রাখা এবং আরও দৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করানো। আমরা ধাপে ধাপে আগাবো। ইনশাআল্লাহ।
৫ আগস্ট শুধু একটি তারিখ নয়, এটি মুক্তির প্রতীক, স্বৈরাচারের পতনের দিন। কারানির্যাতিত আলেমরা এই দিনটিকে দেখছেন আশার আলো হিসেবে—যেখানে আংশিক বিজয়ের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ঐক্য, সততা ও ইসলামী আদর্শে বলিষ্ঠ অগ্রযাত্রা।
এমএইচ/