শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ।। ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১০ জিলকদ ১৪৪৫


বিজ্ঞানী আল-ফারাবী মুসলমানদের গৌরব

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাফেজ মাওলানা আহসান জামিল।।

আল-ফারাবী একটি নাম, একটি ইতিহাস, একটি চেতনা, একটি বিপ্লব। এই পৃথিবীতে যত ক্ষনজন্মা মুসলিম মহামনীষিদের জন্ম হয়েছে যাদের পদভারে এই পৃথিবী ধন্য, যারা শুধু জন্মগ্রহন করে তথাকথিত আমাদের মত বা আর দশ জনের মত এই পৃথিবীর আলো বাতাস গ্রহণ করে পৃথিবীকে বা পৃথিবীর আবহাওয়াকে অধ্যুষিত করে যাননি। বরং যুগের পর যুগ ধরে এই পৃথিবীতে বসবাসকারী অধিবাসীদের জন্য যুগান্তকারী যেসব বিষয় বস্তুর মাধ্যমে চির স্মরনীয় বা যাদের নাম স্বর্ণাকারে লিখা থাকবে এই পৃথিবীর মানচিত্রে তাদের মধ্যে আল-ফারাবী অন্যতম। এই পৃথিবীতে তার প্রথম পদচারণার তারিখটি সঠিকভাবে জানা যায়নি।

যেহেতু এই বিষয়টি সে সময়ের মানুষের কাছে কোন প্রকার গুরুত্ব বহণ করতনা। তবে ঐতিহাসিকদের ধারণা মতে যতখানি জানা যায় ৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে তুর্কিস্থানের অন্তর্গত ফারাব নামক শহরের নিকটবর্তী আল ওয়াসিজ গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। খ্যাতিমান ব্যক্তিদের জীবনী উদঘাটন করলে দেখা যায় যে, তাদের জন্মস্থান বা শহর কিংবা তাদের দেশের নামে পরিচিতি লাভ করেছেন। ফারাবীর ক্ষেত্রেও তার বিপরীত ঘটেনি। ফারাব নামক শহরের নামানুসারেই পরবর্তীতে তিনি ফারাবী নামে পরিচিতি লাভ করেন। জ্ঞানের পিপাসায় পিপাসার্থ ফারাবীর মধ্যে খুব ছোটকাল থেকেই এই পিপাসা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। অজানাকে জানার,অজেয়কে জয় করার ক্ষুধা ছিল তার খুব।

এই ক্ষুধা নিবারণ করবার জন্য জ্ঞান পিপাসার সাধনায় তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন তার মূল্যবান সারাটি জীবন। বিজ্ঞানী আল ফারাবী খোদা ত্যাগী বা সঠিক উপাস্য ভূক্তি একটি পরিবারে জন্মগ্রহন করেছিলেন। ফারাবীর পিতা ছিলেন উচ্চশিক্ষিত ও সেনাবাহিনীর বড় একজন কর্মকর্তা। ফারাবীর পূর্বপুরুষগন ছিলেন পারস্যের অধিবাসী।

ইসলাম গ্রহন করে পারস্য ত্যাগ করে তুর্কিস্থানে এসে স্থায়ী পারি জমান। ফারাবী খুব ছোটকাল থেকেই জ্ঞানের পিপাসায় পিপাসার্থ ছিলেন। তাই জ্ঞান সাধনায় জ্ঞান বিজ্ঞান আহরন করবার জন্য তিনি ছুটে চলেছেন দেশ হতে দেশান্তরে এই মহান ব্যক্তির শিক্ষা জীবন শুরু হয় ফারাবায়। সেখানে কিছু সময় শিক্ষা লাভ করে শিক্ষার উদ্দেশ্যে চলে যান বোখারায় । এরপর গমন করেন শিক্ষার উদ্দেশ্যে বাগদাদে। সেখানে দীর্ঘ প্রায় ৪০ বৎসর অধ্যয়ন ও গবেষনা করেন।

তিনি বেশ কিছু ভাষার উপর পান্ডিত্যতা লাভ করেন। জ্ঞান বিজ্ঞানের এমন কোন শাখা বাকি ছিলনা যেখানে আল ফারাবীর প্রতিভা বিস্তৃত হয়নি। জ্ঞানের পিপাসায় পিপাসার্থ এই ব্যক্তিটির এর পরও জ্ঞান পিপাসা মিটেনি জ্ঞান খোরাকি এই ব্যক্তিটি জ্ঞান আহরণ করবার জন্য ছুটে গিয়েছেন দামেস্ক সহ একের পর এক দেশ থেকে দেশান্তরে।

দার্শনিক হিসেবে ফারাবীর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের সর্বত্র। একজন গবেষক হিসেবেও পৃথিবী বাসীর কাছে তার কদর কম ছিলনা। তার গবেষনার মৌলিক বিষয় বস্তু ছিল বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা ও প্রশাখা নিয়ে। পদার্থ বিজ্ঞান, দর্শন, যুক্তি শাস্ত্র, সমাজ বিজ্ঞান, গনিত শাস্ত্র, চিকিৎসা বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে তার অবদান ছিল চোখে পড়ার মত।

বিজ্ঞান ও দর্শনে তার অবদান ছিল সর্বাধিক। পদার্থ বিজ্ঞানে ফারাবী শূন্যতার অবস্থান প্রমান করেছিলেন। একজন দার্শনিক হিসেবেও তিনি ছিলেন নিউপ্লেটোনিস্টদের পর্যায়ে বিবেচিত। একজন দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক হিসেবে তিনি আরোহন করেছিলেন সবার শীর্ষে। এই মহান বিজ্ঞানী মুসলিম মহামনষী আল ফারাবী রাষ্ট্র বিজ্ঞান, সমাজ বিজ্ঞান, দর্শন, যুক্তি শাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে অনেক গ্রন্থ রচনা করেন।

এসব বিষয়ে তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক বলেও অনেকে উল্ল্যেখ করেছেন। কিন্তু তার এসকল অমূল্য গ্রন্থের অধিকাংশই মুসলিম জাতীর সামনে নেই। ফারাবীর মতো এমন অসংখ্য মুসলিম জ্ঞানী গুণি দার্শনিক, চিকিৎসা বিজ্ঞানী এই পৃথিবীতে পদার্পন করেছেন। আর পৃথিবীর মানুষের জন্য রেখে গেছেন অনেক কিছুই কিন্তু আমরা মুসলিমরাই এই মহান ব্যক্তিটিকে চিনি না। তার মতো এমন অসংখ্য মুসলিম মহাবিজ্ঞানীদের কর্মফল সম্পর্কে আমরা জ্ঞাত নয়।

আমরা আজ ছুটে বেড়াচ্ছি সে পাশ্চাত্য সভ্যতার লোকজন কে কি করলো সে বিষয় নিয়ে। আর তাদের প্রশংসায় প মূখর হচ্ছি। আর তাই বলা হয় মুসলিম জাতী আজ তার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ভুলে যাচ্ছে। সেজন্য সিংহ হয়ে শিয়ালের সাতে বসবাস শুরু হয়ে যাচ্ছে বিশ^ ব্যাপী। তাই বলতে পারি মুসলিম জাতি যদি তাদের হারানো গৌরবকে ফিরে পেতে চায় তাহলে যা করা উচিত তা হলো মানুষের তৈরী করা তন্ত্র মন্ত্রের দিকে না ছুটে আল কুরানের দিকে ছুটে আসা। মুসলমানদের গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস অধ্যয়ন করা । তাহলে আল ফারাবীর মতন এমন অসংখ্য বিজ্ঞানীদের দ্বারা আল কুরানের ছাত্র তৈরী করে দিবেন মহান আল্লাহ তায়ালা।

লেখক: প্রভাষক,আইয়ুব হেনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। খতিব, আইয়ুব হেনা পলিটেকনিক জামে মসজিদ।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ