ইসলামী শরীয়ত আক্বিদা মানলেই মু’মিন হওয়া যাবে
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৯:০৭ সকাল
নিউজ ডেস্ক

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, শরীয়ত আক্বিদার নামই ইসলাম। মুসলিম হতে হলে শরীয়ত আক্বিদায় দু’টাই মানতে হবে। হেদায়েতের রাস্তা আল্লাহ স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আখেরাতকে অস্বীকারকারীরা তাওহিদের অনুসারী হতে পারে না। তাওহিদের ব্যাখ্যা আল্লাহ পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আল্লাহর শরীয়ত মানতে হবে। এটাই ঈমান। বুদ্ধিজীবীর নামে বাউল গোষ্ঠী তাওহিদ মানে না। বুদ্ধিজীবীর নামে ওরা মানুষকে ধোকা দিবে। আর বলবে ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। ওদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ঈমান এমন সম্পদ এই সম্পদ যাতে হাত ছাড়া না হয় সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। ইসলামী শরীয়ত আক্বিদা মানলেই মু’মিন হওয়া যাবে।

খতিব বলেন, আল্লাহ ইরশাদ করেন তোমাদের মধ্যে একটি জামাত থাকতে হবে তারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে। অন্যায় গুনার কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখে তারাই সফলকাম। আল্লাহর দেয়া হেদায়েত ছেড়ে যারা বিভক্তি হয়েছে তাদের মতো হওয়া যাবে না। যারা হক বাদ দিয়ে বাতিলের রাস্তা গ্রহণ করে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। খতিব আরো বলেন, হাশরের দিন কিছু মানুষের চেহারা উজ্জ্বল হবে। এসব মানুষের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী জান্নাত। কিছু মানুষ চেহারা কালো নিয়ে উঠবে তারা কুফরি ও গোমরাহির রাস্তায় চলেছে। তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।

খতিব বলেন, আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে ধরতে হবে। ইসলামী শরীয়তকে মজবুত করে ধরতে হবে। তিনি বলেন, মদিনায় রাসূল (সা.) মাধ্যমে ইসলামী শরীয়ত পাওয়ায় সাহাবায়ে কেরাম বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে পেছনের শত্রুতা ভুলে গিয়ে সৌহার্দ্য ভ্রাতৃত্বে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। দ্বন্দ্ব-বিবাদ ভুলে গিয়ে পরস্পরের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলতে হবে। খতিব বলেন, আল্লাহ মু’মিন বান্দাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, তোমরা তাকওয়ার জিন্দেগি অবলম্বন করো। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো করার মতো করে। তোমাদের মউত আসুক মুসলিম হয়ে। মুসলিম হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হলে সব সময় কুরআনের অনুসরণ করে চলতে হবে। নেক আমল কাল করবো পরে করবো নয়; আল্লাহর দেয়া হিম্মত, সৎ সাহস নিয়েই নেক আমল করতে হবে। ঈমানী শক্তিকে হিম্মতের সাথে কাজে লাগাতে হবে। নফসের ধোকায় পড়া যাবে না। মনে রাখতে হবে। শয়তানের সব চক্রান্ত ঈমানী শক্তির কাছে দুর্বল। শয়তান নফসের সাথে যুদ্ধ করার নামই হচ্ছে মুজাহাদা। নফসের সাথে যুদ্ধ করে চলতে পারলে আল্লাহ হেদায়েতের রাস্তা সহজ করে দিবেন। এক সময়ে শরীয়তের ওপর চলাও সহজ হয়ে যাবে।

ঢাকা দক্ষিণ মুগদা ব্যাংক কলোনি রসুলবাগ জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি রাহমাতুল্লাহ তাক্বী বিন আব্দুল গনী আজ জুমার-পূর্ব খুৎবায় বলেন, আল্লাহ তা‘আলার কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য ও মনোনীত ধর্ম হলো ইসলাম। ইসলামে যে বিষয়গুলোকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো ইলমে দ্বীন, অর্থাৎ আল্লাহর প্রদত্ত হিদায়াতের জ্ঞান অর্জন। দুনিয়া যখন অন্ধকারে, অজ্ঞতা, শিরক ও জুলুমে ঢেকে গিয়েছিল, তখন আল্লাহ তা‘আলা প্রথম ওহি নাযিল করলেনÑ “তোমার প্রতিপালকের নামে পড়ো।” এই বাক্যই গোটা বিশ্বকে জ্ঞানের আলোতে আলোকিত করেছিল। ইসলামের ইলমের আলো মানুষকে সভ্যতা, ন্যায় ও নেতৃত্বের শিখরে পৌঁছে দেয়েছিল।

ইলম যা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জানা জরুরি : ঈমান-আকিদা, নামাজ-রোজা, হালাল-হারাম, লেনদেনের মৌলিক বিধান। এসব শেখায় অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। নবী করিম (সা.) ঘোষণা করেছেন, “প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ইলম অর্জন করা ফরজ।” (সুনান ইবনু মাজাহ-২২৪) এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়, কোনো মুসলিম তার জীবনে ধর্মীয় জ্ঞান ছাড়া পূর্ণ মুসলিম হওয়ার যোগ্যতা পায় না। ইলম অর্জনের মাধ্যমে ব্যক্তি কেবল নিজের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবন উন্নত করে না, বরং সমাজকে হেদায়াতের পথে পরিচালিত করতে পারে।

খতিব বলেন, ইলমে দ্বীনের দ্বিতীয় প্রকার হলো ফরযে কিফায়া যা সমষ্টিগত সকলের ওপর ফরজ। কিছু লোক সেটাকে অর্জন করবে। আর অন্যরা তাদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করবে। সমাজের কল্যাণ, স্থায়িত্ব ও ভবিষ্যৎ রক্ষায় কিছু বিশেষ ইলমের প্রয়োজন তাফসীর, হাদিস, ফিকহ, ইসলামী ইতিহাস, গবেষণা ইত্যাদি। উম্মাহর একটি দল এসব ইলমে দক্ষতা অর্জন করবে, তারা শিখলে পুরো সমাজ দায়মুক্ত হয়; আর তারা না শিখলে সবাই গুনাহে লিপ্ত হয়।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “মুমিনরা সবাই একসাথে বের হয়ে যাবে, এমনটা নয়। বরং প্রত্যেক গোত্র-গোষ্ঠী থেকে একটি দল বের হবে, যারা দ্বীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করবে এবং ফিরে এসে নিজেদের জাতিকে সতর্ক করবে যাতে তারা সাবধান হয়ে যায়।” (সূরা তাওবা-১২২)

এই ধরনের ইলমেই শিক্ষা দেয়া হয় কওমি মাদরাসায়, যাতে করে সবাইকে গোমরাহী এবং পথভ্রষ্টতা থেকে মানুষদেরকে রক্ষা করতে পারে। যতদিন ইলমে দ্বীনের ধারক-বাহকগণ দুনিয়াতে থাকবে, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার সব নেজাম ঠিক রাখবেন। আমি যখন এই ওলামায়ে কেরাম দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে, তখনই সমগ্রকে ধ্বংস করে দিবেন। খতিব আরো বলেন, এ কারণেই কওমি মাদরাসা উম্মাহর মেরুদ-। যখনই দেশে কোনো সংকট তৈরি হয়, তখন তারাই সবার আগে সমাধানের জন্য এগিয়ে যায়। খতিব বলেন, এখানেই হক্কানী আলেম তৈরি হয়, যারা উম্মাহকে পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করেন। কওমি মাদরাসার লক্ষ্য হলো যখনই কোনো ব্যক্তি কুরআন ও হাদিসের কোনো বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে, কুরআন ও হাদিসের আয়াতকে বিকৃতি করে প্রচার করবে, যে কোনো মূর্খ ভুল ব্যাখ্যা করে পৃথিবীতে ফেতনা, ফাসাদ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, তখনই কওমি আলেম উলামা ত্বলাবার তাদেরকে জান প্রাণ দিয়ে রুখে দেয়।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ’প্রতি প্রজন্মে ন্যায়পরায়ণ আলেমগণ এই ইলম বহন করবে। তারা ইলম থেকে দূর করবে বাড়াবাড়িকারীদের বিকৃতি, বাতিলপন্থিদের অপপ্রচার এবং অজ্ঞদের ভুল ব্যাখ্যা।” (আল-বাইহাকী) প্রতিটি মুসলিমকে উচিত বিশ্বস্ত ও ন্যায়পরায়ণ শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা। যা একমাত্র কওমি মাদরাসাতেই সম্ভব। এতে ব্যক্তিগত উন্নতি ও আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি পায়, পাশাপাশি সমাজে সঠিক জ্ঞান ছড়িয়ে আল্লাহর পথে মানুষকে পরিচালিত করা সম্ভব হয়। ইলম অর্জন কেবল ব্যক্তিগত ফরজ নয়, এটি সমাজের কল্যাণ ও ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা।

জুরাইন বায়তুল জলীল জামে মসজিদের খতিব মুফতি মুহাম্মদ লিয়াকত হোসাইন বিন মাস্টার মুহাম্মদ আলী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানের বলেন, দুটি নেয়ামতের ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষই উদাসীন। খতিব বলেন, আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে অসংখ্য অগণিত নেয়ামত দান করেছেন, যেগুলো হিসাব করা কারো পক্ষেই সম্ভব না। তার মধ্যে অন্যতম দুটি নেয়ামত হলো: সুস্থতা এবং অবসরতা। এই সুস্থতা যে কত বড় আল্লাহর নেয়ামত তা মানুষ যখন অসুস্থ হয় তখন বুঝে আসে। কারণ মানুষ যখন অসুস্থ হয়, তখন সঠিকভাবে কোনো কাজই করতে পারে না। দুনিয়ার কাজ করতেও কষ্ট হয় এবং আখেরাতের কাজ করতেও কষ্ট হয়। নামাজ, রোজা এবাদত বন্দেগী ইত্যাদি থেকে শুরু করে খাবার, ঘুম, নিদ্রা,সবকিছুর ভিতরেই একটা অশান্তি এবং অস্থিরতা বিরাজ করে।

খতিব বলেন, সুস্থতার সময় যেমন সমস্ত কাজগুলো সুন্দরভাবে করা যায়, অসুস্থ হয়ে গেলে সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ঠিক তেমনিভাবে মানুষ যখন ব্যস্ত হয়ে পড়ে, তখনো দুনিয়া এবং আখেরাতের অনেক কাজ তার থেকে ছুটে যায়। মনে চাইলেও তখন সেটা করার সুযোগ হয়ে ওঠে না। তখন হয়তো মনে খুব আগ্রহ থাকে কিন্তু আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও সে কাজটা করার মত সুযোগ থাকে না। তাই একজন মানুষ ব্যস্ততার আগে যেভাবে দ্বীনের কাজ করা সহজ হয়, ব্যস্ততার পরে ওইভাবে করাটা সহজ হয় না।

রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, এমন দুটি নেয়ামত আল্লাহপাক মানুষদের দান করেছেন, যে দুটি নেয়ামতের ব্যাপারে মানুষ অত্যন্ত উদাসীন। আর সে দুটি নেয়ামতেই হলো সুস্থতা এবং অবসরতা। তাই আসুন আমরা সুস্থতা এবং অবসরতাকে আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে বিশাল বড় নেয়ামত মনে করি। সুস্থতা ও অবসরতার ভিতরেই দ্বীনের কাজে বেশি বেশি সময় দেয়ার জন্য চেষ্টা করি। অন্যথায় একটা সময় আসবে দ্বীনের কাজ করতে মনে চাইলেও তখন সুস্থ না থাকার কারণে, অথবা অবসর না থাকার কারণে ওই কাজ করাটা কঠিন হয়ে যাবে তখন আফসোস করা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। আল্লাহ তা‘আলা যেন আমাদেরকে সুস্থতা এবং অবসরতার সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর নৈকট্যতা অর্জন করার তৌফিক দান করেন।(আমিন)

এনএইচ/