
| 	
        
			
							
			
			  ঐক্যের এই সময়ে খাদেম সুলায়মানদের এড়িয়ে চলুন!  
			
			
	
			
										প্রকাশ:
										৩০ জুন, ২০২৫,  ০৫:১৬ বিকাল
					 
			
			
			
			নিউজ ডেস্ক  | 
		
			
			
			
			
			 
	   
	      
 মাওলানা আবুল ফাতাহ কাসেমী বাংলাদেশের ইসলামপন্থা একটি নাজুক মুহূর্তে অবস্থান করছে। ঐক্যের এ সুযোগ আর তৈরি হয় কি না সন্দেহ। তাই সবাই সংযতচিত্ত না হলে সুযোগ হাতছাড়া হবে নিশ্চিত। ইসলামি রাজনীতির বড় প্লাটফর্ম ইসলামী আন্দোলন এদেশে পরীক্ষিত। দেওবন্দি ঘরানার সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম। তৃণমূল থেকে এ যাবত চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এ পর্যন্ত এসেছে তারা। পজিটিভ রাজনীতি করে যাচ্ছে সব সময়। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে তাদের দাবিকে অনেকে যেভাবে ছেলেখেলা ভাবছেন তা নিয়ে তাদের ভাবতে দিন। জুজুর ভয়ে, অন্যের মুখের দিকে না তাকিয়ে যুক্তি তুলে ধরুন। একটেবিলে বসার যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে তা ধরে রাখা উচিত। তাই এ মুহূর্তে খাদেম সুলায়মানদের কথায় কান না দেওয়া উচিত। খুলে বলি, ৪৭ সালের কথা। পুরো ভারতবর্ষ তখন দেশ ভাগের উত্তেজনায় কাঁপছে। ভয়, শঙ্কা ও স্বাধীনতার মিশ্র প্রতিক্রিয়া সবার মনে। তখন মাদরাজে মুসলিম লীগের পক্ষে উলামাদের বিশাল জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো। এক মাওলানা বক্তৃতায় উঠেই বলতে শুরু করলেন, ‘ইহুদিদের দালাল মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানীকে প্রত্যাখ্যান করুন, মাদরাজ থেকে কংগ্রেসের এই পা চাটা গোলামকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হোক, মহাত্মা গান্ধির দরবারি … এর ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে দৌড়ঝাঁপ আর সহ্য করা হবে না।’ এরপর বক্তা হজরত মাদানী রহ.কে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করলেন। সভার সভাপতি ছিলেন থানভী রহ.-এর অন্যতম খলিফা মাওলানা নুরুল হক মাদরাজি। তিনি দাঁড়িয়ে তার মাইক কেড়ে নিলেন এবং কড়া ভাষায় এর তীব্র প্রতিবাদ করলেন। ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে উন্মাদ তরুণ আলেমরা তখন নুরুল হক মাদরাজির ওপর ক্ষেপে গিয়ে স্লোগান দিতে থাকে ‘দালাল দালাল’ বলে। তারা বলতে থাকে- ‘কাফের মাদানীর দালালরা হুঁশিয়ার সাবধান! খেলাফত প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না! লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান! পাকিস্তান জিন্দাবাদ!!’ আরও কত কী। তখন মাওলানা নুরুল হক মাদরাজি মাইকে ঘোষণা দিলেন, ‘যে রাজনীতিতে আওলাদে রাসুল হজরত হুসাইন আহমদ মাদানীর বিরুদ্ধে কথা বলতে হয়, আমি সেই রাজনীতি থেকে ইস্তফা দিলাম।’ তিনি মনের দুঃখ ও ক্ষোভ নিয়ে থানভী রহ.-এর দরবারে রওয়ানা হলেন। গভীর রাত। থানভীর খানকার বারান্দায় এসে বসলেন। এ সময় বাইরে বেরিয়ে এলেন হজরত থানভী রহ.-এর দরবারের একজন খাদেম সুলায়মান। সুলায়মান মাওলানা নুরুল হক মাদরাজির খোঁজ-খবর নিলেন। নিজের রুমে নিয়ে গেলেন। মাওলানা নুরুল হক তাকে মাদরাজের সভায় মাওলানা মাদানীকে গালাগালি ও কটূক্তির কথা বললেন। শুনে খাদেম সুলায়মান বলতে লাগলো, ‘ওহ তু ভি মোনাফেক হু, মাদানী তো কংগেসি কা দালাল হু।’ সে হিন্দুদের পা চাটা গোলাম, ইহুদি কি চর হায় ইত্যাদি ইত্যাদি। সাথে কিছু আলেমের দলিলভিত্তিক কিছু ফতোয়া দেখালো। যাতে বলা হয়েছে কী কী কথার কারণে তার ওপর কুফরি ফতোয়া দেওয়া হয়েছে। মাওলানা নুরুল হক মাদরাজি যে কষ্টের আগুন বুকে নিয়ে এসেছিলেন, খাদেম সুলায়মানের মাদানীকে গালি দেওয়াতে তা আরও বেড়ে গেল। তিনি বললেন, ভাই মাদানী কি অনেক বড় আলেম নন? সুলায়মান উত্তর দিল, এলেম তো শয়তানেরও ছিল? মাদরাজি বললেন, তিনি কি দেওবন্দের বড় আলেম নন? তিনি কি শায়খুল হিন্দের খলিফা নন? তিনি কি একজন বুজুর্গ নন? সুলায়মান উত্তর দিল, এক সময় শয়তানও বড় বুজুর্গ ছিল? বললো হজরত! আপনি তার পক্ষে কথা বললে, আপনাকেও বাতিল বলবেন সকল আহলে হক উলামায়ে কেরাম। দালালের পক্ষে কথা বলবেন না হজরত। পাকিস্তানে খেলাফত প্রতিষ্ঠা নিয়ে হক বাতিলের লড়াই চলছে। রাগে ক্ষোভে তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন। সারা রাত মানসিক যন্ত্রণায় কাটানোর পর মসজিদে ফজর পড়লেন। ফজরের পর হজরত থানভী রহ. মসজিদে বয়ান করলেন। বয়ানে তিনি একটি ঘটনা বর্ণনা করলেন, ‘এক লোক আমার কাছে চিঠি লিখেছে খানকায়ে মাদানীতে বড় বড় দোষ ত্রুটিও মার্জনীয়। কিন্তু আপনার খানকাতে সামান্য দোষ ত্রুটি হলেই ধরে ফেলেন কেন? আমি উত্তরে বলেছি, মাদানীর খানকা সাগরের মতো, আর আমার খানকা কূপের (কোয়া) মতো। সাগরে হাতি পড়ে মারা গেলেও পানি নাপাক হয় না, কিন্তু কূপে বিড়াল পড়ে মারা গেলেও পানি নাপাক হয়ে যায়।’ থানভীর এই কথা শুনেই মাওলানা নুরুল হক মাদরাজি দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি বললেন, এসব আপনার মনের কথা না মুখের কথা। তার কথা শোনার পর বয়ান শেষ করে সবাইকে বিদায় দিলেন আর মাদরাজিকে মসজিদে বসালেন। থানভী বললেন, তুমি কি থানভীকে কখনো মুনাফিকি করতে দেখেছো? মাওলানা মাদরাজি ঘটনা খুলে বললেন। মাদরাজের সভায় মাদানীকে গালিগালাজ, তার প্রতিবাদ, ইস্তফার ঘোষণা। রাতে খানকায় খাদেম সুলায়মানের সব কথা খুলে বললেন। থানভী রহ. ডেকে খাদেম সুলায়মানকে আনলেন, নুরুল হক মাদরাজিকে সুলায়মান কী বলেছে তা পুনরায় তার সামনে বলতে বললেন। তিনি বললেন। হজরত আশরাফ আলী থানভী রহ. জিজ্ঞেস করলেন, ঘটনাকি সত্য, তুমি কি মাদানী সম্পর্কে এসব বলেছো। সুলায়মান বললেন, হ্যাঁ বলেছি। থানভী রহ. দুজন লোককে ডেকে এনে বললেন, ‘তাকে (সুলায়মান) কানে ধরে পুরো থানাভবনে এলাকা চক্কর দেওয়াবে। তারপর সোজা গাড়িতে তুলে দেবে।’ আর তার ওপর ৩টি ফরমান জারি করলেন- ১. কখনো আমাকে সালাম করবে না, ২. কখনো মাফ চাইতে সামনে আসবে না, ৩. কাউকে দিয়ে কোনো সুপারিশ করাবে না। আর শাগরিদদের থানভী রহ. বলে দিলেন, তোমরা মুসলিম লীগের সমর্থক সবাইকে জানিয়ে দাও, যে রাজনীতিতে মাওলানা মাদানীকে গালিগালাজ করা হবে, আক্রমণ করে কথা হবে, হজরত মাদানীর গিবত, তোহমত দেওয়া হবে আমি সে রাজনীতিতে নেই। এসব বন্ধ হলে তারা আমাকে পাশে পাবে। থানভী রহ. এর এ ঘোষণায় আলেমদের মধ্য মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে যে বিরোধ চলছিল তা সহসা থেমে গেল। লেখক: মুহাদ্দিস, লেখক ও অনুবাদক এমএইচ/  |