ফেনীর ঐতিহ্যবাহী শর্শদি মাদ্রাসার দস্তারবন্দী সম্মেলন ১২ এবং ১৩ ডিসেম্বরে
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৯:৪৯ সকাল
নিউজ ডেস্ক

||উসামা বিন আফজাল||

ফেনীর ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি বিদ্যাপীঠ জামেয়া দারুল উলুম শর্শদির প্রথম বারের মতো দস্তারবন্দী মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে । চলতি ডিসেম্বর মাসের ১২ , ১৩ তারিখ আগামী শুক্র ও শনিবারে   এটি অনুষ্ঠিত হবে বলে বেশ‌ প্রচারণার কাজ পরিলক্ষিত হচ্ছে । ইতিমধ্যেই মহাসম্মেলনকে কেন্দ্র করে প্রাক্তন ছাত্র এবং মাদ্রাসার শুভানুধ্যায়ীদের মাঝে বেশ উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে । 
দুই দিন ব্যাপী এই সম্মেলনে দেশের বিখ্যাত উলামায়ে কেরামগন অংশ নেবেন  । এতে বিগত আঠারো বছরের  দাওরায়ে হাদীস সমাপনী প্রায় অর্ধ হাজার  ছাত্রকে  দস্তারে ফযিলত তথা পাগড়ি প্রদান করা হবে । 

মাদ্রাসাটির সহকারী শিক্ষা সচিব মাওঃ সালমান হায়দার জানিয়েছেন যে  সম্মেলনের প্রথম দিনের জন্য  আমন্ত্রিত আলোচকগন হলেন 
শায়খুল হাদীস আল্লামা শেখ আহমাদ (হাটহাজারী মাদ্রাসা ) মুফতি নুরুল হক ( পীর সাহেব বটগ্রাম) শাইখ আব্দুল গাফফার হাফিঃ  ( জামিয়াতুল উলুমিল  ইসলামীয়া মুহাম্মাদপুর,  ঢাকা ) এবং মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী (  হেফাজতে ইসলাম বাঃ) । 

আর দ্বিতীয় দিনের জন্য আমন্ত্রিত আলোচকগন হলেন হযরত মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব  মধুপুর  ,  আল্লামা মুফতি দিলাওয়ার হোসাইন সাহেব ( মসজিদে আকবর কমপ্লেক্স ),  মুফতি কেফায়েতুল্লাহ সাহেব  ( হাটহাজারী মাদ্রাসা)  
মুফতি মুস্তাকুন্নবী দাঃ বাঃ ( কুমিল্লা) ,  
 এবং ডক্টর নুরুল আবসার আজহারী (  হাটহাজারী মাদ্রাসা ) । 

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিবসকে দস্তারে ফজিলত প্রদান করার জন্য  নির্ধারণ করা হয়েছে।  
আমন্ত্রিত আলোচকগনের মধ্য থেকে বিশেষত মুফতি কেফায়েতুল্লাহ  দাঃবাঃ (হাটহাজারী) তিনি দ্বিতীয় দিন  জোহরের পর ফারেগীনদের জন্য বিশেষ নাসিহা প্রদান করবেন ।  

দস্তারবন্দী সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জামিয়ার প্রকাশনা বিভাগ প্রয়াত পাঁচ মনীষীর জীবন স্মরণিকা প্রকাশ করছে বলেও জানানো হয়েছে।   
অপর দিকে জামিয়ার অন্যতম প্রয়াত মনীষী আল্লামা আব্দুল আজিজ রাহিঃ এর জীবনীর উপর স্বতন্ত্র জীবনীগ্রন্থ ও প্রকাশিত হবে।   

ফেনীর জেলার বুকে সবচেয়ে প্রাচীনতম এই  মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৪৩ সালে । এরপর থেকে আজ অবধি সুদীর্ঘ  তেরাশি বছর   এই মাদ্রাসাটি ইসলামী শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধের বাতিঘর হিসেবে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। এটি ফেনী জেলার বুকে প্রতিষ্ঠিত সর্বপ্রথম কওমী মাদ্রাসা । 
একে কেন্দ্র করেই পরবর্তীতে ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলে শত শত মাদ্রাসা,  মসজিদ গড়ে উঠে।  

মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা শাইখ শাহ সুফি নূর বখশ রাহিঃ ছিলেন আল্লামা আশরাফ আলী থানবী রাহিঃ এর অন্যতম খলিফা এবং বাংলাদেশের অন্যতম সুফি সম্রাট । তার মৃত্যুর পর থেকে  যথাক্রমে  শাইখ শহীদ নুর নজির রাহিঃ ( ১৩৬৯ হিঃ- ১৯৭১ইঃ ),  আল হাফেজ রশীদ আহমাদ রাহিঃ ( ১৯৭১- ১৯৮০),  এবং মাওলানা নুরুল ইসলাম এনায়েতপুরী রাহিঃ ( ১৯৮০ - ২০০৯ )  
এবং পুনরায় আল হাফেজ রশীদ আহমাদ রাহিঃ ( ২০০৯ - ২০২৩ পর্যন্ত )  মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।  

বর্তমানে মাদ্রাসাটির সদরে মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দেশের অন্যতম প্রথিতযশা আলেমে দ্বীন,  হাজারো আলেমের উস্তাদ শায়খুল হাদীস আফজালুর রহমান দাঃবাঃ।  তিনি প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে মাদ্রাসাটির নিরলস খেদমত করে যাচ্ছেন ।  এবং ২০২৩ সাল থেকে নিয়মিত মাওলানা ইসমাঈল হায়দার দাঃবাঃ মাদ্রাসার মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।  
বর্তমানে এখানে প্রায় এক হাজার ছাত্র নুরানী, হিফজ, ও কিতাব বিভাগ,  তাকমিলে  এবং ইফতা বিভাগে  অধ্যয়নরত আছে ।  

উল্লেখ্য, ফেনীর শর্শদি গ্রামটি ঐতিহাসিকভাবে খুব তাৎপর্য বহন করে ।  ইতিহাসবিদগনের মতে এই গ্রামটি ছিলো বাংলার সুলতান ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের দ্বিতীয় রাজধানী।  তিনি তার শাসনামলে এখানে চার দিঘি খনন সহ বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণ করে যান। কালের গর্ভে অনেক কিছু  হরিয়ে গেলেও আজো এ মাটির বুকে ইতিহাসের গন্ধ খুজে পাওয়া যায়। ইতিহাস ঐতিহ্যের সুদ্বীপ্ত সাক্ষী হয়ে  দারুল উলুম শর্শদি মাদ্রাসার বুকেই দাঁড়িয়ে আছে মোঘল আমলের পাঁচ শত বছরের পুরনো বীর মুজাহিদ মোহাম্মদ আলী চৌধুরী মসজিদ।

এনএইচ/