রবিবার, ২২ জুন ২০২৫ ।। ৮ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ২৬ জিলহজ ১৪৪৬

শিরোনাম :
জাতীয় সরকার গঠন হবে এনসিপির নেতৃত্বে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাওলানা মুহসিনুল হাসানের গণসংযোগ, ইনসাফভিত্তিক সমাজ গড়ার আহ্বান ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, জাতিসংঘ মহাসচিবের গভীর উদ্বেগ জাপানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে জামায়াত আমিরের বৈঠক ইরানের একাকিত্বের বড় দায় তার নিজেরই মুরাদনগরে ইমাম ও খতিব ঐক্য পরিষদের আলোচনা সভা ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা: কয়টি বাংকার বাস্টার বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে? জাতীয় বাজেটের অনুমোদন দিল উপদেষ্টা পরিষদ সেনাপ্রধানের আহ্বান: দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নবীন কর্মকর্তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র যে অস্ত্র ব্যবহার করেছে: "বি-২ স্পিরিট" বোমারু বিমান

ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে শিল-পাটার ব্যবহার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ হেলাল আহমদ বাদশা।।

বাংলায় একটি প্রবাদ প্রবচন আছে, ‘ঝি জব্দ কিলে, বৌ জব্দ শিলে, পাড়াপড়শী জব্দ চোখে আঙুল দিলে।’

আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ও ব্যবহারে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল-পাটা। এককালে ঘরে ঘরে শিল-পাটা ছিল রান্নার মসলা বাটার অন্যতম পাথেয়। কিন্তু কালের আবর্তে শিল-পাটা বিলীন হওয়ার পথে।

‘হলুদ বাটো মেন্দি বাটো/বাটো ফুলের মউ,/বিয়ের সাঁজন সাঁজবে কন্যা’... এইসব গীত গেয়ে গ্রামের সকল শ্রেণী-পেশার মহিলারা বিয়ে বাড়িতে দু‘তিন দিন আগে থেকে হলুদ-মেহদি বাটতেন। তাছাড়া সামাজিক অনুষ্ঠানে গৃহিণীরা হরেক রকম মসলা বেটে দিতেন। বর্তমানে সময় ও কালের প্রবাহে বাঙালীর সমাজ ব্যবস্থার পারিবারিক অঙ্গন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শিল-পাটার ব্যবহার।

গ্রাম-বাংলায় এখনও অনেক ভোজনবিলাসী পরিবার যারা শিল-পাটায় বাটা মসল্লা ছাড়া রান্না খেতে পছন্দ করেন না। চিরায়ত গ্রাম বাংলায় শিল-পাটা নিয়ে প্রচলিত রয়েছে নানা কল্পকাহিনী। গুড়া মসল্লা বাজারে সহজলভ্যতা ও বাণিজ্যিকভাবে প্রচলন হওয়ায় পাথরের শিল-পাটায় মসল্লা পিষার গুরুত্ব একেবারেই হ্রাস পেয়েছে। গৃহিণীরাও পরিশ্রম থেকে রেহাই পেতে প্যাকেটজাত মসল্লার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।

অনেক প্রবীণ সু-গৃহিণীরা জানান, যুগ যুগ ধরে গ্রামাঞ্চলের মানুষ শিল-পাটায় বিভিন্ন ধরণের খাদ্য তৈরির কাজে ব্যবহার করে আসছে। শিল-পাটায় পিষা কাঁচামরিচ ও শুটকি মাছ ও কালজিরার ভর্তার স্বাদ আজও অতুলনীয়। ‘পাটায় পেষা মসলার রান্নার ঘ্রাণ, স্বাদ মেশিনে গুঁড়ো করা মসলার চেয়ে অনেক বেশি। তাই তারা এখনো শিল-পাটায় পেষেই রান্নার মসলা তৈরি করেন।’ শুধু এ কারণেই একটু কষ্টসাধ্য হলেও গ্রামের অনেকেই শিল-পাটার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। সময়ের প্রবাহে পাড়া-মহল্লার প্রতিটি দোকানে মরিচ, হলুদ ও ধনিয়াসহ নানা মসল্লায় প্যাকেটজাত মসল্লায় বাজার সয়লাব হয়ে আছে। হাত বাড়ালেই মসল্লা পাওয়া যাচ্ছে।

একসময় দেশের জেলা শহরগুলি ও আশপাশের এলাকায় প্রতিনিয়ত দেখা মিলতো শিল-পাটা খোদাইকারীর। কাঁধে শিল-পাটা বয়ে নিয়ে খোদাইকারীরা বাড়ির সামনে গিয়ে হেঁকে ওঠতো-“পাটা খোদাইবেন, ডেকছির কান্দা লাগাইবেন” এখন আর সেই হাকডাকের দৃশ্য চোখে পড়েনা। শোনা যায় না বাড়ির আঙ্গিনায় শিল-পাটা খোদাই করার টুকটাক শব্দ।

শিল-পাটার ব্যবহার হ্রাস পাওয়ায় বাধ্য হয়ে অনেক কারিগর পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু অনেক কারিগর উপার্জন কমে যাওয়ার পরেও অনেক বাধা-কষ্ট পেরিয়ে বাপ-দাদার ঐতিহ্য ওই পেশাকে আকঁড়ে ধরে রেখেছেন।

বিলুপ্ত প্রায় এই ঐতিহ্য-কে ধরে রেখেছেন সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি পর্যটন স্পটে রফিকুল ইসলাম। বাড়ি মেঘালয়, প্রতিদিন পর্যটন স্পটে এসে পাথর বাছাই করে শিল পাটা তৈয়ার করেন। কয়জনের সংসার জিজ্ঞেস করলে তিনি ডান হাতের পাঁচটি আঙুল দেখান। এই ব্যবসায় তার সংসার চলে কিনা, জানতে চাইলে উনি একটু বিব্রত বোধ করলেন।

-এএ


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ