৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশবাসীকে খেলাফত মজলিসের শুভেচ্ছা
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৭:২১ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

আগামীকাল ৮ ডিসেম্বর খেলাফত মজলিসের ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৮৯ সালের ৮ ডিসেম্বর শুক্রবার, সকাল ৯টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম ও দ্বীনদার বুদ্ধিজীবিদের নেতৃত্বে এক উদ্বোধনী সম্মেলনের মাধ্যমে খেলাফত মজলিসের যাত্রা শুরু হয়। সংগঠনের ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেশবাসী ও সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আমীরে মজলিস মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের।

রোববার (৭ ডিসেম্বর) প্রদত্ত এক যৌথ শুভেচ্ছা বার্তায় নেতৃদ্বয় বলেন, দীর্ঘদিনের স্বৈরাচার-ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অপশাসন থেকে দেশবাসী মুক্তি পেলেও আমাদের এখনো কাঙ্ক্ষিত বিজয় আসেনি। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এদেশকে আরো দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। দুর্নীতি, অবিচার ও জুলুম মূলোৎপাটনে এখানে আমূল সংস্কার প্রয়োজন। নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় এখানে প্রশাসনিক সংস্কার ও শিক্ষাব্যবস্থার সকল স্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার বিকল্প নেই।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অবশেষে জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তা প্রশংসনীয়। তবে নির্বাচনের পূর্বে আলাদাভাবে গণভোট অনুষ্ঠিত না করলে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও জনগণের প্রত্যাশিত সংস্কার কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হওয়ার শংকা রয়েছে। এর মধ্যে কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাবমুক্ত পরিবেশ ও নির্বাচনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো তৈরি হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থিমিত।

পরাজিত ফ্যাসিবাদি অপশক্তি ষড়যন্ত্র ও নাশকতায় লিপ্ত। বাংলাদেশ বিরোধী সকল অপতৎপরতার বিরুদ্ধে আরো সোচ্চার থাকার জন্য আমরা জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি। ঈমান ও দেশপ্রেমবোধ জাগ্রত করে আমাদেরকে স্বাবলম্বীতার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সাহসিকতার সাথে সার্বভৌমত্ব বিরোধী যে কোন হুমকী মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সকল ষড়যন্ত্র ও উস্কানী ধৈর্য্যের সাথে মোকাবেলা করতে হবে। উগ্রবাদের কোন পাতানো ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।

খেলাফত মজলিস নেতৃদ্বয় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে আরো বলেন, সকল সংকটের স্থায়ী উত্তরণে প্রয়োজন খেলাফত ভিত্তিক একটি ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা। যেখানে জনগণ হচ্ছে আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি। যেখানে মানুষ মানুষের উপর কোন প্রভুত্ব করতে পারবে না। প্রতিনিধি হিসেবে আল্লাহর বিধান জমিনে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জনগণ নিজেদের জাগতিক কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির ব্যবস্থা করবে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ স. শেষ নবী হিসেবে আমাদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন এবং নিজে সে রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। খোলাফায়ে রাশেদার শাসনামলেও তা পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল।

খেলাফত ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনমান উন্নয়নে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা সুনিপুণভাবে পরিচালিত করে। খেলাফতের আদর্শে একটি জনকল্যাণমূলক ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার ব্যবস্থা আমরা বাংলাদেশে কায়েম করতে চাই। যেখানে ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকল মানুষের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে। যেখানে ধর্মীয় পরিচয়ে নয়, বরং মজলুমের পক্ষে ও জালিমের বিপক্ষে রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর সে লক্ষ্য অর্জনেই ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে খেলাফত মজলিস।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই খেলাফত মজলিস দেশ, জাতি ও ইসলামের স্বার্থে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে আসছে। ময়দানে ত্যাগ-কুরবানীর নজরানা পেশ করছে। ৭ দফা মৌল কর্মসূচি ও ২৫ দফা আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গীকারকে সামনে রেখে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। সুদীর্ঘ ৩৫ বছরে খেলাফত মজলিস দেশের আলেম-উলামা, দ্বীনদার-বুদ্ধিজীবি, পেশাজীবি, শ্রমজীবি সহ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল স্তরের মানুষের একটি কাঙ্ক্ষিত সংগঠনে পরিণত হয়েছে। এই সংগঠনের অগ্রযাত্রায় সবাইকে অংশগ্রহণের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

এলএইস/