প্রাথমিক শিক্ষায় নৃত্য-সংস্কৃতি: প্রজন্মের জন্য আত্মবিনাশী সিদ্ধান্ত
প্রকাশ:
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৪:৪০ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
![]()
ওলিউল্লাহ মুহাম্মাদ প্রাথমিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত শিশুদের সৎ, শিক্ষিত, আদর্শবান এবং নৈতিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। শিশুকাল হলো চরিত্র গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়ে তাদের মনে যে শিক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রোথিত করা হয়, তা সারা জীবনের জন্য স্থায়ী হয়ে যায়। তাই রাষ্ট্রের শিক্ষানীতি ও পরিকল্পনা হওয়া উচিত ইসলামী মূল্যবোধকে কেন্দ্র করে, যা মানুষের ভেতরে সত্যিকারের সভ্যতা, শিষ্টাচার ও নৈতিকতা গড়ে তুলতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমান সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নাচ-গানের জন্য ৬৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা মুসলিম শিশুদের ধর্মীয় চেতনাকে ধ্বংস করে দেওয়ার এক আত্মঘাতী উদ্যোগ ছাড়া কিছু নয়। আজকের বাস্তবতা অত্যন্ত ভয়াবহ। স্মার্টফোন এখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামে-গঞ্জে, শহরে—প্রায় প্রতিটি ঘরেই শিশুরা মোবাইল ফোন হাতে পাচ্ছে। কিন্তু এ ফোন শিক্ষার মাধ্যম না হয়ে বরং অশ্লীল সিনেমা, গান, নাচ, ইউটিউব, টিকটক এবং গেমসের নেশায় তাদের মগ্ন করে রাখছে। এর ফলে শিশুদের পড়াশোনা থেকে বিমুখতা সৃষ্টি হচ্ছে, মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে, সময় অপচয় হচ্ছে এবং সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো—তাদের মূল্যবান চরিত্র ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এর মাঝেই রাষ্ট্র যদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নাচ-গানকে শিক্ষা হিসেবে বাধ্যতামূলকভাবে প্রবর্তন করে, তবে এই প্রজন্মের ধ্বংস ত্বরান্বিত হবে। যেমন বলা হয়, "নাচুইন্না বুড়ি যদি ঢোলে বাড়ি পায় তবে আর ঠেকানোর উপায় থাকে না"—তেমনি শিশুদের উপর নাচ-গানের সরকারি অনুমোদন তাদের অশ্লীলতায় আরও উৎসাহিত করবে। একটি মুসলিম রাষ্ট্রে যেখানে রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, সেখানে সেটি না করে উল্টো ধর্মবিরোধী সংস্কৃতিকে শিশুদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। পৃথিবীতে একমাত্র ধর্মই পারে মানুষকে সত্যিকার অর্থে সভ্য, শিষ্টাচারসম্পন্ন এবং চরিত্রবান করে তুলতে। যে মানুষ ধর্ম থেকে যত দূরে থাকে, সে তত অসভ্য ও মূল্যহীন জীবনে পতিত হয়। শিশুদের কোমল মনে যদি ধর্মীয় শিক্ষা ঢোকানো হয়, তবে তারা সারা জীবন সেই মূল্যবোধ আঁকড়ে ধরে রাখে, অন্যায়-অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকে এবং একটি সভ্য জাতিতে পরিণত হয়। কিন্তু যদি ধর্মের স্থলে অশ্লীলতা, নাচ-গান, পশ্চিমা সংস্কৃতি ও ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তবে সেই প্রজন্ম ধ্বংস হতে সময় লাগবে না। এটা নিছক শিক্ষানীতি নয়; বরং আগামী প্রজন্মের ঈমান, আদর্শ ও চরিত্রকে হত্যা করার এক সূক্ষ্ম কৌশল। যদি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি হবে শত বছরের মধ্যে বাংলাদেশের ইসলামের বিরোধী সবচেয়ে ভয়াবহ ও গর্হিত একটি পদক্ষেপ। একদিকে স্মার্টফোন ও সামাজিক মাধ্যমের নেশা, অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নাচ-গান শিক্ষা—এ দুটি মিলে আগামী প্রজন্মকে ধর্ম থেকে বিমুখ, নাস্তিকতা ও ভোগবাদে নিমজ্জিত করে তুলবে। তাহলে প্রশ্ন জাগে—আমাদের রাষ্ট্র কোন পথে হাঁটছে? আমাদের আগামী প্রজন্মকে কাদের হাতে সঁপে দিতে চাই? উপদেষ্টা পরিষদে কি একজনও সুস্থ রুচিবোধসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব নেই, যিনি এই ভয়াবহ পরিণতির কথা রাষ্ট্রকে বুঝিয়ে দেবেন? আমাদের ভবিষ্যৎ কি এভাবেই ধুলিস্যাৎ হয়ে যাবে? এটাকেই কি বলা হবে "সংস্কার"? নাকি এটা প্রকৃতপক্ষে আত্মঘাতী এক পতনের সূচনা? রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকদের উচিত এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা এবং মুসলিম শিশুদের জন্য ইসলামী মূল্যবোধভিত্তিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। ইসলামই পারে মানুষকে সত্যিকারের সভ্য, সুশিক্ষিত এবং চরিত্রবান করতে। অন্য কোন পথ গ্রহণ করা মানে জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া। আজকের শিশুদের সঠিক পথে গড়ে তোলার জন্যই আগামী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। তাই আমরা কামনা করি—রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারকদের অন্তরে সুবুদ্ধির উদয় হোক, তারা যেন শিশুদের জন্য সঠিক ও কল্যাণকর সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন। লেখক: শিক্ষক, গবেষক ও প্রবন্ধকার এমএইচ/ |