বরগুনার বামনা উপজেলা মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ চলছে প্রায় ছয় বছর ধরে। দুই দফায় ঠিকাদার পরিবর্তন করা হলেও এই মসজিদের কাজ এগোচ্ছে খুব ধীরগতিতে। যার কারণে স্থানীয় মুসল্লিদের মনে নানা ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, বরগুনা জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিশুদ্ধ ইসলাম প্রচার ও সংস্কৃতির বিকাশের উদ্দেশ্যে সরকার সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এসব মসজিদ থেকে ইসলামিক গবেষণা, ইমাম প্রশিক্ষণ, শিশু ও গণশিক্ষা, হজ নিবন্ধন, ইসলামিক বই বিক্রি ও হেফজখানাসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। এর অংশ হিসেবে বরগুনার বামনা উপজেলায় ২০১৯ সালে প্রায় ১২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯০০ মুসল্লি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন তিনতলা মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
প্রথমে মঠবাড়িয়ার সাবেক পৌর মেয়র রফি উদ্দিন আহমেদ ফেরদৌসের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এএসআই জেবি নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায়। সে সময় পুরনো কোর্ট ভবন ভেঙে সেখানে মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে সেখানে কাজ শুরু করা যায়নি। পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদের পাশে অবস্থিত দুটি পরিত্যক্ত ডরমেটরি ও দুটি কর্মকর্তার বাসভবন ভেঙে নতুনভাবে ৪০ শতক জমিতে মসজিদ নির্মাণ শুরু হয়।
কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে গেলে প্রথম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাইলিং কাজ শেষ করেই কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে গণপূর্ত অধিদপ্তর ব্যয় বাড়িয়ে মোট ১৩ কোটি ১৫ লাখ ৫১ হাজার টাকা নির্ধারণ করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেয়।
গত বছরের জানুয়ারিতে মঠবাড়িয়ার আওয়ামী লীগ নেতা রিপন জমাদ্দারের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম.কে.টি নতুনভাবে নির্মাণকাজ শুরু করে এবং দ্রুতগতিতে পিলার ও দ্বিতীয় তলার ছাদ পর্যন্ত ঢালাই সম্পন্ন করে।
তবে গত ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকে আত্মগোপনে চলে গেলে বা কারাবন্দি হলে কাজ আবার থমকে যায়। বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন বামনা মডেল মসজিদের ঠিকাদার রিপন জমাদ্দার ওরফে রাঙ্গা রিপন। এরপর থেকেই নির্মাণকাজ আবারও স্থবির হয়ে পড়ে। স্থানীয় মুসল্লিরা একাধিকবার জেলা প্রশাসক ও গণপূর্ত বিভাগে লিখিত আবেদন এবং মানববন্ধন করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের দাবি জানান, তবে এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বর্তমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সুজন মিয়া বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের দুইজন মালিকের একজন রাজনৈতিক মামলায় জেলে এবং অন্যজন কিছুদিন আগে মারা গেছেন। ফলে আর্থিক সংকটের কারণে কাজ কিছুটা মন্থর হয়েছে। তবে খুব শিগগিরই আমরা পুনরায় কাজ শুরু করব।
এ বিষয়ে বরগুনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোল্যা রবিউল ইসলাম বলেন, বামনা মডেল মসজিদের কাজ দ্রুত সম্পন্নের জন্য ঠিকাদারকে একাধিকবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। প্রয়োজনে দাপ্তরিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরএইচ/