রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৬ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
যেসব দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে  ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলো যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া জাগো হে কওমি তারুণ‍্য! রাতেই ঢাকাসহ তিন অঞ্চলে ঝড়ের আভাস অর্থনীতির মূল লক্ষ্য হতে হবে উদ্বৃত্ত সৃষ্টি: বাণিজ্য উপদেষ্টা চবির আরবি বিভাগের নতুন সভাপতি অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিন তালুকদার ডেঙ্গুতে একদিনে ১২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৪০ সিরাতকে ধারণের মাধ্যমেই সত্যিকার পরিবর্তন সম্ভব: ধর্ম উপদেষ্টা সিরাতুন্নবী (সা.) সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতার লাইভ ড্র অনুষ্ঠান ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট

জলস্রোতে ভেসে আমাদের হাওর দেখা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাহমুদুল হাসান

চারদিকে পানির অবাধ ‍বিস্তার। এর মাঝেই কোথাও মাথা জাগিয়ে রেখেছে এক চিলতে সবুজ ভূমি। কয়েকটি বাড়ি নিয়ে দ্বীপের মত মাথা তুলে জেগে রয়েছে এক একটি বসতি। প্রায় প্রতিটি বাড়ির লাগোয়া ঘাটে নৌকা। নৌকাই এসব গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র বাহন।

গ্রামগুলোর গা ঘেষে পানিতে গা ভাসিয়ে বেড়াচ্ছে হাঁসের পাল। ছোট বাঁশের কঞ্চি হাতে হাঁসের রাখাল চেষ্টা করছে হাঁসগুলোকে নিরাপদে খোয়ারে নিয়ে তুলতে।

কোনো কোনো জায়গায় পানিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দূরন্ত ছেলেছোকরার দল। অনেক বাড়ির মেয়ে ঝিয়েদের দেখা যায় পানিতেই থালাবাসন ধুয়ে নিতে।

এতক্ষন বলছিলাম কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত এলাকার কথা। হাওরের সৌন্দর্য্য উপভোগ, দর্শনীয় স্থান এবং সুর্যাস্ত দেখতে আমরা একঝাঁক তরুণ গিয়ে ছিলাম সেই হাওরে।

দিনটি ছিল ১৭ আগস্ট ১৮। শুক্রবার। ফজরের পর কিশোরগঞ্জ সদর থেকে আমাদের যাত্রা শুরু। চামড়া বন্দর এসে রিজার্ভ নৌকা নিয়ে আমরা ছুটে চললাম ইটনার পথে। পানি থৈ থৈ। নৌকা চলছে হেলেদুলে। আমি দেখছি হাওরের আপরূপ সৌন্দর্য্য।

হাওরের মাঝে কোথায় কোথাও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে বিদ্যুতের খুঁটির সারি। কোনোগুলোতে তার আছে। কোথাও শুধু ন্যাড়া খুঁটি। হাওরেও আলো জ্বালার চেষ্টা করছে সরকার এ যেন তারই প্রতিচ্ছবি।

ঘন্টা তিনেক পর আমরা পোঁছলাম ইটনার ছিলনী গ্রামে। ছিলনীর গ্রামের পাশে বালুর চরে। সেই চর আমরা প্রথম নামলাম। চর থেকে চারপাশের গ্রামগুলোকে দ্বীপের মতো দেখাচ্ছিল।

কিছুক্ষন চরে অবস্থানের পর জুমার নামাজ আদায় করতে আমাদের যাত্রা বিরতি দেয়া হলো। নৌকা থামানো হলো। ছিলনী মসজিদ ঘাটে। অজু গোসল নামাজ আদায়ের পর নৌকা নিয়ে ইটনা সদরের উদ্যেশ্যে যাত্রা শুরু। যেখনে ঐতিহ্যবাহী দেওয়ান বাড়ি,শাহী মসজি অবস্থিত।

তপ্ত দুপুররে। রোদের ঝিলিক। কাটফাটা রুদ। আমরা সবাই ক্লান্ত৷ একটু ছায়ার খুঁজে।নৌকা চলছে হেলে দুলে। মাঝে-মধ্যেই মৃদু বাতাসে লাগছে গায়ে। হাওরের পানিতে। ছোট ছোট ঢেউ খেলা করেছে। যাচ্ছি ইটনার গায়েবী মসজিদ পরিদর্শনে।

ঘন্টাখানেকের মধ্যে আমরা পৌঁছলাম। ইটনা থানা শহরে। নৌকা থেকে নামলাম। পায়ে হেটে শাহী মসজিদের দিকে। পাঁচমিনিট হাটার পর দৃষ্টিতে সেই মসজিদ। পাশের গ্রামেই আমার বাড়ি। এই সুবাদে আমি আরও বহুবার এই মসজিদে দেখেছি। সালাত আদায় করেছি। অন্যরকম প্রশান্তি পেয়েছি। আজ বন্ধুদেরকে নিয়ে। এই মসজিদ দর্শনে।

হাওরের দর্শনীয় স্থান সমুহের এটিও একটি। নাম শাহী মসজিদ। (গায়েবী মসজিদ) বাংলার প্রাণ পুরুষ ঈসা খাঁর মজলিশদের মধ্যে অন্যতম মজলিশ দেলোয়ার কর্তৃক এই বিখ্যাত মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল।

স্থানীয়ভাবে মসজিদটি 'গায়েবী মসজিদ' নামে পরিচিত। এটি ইটনা সদরের বড়হাটিতে অবস্থিত। ষোড়শ শতকের শেষ দিকে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল । আমরা একঝাঁক তরুন এই মসজিদের ছায়ায়। কিছু সময় দাঁড়িয়ে। কিছু সময় বসে। কেটে গেলে এক মুহূর্ত। ভালোলাগার আরেকটি স্মৃতি।

অতঃপর কিশোরগঞ্জের উদ্যেশ্যে যাত্রা শুরু হলো আমাদের। ইটনা সদর থেকে সরাসরি চমড়া বন্দরের পথে। নৌকায় আসরের নামাজের সময় হলে নৌকার ছাদে দাঁড়িয়ে যায় প্রভু প্রেমের মজনুরা। হেলেদুলে চলা নৌকায় ভয়ে ভয়ে নামাজ আদায়। সবার নামাজ শেষ হলো।

মাঝ হাওরে ডোবার সময় হলো। ধীরে ধীরে হাওরের জলে অস্ত গেল সূয্যিমামা। তবে গোধূলি লগ্ন তখনও শেষ না হওয়ায় পশ্চিম আকাশে রয়ে গেল তার কিছুটা আভা। অন্যান্য নৌকার ছইতেও কাউকে কাউকে নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে বোঝা গেল সময় হয়েছে মাগরিবের নামাজের।

ধীরে ধীরে সূর্যের রক্তিম আভার জায়গায় স্থান করে নিলো চাঁদের ম্লান জোৎসনা। সন্ধ্যায় চাঁদের মায়াবী আলো আধারি ছায়ায় হাওর যেন আরও অপরূপ। চাঁদের ম্লান আলো খুব হালকাভাবে হলেও প্রতিফলিত হচ্ছে হাওরের ছোট ছোট ঢেউয়ে। ঢেউয়ের গায়ের সেই প্রতিফলন ঝিকমিক দিয়ে উঠছে।

হাওরের জলে চাঁদ সূর্যের এই অপরূপ খেলা দেখতে দেখতে আমার পৌঁছলাম চামড়া বন্ধরে। বন্ধুরা ফিরে গেল তাদের নিড়ে। এভাবেই হয়ে গেল আমাদের সফরের সমাপ্তি।

ব্যবসার হিসাবের জটিলতার দিন শেষ- ক্লিক

-আরআর


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ