দাঁড়িয়ে সম্মান জানানোর বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা
প্রকাশ:
০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৫:৩৫ বিকাল
নিউজ ডেস্ক |
![]()
ইসলামে মানুষের পদমর্যাদা অনুযায়ী সম্মান প্রদর্শন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাদের শিখিয়েছেন, বড়দেরকে শ্রদ্ধা করা এবং ছোটদের প্রতি স্নেহ প্রদর্শন করা ঈমানের অংশ। পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সালাম দেওয়া তাঁর সুন্নত। তবে দাঁড়িয়ে সম্মান জানানোর ক্ষেত্রে শরিয়তের স্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। হজরত মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি কামনা করে লোকজন দাঁড়িয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানাক, সে যেন জাহান্নামে তার জায়গা বানিয়ে নেয়।(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৫২২৯) আরেক বর্ণনায় হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, সাহাবিদের কাছে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর চেয়ে প্রিয় কোনো ব্যক্তিত্ব ছিলেন না। তবুও তাঁকে দেখে তাঁরা দাঁড়াতেন না। কারণ, তাঁরা জানতেন, তিনি এটি পছন্দ করেন না। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৭৫৪) এ থেকে প্রমাণিত হয়, দাঁড়িয়ে সম্মান আদায় করা বা তা নিজের জন্য কামনা করা ইসলামে সমর্থিত নয়। প্রখ্যাত আলেম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) এ প্রসঙ্গে বলেন, সাহাবিরা সাধারণত রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে দেখে দাঁড়াতেন না। তবে সফর শেষে আগমনের সময় অভ্যর্থনা জানাতে তাঁরা দাঁড়িয়ে যেতেন। অন্যদের ক্ষেত্রেও এ রীতি চালু ছিল। খুলাফায়ে রাশেদিনের যুগেও কারও সম্মানে দাঁড়িয়ে থাকার প্রথা ছিল না। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে অনেক স্থানে এ অভ্যাস গড়ে উঠেছে। তাই সতর্ক থাকা জরুরি। যদি কোনো অঞ্চলে কারও প্রতি দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা প্রদর্শন সামাজিক রীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থাকে, এবং তা না করলে অপমান বা বিরূপতা সৃষ্টি হয় তাহলে সেখানে দাঁড়িয়ে সম্মান জানানো বৈধ। কারণ, ইসলামে সম্পর্ক রক্ষা ও ফিতনা দূর করাও জরুরি। তবে এর সঙ্গে অহংকার বা নিজের জন্য দাঁড় করানোর মানসিকতা যেন যুক্ত না হয়। মূল নিষেধাজ্ঞা হলো অন্য সবাই দাঁড়িয়ে থাকবে আর একজন বসে থাকবে। এ অবস্থাই অহংকার ও আত্মগৌরবের প্রতীক, যা ইসলামে নিষিদ্ধ। কিন্তু আগন্তুকের সঙ্গে সৌজন্য প্রকাশে দাঁড়ানো এ নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নয়। সালাফে সালেহিনের আদর্শ অনুসরণেই প্রকৃত কল্যাণ। তবে কেউ যদি এ বিষয়টি না বোঝে এবং তাকে দাঁড়িয়ে সম্মান না জানালে বিভেদ বা শত্রুতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানানোতে আপত্তি নেই। কারণ, ইসলামের উদ্দেশ্য ফাসাদ দূর করা ও হৃদ্যতা বজায় রাখা। সুতরাং আমাদের উচিত সম্মান প্রদর্শনে রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর সুন্নত অনুসরণ করা, অহংকার থেকে দূরে থাকা এবং মানুষের হৃদয় জয়ের জন্য ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ করা। এমএইচ/ |