প্রজাপতি: রঙিন পাখার গল্পে প্রকৃতির কবিতা  
প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৬:২৯ বিকাল
নিউজ ডেস্ক

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান  

প্রজাপতি—শব্দটা শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে রঙিন, নরম পাখার এক ক্ষণিক অথচ মোহনীয় প্রাণী। ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ানো, হালকা বাতাসে ভেসে চলা আর রঙের খেলায় প্রকৃতিকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত। প্রজাপতি শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, এটি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

প্রজাপতির জন্ম রহস্য  
প্রজাপতির জীবনচক্র এক বিস্ময়কর রূপান্তরের গল্প। এটি শুরু হয় ডিম থেকে—এরপর লার্ভা (শুঁয়োপোকা), তারপর পিউপা (ম্যাঁচা), এবং শেষে পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতি। এই চক্রটিকে Metamorphosis বলা হয়। এক নিষ্প্রাণ শুঁয়োপোকা কীভাবে একদিন রঙিন পাখা মেলে উড়ে বেড়ায়, সেটা প্রকৃতির এক চমকপ্রদ ম্যাজিকের মতো।

প্রকৃতির বন্ধু  
প্রজাপতিরা ফুলের পরাগ ছড়িয়ে দেয়, যেটা গাছের প্রজননে সাহায্য করে। মৌমাছির মতো তারাও পরাগবাহী হিসেবে পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে, তারা পরিবেশ দূষণের সূচক হিসেবেও কাজ করে। কোনো অঞ্চলের প্রজাপতির সংখ্যা কমে গেলে ধরে নেওয়া যায়, সেখানে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

প্রজাপতির বৈচিত্র্য  
বিশ্বে প্রায় ২০,০০০ প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। শুধু বাংলাদেশেই আছে প্রায় ২৫০+ প্রজাতি। কেউ হালকা নীল, কেউবা গাঢ় কমলা বা কালো সাদা মিশ্রণে সাজানো। বাংলাদেশের সুন্দরবন, চট্টগ্রাম, সিলেট অঞ্চলগুলোতে অনেক দুর্লভ প্রজাতির প্রজাপতির দেখা মেলে।

বিপন্নতার ছায়াআধুনিক সভ্যতার বিস্তার, বন উজাড়, কীটনাশক ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেক প্রজাতির প্রজাপতি আজ বিলুপ্তির পথে। তাদের বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রজাপতির রক্ষা আজ পরিবেশ রক্ষারও একটি অংশ।  

প্রজাপতি আমাদের শৈশবের কল্পনাকে ছুঁয়ে থাকা এক জীবন্ত রূপকথা। তার উড়ান শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং একটি সুস্থ পৃথিবীর নিঃশব্দ বার্তাবাহক। তাই আসুন, এই ছোট্ট প্রাণীগুলোর জন্যও একটু জায়গা করে দিই প্রকৃতিতে। কারণ যেখানে প্রজাপতি আছে, সেখানে জীবন বেঁচে আছে।

এমএইচ/