আসামে বাংলাভাষী মুসলমানদের ছয় শতাধিক ঘরবাড়ি উচ্ছেদ
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:০৩ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

মুহাম্মাদ শোয়াইব

ভারতের আসামে বাংলাভাষী মুসলিম পরিবারের শত শত ঘরবাড়ি কর্তৃপক্ষ গুঁড়িয়ে দিয়েছে, যা নিয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছে।

‘কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিসের’ তথ্য অনুযায়ী, সোশ্যালিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (SPI) এ ঘটনাকে “অবৈধ ও অমানবিক” আখ্যা দিয়েছে। দলের সংসদীয় বোর্ড চেয়ারম্যান সৈয়দ তাহসীন আহমেদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সব প্রয়োজনীয় নথি থাকা সত্ত্বেও তাদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। “এরা তো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এখানে বসবাস করছে। মাত্র দু’দিনের নোটিশে গোটা গ্রাম ভেঙে ফেলার আইন কোথায়?”— প্রশ্ন রাখেন তিনি।

SPI-এর আট সদস্যের প্রতিনিধি দল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়ে মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরে। তাদের রিপোর্টে বলা হয়, হাসিলা ভালে একাই ৬৬৭ পরিবার গৃহহীন হয়েছে এবং অন্তত তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন। কারবালায় প্রায় ৩০০ পরিবার এখন এক স্থানীয় মুসলিম কৃষকের দেওয়া আশ্রয়ে আছে, যিনি নিজেও কর্তৃপক্ষের হয়রানির মুখে রয়েছেন।

জননাতপুরে ১৬১ পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে, যেগুলো ছিল স্থানীয়দের দেওয়া অস্থায়ী জমিতে নির্মিত। ধাবাড়ি জেলার বলসিপাড়ায় প্রায় ২ হাজার পরিবার—অর্থাৎ প্রায় ১০ হাজার মানুষ—বাস্তুহারা হয়েছে। আহমেদ জানান, এসব মানুষ খোলা আকাশের নিচে অস্থায়ী তাবুতে দিন কাটাচ্ছে, যেখানে খাবার, চিকিৎসা বা বিশুদ্ধ পানির কোনো ব্যবস্থা নেই।

তিনি আরও বলেন, প্রায় ২০০ পুলিশ সদস্য কিছু এলাকা ঘিরে রেখেছে, তবে শতাধিক ক্ষতিগ্রস্ত SPI-র প্রতিনিধিদের কাছে তাদের দুর্দশার কথা জানিয়েছেন। “এটা শুধু সম্পত্তি ধ্বংসের বিষয় নয়, বরং সম্মান, বেঁচে থাকা এবং মৌলিক অধিকারের প্রশ্ন,”— জোর দিয়ে বলেন আহমেদ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কর্মী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছে, বৈধ নথি থাকা সত্ত্বেও কেবল বাংলাভাষী মুসলমানদের লক্ষ্য করে এই উচ্ছেদ চালানো হচ্ছে, যা এক ধরনের পরিকল্পিত বর্জন অভিযান।

পর্যবেক্ষকদের মতে, কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া হাজারো মানুষকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা ভারতের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।

SPI প্রতিনিধি দল দেশি-বিদেশি নাগরিক সমাজ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, নীরবতা কেবল মানবিক বিপর্যয়কে আরও গভীর করবে।

এমএইচ/