ভালোদের তুলে না আনলে অযোগ্যরা ওয়াজের মাঠ দখল করবেই
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর, ২০২৫, ০৪:৫৮ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

||যুবায়ের আহমদ||

তিনি কৌতুক অভিনেতা। হঠাৎ দেখি বুস্ট করা ওয়াজ ফেসবুকে। ওমা! ভাইরাল। কিছুদিন পর দেখি, আমাদের পাশের গ্রামের এক মাহফিলে 'প্রধান বক্তা'। পোস্টার ব্যানারে অনেক বড় করে নাম দেওয়া। কর্তৃপক্ষের সান্ত্বনা, তারা যত টাকাই লাগুক, বড় ভাইরাল বক্তা এনেছেন। মনে নানা প্রশ্ন এলো। মনকে বললাম, কৌতুক অভিনেতাও তো ভালো আলোচক হতে পারেন। কয়েকদিন পর ওই এলাকার একজন সিনিয়র আলেমের সাথে দেখা। ভালো ধারণা নিয়েই জিজ্ঞেস করলাম, মাহফিল কেমন হলো?

তিনি চরম বিরক্তি নিয়ে বললেন, ৩০ মিনিট কী বলেছে, না বলেছে বুঝতে পারেনি কেউ। টাকা নিয়েছে ৪০ হাজার। বিশাল প্যান্ডেল করা হয়েছিল, লোকসমাগম হয়নি।

কিছুদিন পর আরেক মাহফিলে দেখি একই অবস্থা। ভাইরাল বলে কথা! আগে আমি কথা বললাম। পরে তিনি বসেছেন, খেতে খেতে বক্তব্য শুনলাম। আগাগোড়া নেই। আয়াত এক, বিষয় আরেক। কয়েক মিনিটে মাঠ ফাঁকা।

এর কিছুদিন পর তিনি আমার ওয়াটসঅ্যাপে একটা লিংক পাঠালেন। তাতে লেখা তিনি বিদেশি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট (পিএইচডি) ডিগ্রি নিয়েছেন। মিলাতে পারছিলাম না। একজন পিএইচডি ডিগ্রিধারীর তো মৌলিক জ্ঞান থাকবে, আলোচনার মান থাকবে।

আজ গণমাধ্যমে রিপোর্ট এলো, তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকেও ফেল করেছিলেন। কিন্তু ইফার সাবেক ডিজি শামীম আফজালকে ম্যানেজ করে জাল সনদ দিয়ে তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনে সহকারী পরিচালক (১ম শ্রেণি, ৯ম গ্রেড) পদে চাকরিও নিয়ে নিয়েছিলেন। স্নাতকে (বিএ) ফেল করা লোকটি নামের সাথে ডক্টর লাগিয়ে বেড়িয়েছে। গলার জোরে অনেক কওমি-আলিয়া মাদরাসার ১৫-২০ বছর ধরে হাদিস পড়ানো সম্মানিত মুহাদ্দিসদেরও ওপরে তার নাম দিতে হয়েছে।

আসলে ওয়াজের ময়দানে গলার জোর আর ইউটিউব-ফেসবুকে বক্তব্যের ভিউয়ার্সের সংখ্যাটাই বড়। একজন বক্তার যতগুলো বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার, আল্লাহ আপনাকে সব দিয়ে রহম করলেও আয়োজকদের কাছে আপনি ছোট। আপনার চমৎকার তেলাওয়াত, বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, চমৎকার ভাষা, কণ্ঠ এমনকি জনগণকে ধরে রাখার যোগ্যতাও দিয়েছেন, কিন্তু অনলাইনে আপনার ভিউয়ার্সের সংখ্যা না থাকলে বা কখনো কখনো দলীয় পরিচয় না থাকলে বেশি ভিওয়ার্সওয়ালা বক্তার তুলনায় আপনি একদমই ছোট।

ভুলত্রুটি থাকবে। অনেক সতর্ক থাকার পরও ভুল হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এরপরও একজন বক্তার তেলাওয়াত অশুদ্ধ থাকবে, মুযাফ মুযাফ ইলাইহির ইরাবও বুঝবে না কিন্তু 'প্রতিষ্ঠিত বক্তা' হয়ে যাবে বা নিজের স্বার্থে বিশেষ দলের পক্ষে কথা বললেই ওই দলের আনুকূল্য পেয়ে বড় বক্তা হিসেবে খ্যাতি পাবে, এটা দুঃখজনক।

স্থানীয় অনেক আলেম থাকেন যারা চমৎকার কথা বলেন, তাদের সুযোগ দিন! আমি কিশোরগঞ্জের বেশ কয়েকজন বড়ভাই ও ছোটভাইকে জানি, যারা বাইরে তেমন যান না কিন্তু চমৎকার আলোচনা করেন। তাদের তুলে আনা দরকার। আমাদের প্রয়োজনেই দরকার৷ ভালোদের তুলে না আনলে অযোগ্যরা মাঠ দখল করবে এটাই তো স্বাভাবিক।

আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন!

লেখক: আলেম স্কলার ও লেখক

এলএইস/