ধীরে হাঁটুন, যাতে আপনি হোঁচট না খান
প্রকাশ: ০১ জুলাই, ২০২৫, ০২:১০ দুপুর
নিউজ ডেস্ক

এম. হাসান

আপনি যদি কোনো লক্ষ্য পূরণের জন্য নিজেকে বেশি সময় দেন, তাহলে সেই লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। ১-২ বছরের কম সময়সীমার যেকোনো লক্ষ্যেই আপনি সম্ভবত যা অর্জন করতে পারবেন, তা অতিরঞ্জিতভাবে ধরে নিচ্ছেন। নতুন কোনো লক্ষ্য ধীরে-সুস্থে ও পরিকল্পিতভাবে হাতে নিলে, আপনি দীর্ঘস্থায়ী সফলতা অর্জনের সম্ভাবনা অনেক বেশি বাড়িয়ে তোলেন।

“আপনার যতটা সময় লাগবে বলে মনে করছেন, তার সবচেয়ে রক্ষণশীল অনুমান করুন। তারপর সেটাকে দ্বিগুণ করুন। সেটাই হবে আপনার সবচেয়ে বাস্তবসম্মত সময়সীমা।”— সফটওয়্যার উন্নয়নের একটি সূত্র যত বেশি সময় আপনি নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে রাখবেন, ততই সেটি অর্জনের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। ১-২ বছরের মধ্যে যেকোনো লক্ষ্য স্থির করলে আপনি সম্ভবত সেটির পরিমাণ বেশি করে ধরে ফেলছেন। নতুন লক্ষ্য নির্ধারণে যদি আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে ধীরগতিতে এগোন, তাহলে স্থায়ী সফলতা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

ইচ্ছাকৃত ধীরগতি :

ইচ্ছাকৃত ধীরগতি এখন আর একটি গুণ হিসেবে মানুষের কাছে আগের মতো আকর্ষণীয় নয়। যদিও বেশিরভাগ মানুষ ধীরে চলা কচ্ছপ ও দ্রুতগামী খরগোশের সেই পুরোনো গল্পটি মনে রাখে, আজকের সমাজে ধীরগতি অনেকটা পাপের মতো মনে করা হয়। আপনি যদি কোনো বইয়ের দোকানে হাঁটেন, দেখবেন সেখানে ভরে আছে এমন সব প্রতিশ্রুতিতে—যাতে কম সময়ে ওজন কমানো, অর্থ উপার্জন করা এবং সফল হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

• এক সপ্তাহে বিশ পাউন্ড ওজন কমান।
• এক বছরে আপনার আয় দ্বিগুণ করুন।
• যেকোনো খারাপ অভ্যাস এক মুহূর্তে বদলে ফেলুন।
এই ধরনের প্রতিশ্রুতি হয়তো আরও বেশি বই বিক্রি করতে সাহায্য করে, কিন্তু এরা ইচ্ছাকৃত ধীরগতির প্রকৃত শক্তিকে খাটো করে।

ভাবুন তো, যদি আপনি এক মাসে নয়, বরং এক বছরে বিশ পাউন্ড ওজন কমানোর লক্ষ্য ঠিক করেন, তাহলে কী হবে? প্রথমত, আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। এক মাসে বিশ পাউন্ড ওজন কমানোর জন্য যে পদক্ষেপগুলো নিতে হয়, তা অনেক বেশি কঠিন ও চরম। কিন্তু এক বছরে ধীরে ধীরে সেই একই ওজন কমানো তুলনামূলক সহজ। দ্বিতীয়ত, আপনি এমন খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারবেন যা আপনার লক্ষ্য অর্জনের পরেও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে। স্থায়ী সফলতা—যা অর্জনে সময় লাগলেও—অস্থায়ী সাফল্যের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান।

প্রায় সব লক্ষ্যই অর্জনযোগ্য, কিন্তু সেটা আপনি ঠিক করে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে না-ও হতে পারে। যদি আপনি লক্ষ্য ঠিক করেন ১০০০টি বই পড়ার। তাহলে সেটা ৩০ বছরের মধ্যে সহজেই সম্ভব, ৭ বছরে কঠিন, আর ৩ বছরে প্রায় অসম্ভব। মিলিয়নিয়ার হওয়ার লক্ষ্যও একইরকম—১ বছরে প্রায় অসম্ভব, ১০ বছরে কঠিন, কিন্তু ৪০ বছরে একেবারেই সম্ভব—যদি আপনি একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুসরণ করেন।

ধৈর্যকে অবমূল্যায়ন করা হয় :

ইচ্ছাকৃত ধীরগতির ভিত্তি হলো ধৈর্য। পর্যাপ্ত সময় দিলে প্রায় যেকোনো লক্ষ্যই অর্জনযোগ্য। তবে সময় যত দীর্ঘ হয়, সেই সময় জুড়ে নিজের আচরণকে ধারাবাহিক রাখতে তত বেশি ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। ধরুন, আপনি প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করার লক্ষ্য ঠিক করলেন, কিন্তু এক বছরেরও কম সময়ে সেটি ছেড়ে দিলেন—তাহলে সেই বিনিয়োগ থেকে আপনি তেমন কোনো অর্থবহ ফল পাবেন না।
ধৈর্য আপনাকে কেবল ফলাফলের দিকে নয়, লক্ষ্যের পথে যাত্রাকেই গুরুত্ব দিতে বাধ্য করে। যে ব্যক্তি ম্যারাথনের শুরুতেই দৌড়াতে শুরু করে, সে কেবল শেষ লাইনের কথা ভাবছে—নিজের পায়ের নিচের পথটা নয়। আপনি যখন মেনে নেন যে একটি নির্দিষ্ট গতি মেনে চলা দরকার, তখন আপনার মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হয় প্রতিটি ধাপে। একবার আপনি ধীরগতিকে মেনে নিলে, তখন আপনি শেষ লাইনের পথটাকেও উপভোগ করতে পারেন।

ধীরগতি-ই আসলে দ্রুত ফল দেয় :

এই কথাটি এক ধরনের বিরোধাভাস: ধীরগতিই আসলে বিকল্প পথগুলোর তুলনায় দ্রুত ফল দেয়। আপনি যখন সচেতনভাবে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সময় নেওয়ার চেষ্টা করেন, তখন আপনি পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেন। এটি অনেকটা বরফের ওপর দৌড়ানোর মতো—প্রতিটি পা সাবধানে, ধীরে ফেলতে হয়, যাতে হোঁচট না খান।
আপনি যখন প্রথম এই ওয়েবসাইট শুরু করবেন, তখন তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে ধীরে ধীরে একটি ন্যূনতম আয়ের লক্ষ্যে কাজ করার পরিকল্পনা করুন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, কেউ কেউ এমন প্রকল্প মাত্র ছয় মাসেই ছেড়ে দেয়! ভবিষ্যতে, যদিও আপনার দক্ষতা বাড়ে, আমি মনে করি যেকোনো অনলাইন ব্যবসাকে আর্থিকভাবে স্থিতিশীল হতে কয়েক বছর সময় দেওয়া উচিত।

যদি আপনি কোনো ফিটনেস-সংক্রান্ত লক্ষ্য ঠিক করেন, তাহলে আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে অগ্রগতিকে ধীর করে দিন। অনেকে যেমন উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে এক মাসেই ১০ পাউন্ড পেশি বাড়াতে চায়, আপনি বরং সেই লক্ষ্যকে ৩-৬ মাসে ভাগ করে নিন। সময় নিয়ে করলে আপনি কাজটি সঠিকভাবে করতে পারবেন, খাদ্য ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যেসব পরিবর্তন দরকার, সেগুলো দীর্ঘস্থায়ীভাবে স্থাপন করতে পারবেন। ধীরে পরিবর্তন আনলে, আপনি স্বাস্থ্যকরভাবে খেতে পারবেন—শরীরকে দ্রুত মানিয়ে নিতে বাধ্য করতে গিয়ে অস্বাস্থ্যকর ডায়েট গ্রহণ করার প্রয়োজন পড়েবে না।

আত্মউন্নয়ন শুরু হয় মজবুত ভিত থেকে :

নিজেকে উন্নত করা কঠিন। এটি অনেকের কল্পনার চেয়েও বেশি কঠিন। কোনো স্থায়ী পরিবর্তন আনা—even সেটা খুব ছোট হলেও—চায় সময়, প্রচেষ্টা, আর কিছু ভুল-ভ্রান্তির মধ্য দিয়ে যাওয়া। স্বল্পমেয়াদে সময়ের মধ্যে, সামান্য পরিবর্তনও প্রায় অলৌকিক বলেই মনে হয়।
আত্মউন্নয়নের ওপর ফোকাস করার শক্তি হলো, এর ফলাফল সুদে-আসলে ফেরত আসে। আপনি জীবনের এক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করলে, তা অন্য ক্ষেত্রেও উন্নতির সুযোগ তৈরি করে। আপনি যদি আরও সুস্থ হন, তাহলে আপনার কাজ করার শক্তি বাড়বে, যার ফলে আপনি আরও আয় করতে পারবেন, আর সেই অর্থ দিয়ে নিজেকে আরও শিক্ষিত করে তুলতে পারবেন। এই ধারাবাহিক উন্নতির চক্র মানে হলো—দীর্ঘমেয়াদে ছোট ছোট পরিবর্তন বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে। মানুষ সাধারণত একটি বড় ভুল করে—স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সময়সীমাকে গুলিয়ে ফেলে। যদি কেউ মনে করে আত্মউন্নয়ন ৬ মাসেও ঠিক একইভাবে কাজ করবে যেমনটা ৬ বছরে করে, তাহলে দুটি বড় ভুল করে ফেলে।

প্রথমত, আপনি ৬ মাসে আপনি যতটা realistically অর্জন করতে পারবেন, তা অতিরঞ্জিতভাবে ধরে নেন।
দ্বিতীয়ত, আপনি ৬ বছরে ইচ্ছাকৃত ধীরগতির মাধ্যমে যা অর্জন করা সম্ভব, সেই শক্তিকে খুবই কম করে দেখেন।
এই পার্থক্যের কারণেই, যদি আপনি ভাবেন আগামী এক মাসে আপনি আপনার আয় স্থায়ীভাবে ৩০% বাড়াতে পারবেন—তাহলে সেটা হবে মাত্রাতিরিক্ত আশাবাদ। কিন্তু আপনি যদি ভাবেন, আগামী ৬ বছরে আপনি আপনার আয় তিনগুণ করতে পারবেন—তাহলে সেটা সম্পূর্ণ বাস্তবসম্মত একটি ধারণা।

ধীরে চলুন, দৃঢ় হোন আপনি যদি ইচ্ছাকৃত ধীরগতি অবলম্বন না করেন, তাহলে সব হারানোর ঝুঁকি থাকে। আপনার আয় যদি সাময়িকভাবে ৫০% বেড়ে যায়, তার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান একটি স্থায়ী ৫% বৃদ্ধি। কারণ একটি মজবুত ভিতের ওপর দাঁড়ানো, যা ভবিষ্যতে আরও উন্নতির ভিত্তি হতে পারে। এটি আপনি মজবুত ভিত্তি গড়েছেন—যেটা ভবিষ্যতের জন্য কাজে আসবে। অন্যটি অস্থায়ী চাপ পড়লেই ভেঙে পড়বে। তাই মনে রাখবেন স্থায়ী বৃদ্ধিই সবচেয়ে মূল্যবান। তাই বলি দেখেশুনে ধর্য্য ধরে পরিকল্পনা মাফিক ধীর গতিতে চলুন। আখেরে আপনই সফল, আপনারই লাভ।