আওয়ার ইসলাম: ফেনীর সোনাগাজীতে সন্ত্রাসীদের দ্বারা অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ।
১১ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এখলাছুর রহমান বলেন, অবিলম্বে নুসরাত হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করা হোক ৷ এরকম জঘন্য অপরাধের ক্ষেত্রে বিচারিক দীর্ঘসূত্রতা আত্মঘাতি ৷ যার কারণে ক্ষেত্রবিশেষে মূল অপরাধীরা পার পেয়ে যায় ও অন্যরা প্রশ্রয় পেয়ে থাকে ৷
তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত এমন ঘটনায় শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে ৷ স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা ছাত্রীদের নিরাপত্তা প্রদানে সরকারকে অধিকতর দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে ৷ ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় পুরো দেশ ও জাতির মূল্যবোধ আক্রান্ত হয় ৷ ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয় ৷ জাতি হিসেবে বারবার আমাদের লজ্জিত হতে হয় ৷ অবিলম্বে এর লাগাম টেনে ধরতে হবে ৷ নুসরাতের লাশ দাফনের আগেই খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক ৷
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিটে ময়নাতদন্ত শেষে নুসরাতের মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়ি ফেনীর উদ্দেশে রওনা হয়েছেন স্বজনেরা। সঙ্গে নুসরাতের মা-বাবা ও ভাইয়েরা রয়েছেন।
এর আগে, বুধবার রাত ৯টা ৩০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা মারা যান ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রের আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি।
এদিকে নিহত নুসরাতের চাচাতো ভাই মুহাম্মদ উল্লাহ ফরহাদ বলেন, নুসরাতের মরদেহ বাড়িতে আনার পর বাদ আসর সোনাগাজী মো. সাবের সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। দাদির কবরের পাশেই হবে তার শেষ শয্যা।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা তার কক্ষে ডেকে নিয়ে রাফিকে যৌন হয়রানি করেন। এ অভিযোগে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করতে রাজি না হওয়ায় তার এ করুণ পরিণতি বলে জানা যায়।
গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান। এ সময় মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের উপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান।
সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে রাফির ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সোমবার রাতে এজাহারে অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা সহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। অন্য আসামীরা হলেন পৌর কাউন্সিলর মাকসুল আলম, প্রভাষক আবছার উদ্দিন, মাদরাসা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম, সাবেক ছাত্র নূর উদ্দিন, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহম্মদ ও হাফেজ আবদুল কাদের।
ইতিমধ্যে ওই মামলার তিন আসামী সহ অন্তত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা সহ ৭ জনকে রিমান্ড দিয়েছে আদালত। এছাড়া তাকে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ পদ থেকেও সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। কর্তব্য অবহেলার অভিযোগে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকেও প্রত্যাহার করা হয়। মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এমএম/