মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের চলে যাওয়ার ৯ বছর
প্রকাশ:
২৫ জুন, ২০২৫, ১১:২৯ দুপুর
নিউজ ডেস্ক |
![]()
মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ.। সাংবাদিক, সাহিত্যিক, অনুবাদক, ইসলামি চিন্তাবিদ, বহু গ্রন্থ প্রণেতা ও মাসিক মদীনা সম্পাদক। বাংলা ভাষায় সিরাত সাহিত্যের প্রাণপুরুষ। নানা পরিচয়ে তিনি ছিলেন পরিচিত। আজ থেকে ৯ বছর আগে আজকের এই দিনে (২৫ জুন) তিনি পাড়ি জমান পরবারের উদ্দেশে। চলে যাওয়ার এই বার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতি স্মরণ করছেন অনেকেই। মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ১৯৩৫ সালের ১৯ এপ্রিল কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার ছয়চির গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার আনসার নগরে। পিতা বিশিষ্ট সাধক পুরুষ, প্রবীণ শিক্ষাবিদ মৌলভী হাকিম আনছার উদ্দিন খান, মা মোছা. রাবেয়া খাতুন। পাঁচবাগ ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসার প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হন। মায়ের ইন্তেকালের পর তিনি নানীর তত্ত্বাবধানে থাকায় নানাবাড়ির নিকটবর্তী তারাকান্দি মাদরাসায় ১৯৪৭ সালে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানে মন বসাতে না পারায় তিনি দুই বছর পর আবার পাঁচবাগ মাদরাসায় ফিরে আসেন। পাঁচবাগ মাদরাসা থেকে ১৯৫১ সালে আলিম ও ১৯৫৩ সালে স্কলারশিপসহ ফাজিল পাস করেন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন। ১৯৫৫ সালে হাদিস বিষয়ে কামিল ও ১৯৫৬ সালে ফিকহ বিষয়ে কামিল ডিগ্রি লাভ করেন। আলিয়া ধারায় লেখাপড়া করলেও খান সাহেব কওমি ধারার সাথে বেশি সম্পর্ক রেখে চলতেন। মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ছাত্রজীবনেই সাংবাদিকতা ও সহিত্যচর্চার দিকে ঝুঁকে পড়েন। তিনি ১৯৬০ সালে ‘মাসিক দিশারী’, ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ‘সাপ্তাহিক নয়া জামানা’ সম্পাদনা করেন। ১৯৬১ সাল থেকে আমৃত্যু ‘মাসিক মদীনা’ সম্পাদনা করেছেন। এক সময় তাঁর সম্পাদিত ‘আজ’ সাহিত্য মহলে সাড়া জাগায়। মাওলানা মুহিউদ্দীন খান ১৯৮৮ সালে সৌদিভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘রাবেতায়ে আলমে ইসলামী’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন। এর মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক মহলেও পরিচিত হয়ে ওঠেন। দেশের বাইরেও বাংলাভাষীরা তার গুণমুগ্ধ পাঠক। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরাসহ প্রবাসে মরহুম খান নন্দিত লেখকের মর্যাদা পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন মুতামার আল আলম আল ইসলামীর বাংলাদেশ শাখার প্রেসিডেন্ট, জাতীয় সীরাত কমিটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, নাস্তিক-মুরতাদ প্রতিরোধ আন্দোলন ইসলামী মোর্চার সভাপতি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশর সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের প্রধান। তিনি প্রায় ১০৫টি গ্রন্থ অনুবাদ ও রচনা করেছেন। পবিত্র কুরআনকে বাংলাভাষীদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলতে তাঁর ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। তাঁর সম্পাদিত ‘মাসিক মদীনা’র প্রশ্নোত্তর সংকলন ‘সমকালীন জিজ্ঞাসার জবাব’ বহু খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। মাসিক মদীনা লাখো মানুষকে বছরের পর বছর ইসলামি সাহিত্যের মৌলিক ধারার সাথে সম্পৃক্ত রেখেছে। মাসিক মদীনা এবং মাওলানা মুহিউদ্দীন খান যেন অভিন্ন এক পরিচিতি। আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ শফী (রহ.) বিরচিত ৮ খণ্ডের কালজয়ী তাফসির গ্রন্থ ‘মাআরিফুল কুরআন’ তিনি উর্দু থেকে বাংলায় ভাষান্তর করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে এটি প্রকাশিত হয়। ১৪১৩ হিজরিতে মদিনাস্থ বাদশাহ ফাহাদ কুরআন মুদ্রণ প্রকল্পের উদ্যোগে ‘মাআরিফুল কুরআন’ সংক্ষিপ্তাকারে ১ খণ্ডে বাংলায় ছেপে সারা দুনিয়ায় বাংলাভাষীর মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। মহান এই কর্মবীর ২০১৬ সালের ২৫ জুন রোজ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় রাজধানীর কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। পরদিন বাদ জোহর বায়তুল মোকাররমে জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাঁকে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের আনসারনগরে নিজ প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা প্রাঙ্গণে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। এনএইচ/ |